Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

গতি নেই প্রণোদনার ছয় প্যাকেজে

জানুয়ারি ৯, ২০২২, ০৬:৩৫ পিএম


গতি নেই প্রণোদনার ছয় প্যাকেজে

করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে দ্বিতীয় ধাপে ঘোষিত প্রণোদনার ঋণ ধীরগতিতে বিতরণ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম ঋণ বিতরণ হয়েছে গত ছয় মাসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতাধীন ছয় প্যাকেজের কোনোটিই লক্ষ্যমাত্রার সমান বা কাছাকাছি ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদে ছয়টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গ্রাহকের মাঝে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে গত প্রায় ছয় মাসে (২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) বিতরণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১.৮৩ শতাংশ।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ের ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের বাস্তবায়ন অনেক বেশি ছিল; কারণ সে সময়ে কোভিডের প্রভাব বেশি থাকায় অনেক গ্রাহক/প্রতিষ্ঠানের জরুরি ঋণ প্রয়োজন ছিল। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রণোদনা ঋণের গতি খুবই কম; কারণ গত আগস্ট থেকে কোভিডের প্রভাব কমতে শুরু করেছে। এর ফলে অনেক ছোট উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রণোদনার ঋণ চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাসে মাত্র ৮ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০৬ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ সুবিধা গ্রহণ করেছে— যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৭.১৪ শতাংশ।  গত অর্থবছরে এ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল।

এ প্যাকেজের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয় ৪১ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা চার হাজার ২০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার ৪.৫০ শতাংশ। সরকার হতে সুদ ভর্তুকি ৪.৫০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

কিন্তু এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৪২৪৭ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২১.২৩ শতাংশ। এর মাধ্য সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৪১ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। তবে এ প্যাকেজের আওতায় ‘কটেজ, মাইক্রো, স্মল (সিএমএস)’ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে দুই হাজার কোটি টাকা স্কিম চালু করে। এ স্কিমের আওতায় গত ছয় মাসে মাত্র ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সুবিধা দেয়া হয়। 

এদিকে এ স্কিমের অবস্থা খুবই ধীরগতি থাকায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সব ব্যাংকের প্রধানকে নিয়ে ‘ব্যাংকার্স সভায়’ এ ঋণ বিতরণের জন্য গুরুত্বারোপ করেন। ওই সভার পরদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার ইস্যু করে। 

গত ৩০ ডিসেম্বর ওই সার্কুলারে বলা হয়, উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছে। এখন উদ্যোক্তাদের সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের ঘোষণা করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। 

এ প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৭ প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ। এদিকে প্রথম পর্যায়ে প্রণোদনা ঋণ এক খাতের জন্য নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের প্রণোদনা ঋণের টাকা নিয়ে আগের ঋণের সুদের সমন্বয় করেছে— এমন অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রণোদনা ঋণের সুদ ভর্তুকি বাবদ অর্থ ধীরগতিতে ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কারণে প্রণোদনা ঋণ বিতরণে প্রভাব পড়েছে। 

তবে ব্যাংকাররা বলছেন, প্রণোদনা ঋণের চাহিদা এখন অনেকটা কম। তবে যে প্রতিষ্ঠান/গ্রাহকরা প্রণোদনা ঋণের জন্য আবেদন করছে, তাও ছাড়করণ কম হচ্ছে। কারণ, আগে যে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, সে তুলনায় ঋণের ভর্তুকি বাবদ সুদ ছাড়করণ কম করেছে মন্ত্রণালয়। এদিকে নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে ছয় মাসে ২৩৩ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭.৭৭ শতাংশ। পর্যটন খাতের হোটেল/মোটেল/ থিম পার্কের কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির জন্য এক হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো স্থিতি ও চাহিদার ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণ করেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘এসএমই খাতে গতবার ৮২-৮৩ শতাংশ হয়েছিল। এবার যাতে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ নিশ্চিত হয়, এজন্য এসএমই ডিপার্টমেন্ট নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে।’ 

তিনি বলেন, খণ্ডিত সময়ের হিসাব ধরে মন্তব্য করা কঠিন। তবে প্রত্যেকটি ঋণ স্কিমই সময়ের সাথে সম্পর্কিত। যেমন কৃষিঋণ। সামনে বড় মৌসুম আসছে, তখন হয়তো বাড়বে। এভাবে কৃষকের ফসল উৎপাদনের চাহিদা মোতাবেক ঋণের আবেদন বা বিতরণ হয়ে থাকে। 

এছাড়া পর্যটন খাতে ঋণের আবেদন খুব একটা না থাকায় বিতরণে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ হবে বলে আশা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র। কোভিড-১৯-এর ক্ষতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত সরকার মোট ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে এসব প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। 

পরবর্তীতে ‘রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল’ বা ইডিএফে আরও ৫০ কোটি ডলার যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ইতোমধ্যে দুটি প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ৮টি চলতি অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।