Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা

মাহমুদুল হাসান 

জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৭:৪০ পিএম


জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্রিটেন ধর্মযাজক ও অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাসের বিখ্যাত তত্ত্বের মতো জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দুই থেকে চার, চার থেকে আট, যেন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বাড়ছে করোনা। গত দুই সপ্তাহের ওপিডেমিওলজিক্যাল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। ৩ শতাংশ থেকে করোনা সংক্রমণ এখন ২০ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। 

গত ৩ থেকে ৯ জানুয়ারি প্রথম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের সঙ্গে গেল ১০ থেকে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এক সপ্তাহে শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ২৩২ শতাংশ। সংক্রমণের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছে জনস্বাস্থ্যবিদরা। 

তথ্যমতে, গত সপ্তাহে ২৪ হাজার ১১ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। এর আগের সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাত হাজার ২৩৪ জন। এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৩০ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যুও বেড়েছে গেল সপ্তাহে। গত সপ্তাহে ৪২ জনের মৃত্যু হয়। এর আগের সপ্তাহে মাত্র ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 

এদিকে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মৃত্যুহার সবচেয়ে কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে মৃত ৪২ জনের মধ্যে ৩১ জন ভ্যাকসিন নেননি। এক সপ্তাহে মৃতের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ভ্যাকসিন নেননি। এছাড়াও সম্প্রতি যারা করোনা সংক্রমিত হয়েছে মারা যাচ্ছেন তারা একাধিক জটিল রোগাক্রান্ত বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

গত সপ্তাহে মৃত ৪২ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশ ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ ও ৫৬ শতাংশ ডায়াবেটিস জনিত রোগাক্রান্ত ছিলেন। পরিস্থিতি অবনতির পথে যাওয়ায় গতকাল বিকেলে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। 

তিনি বলেন, দেশে সমপ্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের ৮০ শতাংশই টিকা নেননি। আমাদের টিকার কোনো অভাব নেই। আপনারা টিকা নিন, সুস্থ থাকুন। ঢাকা শহরে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে শনাক্ত বাড়ছে। তবে অন্য শহর বা গ্রামে এ ধরনের শনাক্ত এখনো অনেক কম।

এদিকে গত বছর দেশে করোনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়ালে জারি করা হয়েছিল লকডাউন। তবে এখনো দেশে লকডাউন জারি করার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে, আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। এখন পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুধু করোনা শনাক্তের হার বা সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। জীবিকা ও অর্থনীতির বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হয়। 

তিনি বলেন, আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমন পরিস্থিতি আমরা তৈরি করব না যাতে লকডাউন দিতেই হয়। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে গতকাল আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৮ হাজার ১৫৪ জন। এসময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৬৭৬ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪২৭ জন। 

এ নিয়ে দেশে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ জন রোগী। প্রাণ হারানো ১০ জনের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। তাদের মধ্যে ঢাকায় সাতজন, চট্টগ্রামে দুইজন ও বরিশালে একজন মারা গেছে। এ পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজার ১৫৪ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৯৯৪ জন (৬৩ দশমিক ৯৪ ভাগ) ও নারী ১০ হাজার ১৫০ জন (৩৬ দশমিক শূন্য ছয় ভাগ)। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রাশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে ৮৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩২ হাজার ৪৩১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫টি। একদিনে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ ভাগ। সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৬২ ভাগ আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ ভাগ।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজিক্যাল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পূর্বের সপ্তাহের চেয়ে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের সপ্তাহে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৩০টি। শনাক্তের হার বেড়েছে ২৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে ২৪ হাজার ১১ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। 

এর আগের সপ্তাহে সাত হাজার ২৩৪ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছিল। মৃত্যু বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ছিলো ২৫ জনে। ভ্যাকসিন না নেয়াদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। গত সপ্তাহে মৃত ৪২ জনের মধ্যে ৩১ জন ভ্যাকসিন নেননি। বাকি ১১ জন টিকা নিয়েও মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। এক সপ্তাহে মৃতের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ভ্যাকসিন নেননি। 

বাকি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ ভ্যাকসিন নিয়েও মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। একজন রোগীর যদি আগে থেকেই অন্য কোনো রোগ কো-মরবিডিটি বা সহরোগ থাকে আর ওই ব্যক্তি যদি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় তাহলে শরীরের স্ট্রেস রেসপন্স চালু হয়। কো-মরবিডিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে মৃত ৪২ জনের মধ্যে ৩৩ জনই অন্যান্য রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। যা মোট মৃতের ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। 

বছরের দ্বিতীয় এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের তথ্যে দেখা গেছে, এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের দেহে ডায়াবেটিস, ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী কিডনি জনিত রোগাক্রান্ত, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ হূদরোগ আক্রান্ত। ৬ দশমিক ১ শতাংশ মৃত ব্যক্তি ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রোলিভার জনিত ও বক্ষব্যধিতে ভুগতেন। এবং ৩ শতাংশ রোগী স্ট্রোক, থাইরয়েড, রিউম্যাটলজিকাল বা বাতজনিত রোগে ভুগতেন।