Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

পুরান ঢাকায় যাবেন যে দশ খাবার খাবেন

 রাব্বি হাসান

মে ৩১, ২০২১, ০৭:৫০ এএম


পুরান ঢাকায় যাবেন যে দশ খাবার খাবেন

পুরান ঢাকায় এসেছেন অথচ বিখ্যাত এ দশ খাবার খেয়ে যাননি এমন মানুষ খুব কমই দেখা মিলবে। শুধু দেশের মানুষই নয় পুরান ঢাকার খাবারের খেতেই বিদেশ থেকেও প্রতিবছর হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় দেখা যায়। খাবারের সাথে যেন পুরান ঢাকার রয়েছে হৃদ্যতার সম্পর্ক।

জেনে নিন পুরান ঢাকার বিখ্যাত দশ খাবারের খোঁজ।  

বিরিয়ানি
পুরান ঢাকার অলিগলির দোকানে চোখে পড়বে লাল চাদর মোড়ানো হাড়ি। যার মধ্যে মিলবে জিভে জল আনা কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি বা চিকেন বিরিয়ানি। মুঘল আমল থেকেই দেশ বিদেশের সুনাম কুড়িয়েছে পুরান ঢাকার ঘি ও সরিষার তেলে তৈরি এই বিরিয়ানি। পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের হাজীর বিরিয়ানি, বেচারাম দেউরীর ‘নান্না বিরিয়ানি’ এর মোরগ-পোলাও, নারিন্দার ঝুনুর মোরগ পোলাও, নাজিরা বাজারের হানিফের বিরিয়ানি বেশ বিখ্যাত।

বাকরখানি
টিকাটুলি পার হতেই মোড়ে মোড়ে চোখে পড়বে বাকরখানির দোকান। ময়দা দিয়ে তৈরি এই খাবার মুঘল আমলে ঢাকার লালবাগ কেল্লার পাশে তৈরি হতো। বাকরখানি মূলত মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের রুটি। রুটিটার প্রস্তুত প্রণালী ও ভাজার উপায় অন্যান্য রুটি থেকে একদমই আলাদা। পুরান ঢাকার মানুষেরা সকালের নাস্তায় চায়ে ভিজিয়ে এই খাবারটি খেতে বেশ পছন্দ করেন। শুধু পুরান ঢাকাতেই না, এর জনপ্রিয়তা আরও বিস্তৃত। এই জনপ্রিয়তাতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন বাকরখানি তৈরি হলেও পুরান ঢাকার বাকরখানির বিশেষত্বই আলাদা। পুরান ঢাকার জিঞ্জিরার বরিশুর, লালবাগ, নাজিমুদ্দিন রোড, চানখাঁরপুল, কসাইটুলি, নাজিরাবাজার, নবাববাড়ি, নবরায় লেন ও সূত্রাপুরে বাকরখানির বেশ কিছু দোকান ও কারখানা আছে।

বিউটি লাচ্ছি
রায়সাহেব বাজার এলাকায় ১৯২২ সাল থেকে বিক্রি হচ্ছে বিউটি লাচ্ছি। সে হিসেবে এর বয়স এখন প্রায় ১০০ বছর। যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে অবস্থিত বিউটি লাচ্ছির জনপ্রিয়তা শুধু পুরান ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, সমগ্র ঢাকাবাসীর পছন্দের জায়গা এটা। এখানে পাওয়া যায় ১৫ টাকার শরবত, ৩০ টাকায় লাচ্ছি ও ৪০ টাকায় বিট লবণ দেয়া স্পেশাল এক লাচ্ছি। পুরান ঢাকার রায়সাহেব মোড় থেকে জনসন রোড ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে কয়েক পা এগুতেই রাস্তার পশ্চিম পাশেই এর দেখা মিলবে। গুলিস্তান থেকে সরাসরি রিকশাযোগেও যেতে পারবেন।

কাবাব
কাবাব পুরনো ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও গ্রিল কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেশ জনপ্রিয়। পুরনো খাবার কাবারের নানারকম শাখাপ্রশাখা বা ধরণ আছে কিন্তু। যেমনঃ শিক কাবাব, বটি কাবাব, খিড়ি কাবাব, সুতি কাবাব, শর্মা কাবাব, কবুতরের কাবাব, ডোনা কাবাব, বিফ জালি, শামি কাবাব, লাহরি কাবাব, রেশমি আরও কতো কি!

পুরনো ঢাকায় রোজার সময় ৩৫ থেকে ৪০ পদের কাবাবের দেখা মেলে। আজকাল মাছের কাবাবও প্রচলন শুরু হয়েছে। ঢাকার চকবাজার, লালবাগ, জনসন রোড ও নবাবপুরে পাবেন আপনি অত্যন্ত মুখরোচক এই কাবাবগুলো। গরু, মুরগি, হাস, কোয়েল, খিরি, গুর্দা এসব চাপ বেশ জনপ্রিয়। খিরি মানে হলো গাই গরুর ওলানের মাংস দিয়ে বানানো চাপ আর গুর্দা মানে হলো গরুর হৃৎপিণ্ড। ঢাকার বিখ্যাত সব চাপ পাওয়া যায় তিনশফিটের অদূরে ভোলানাথপুর তথা পূর্বাচল এক নং সেক্টরে।

খিচুড়ি ও তেহারি
পোলাওতে ছোট ছোট মাংসের টুকরা ছড়িয়ে তেহারি নামের এই উপাদেয় খাবার তৈরি হয়। চকবাজার, নীলক্ষেত, বকশীবাজার, বেরলি রোড, মগবাজার, মালিবাগ এসব এলাকা ছাড়াও ঢাকা শহরের সব জায়গায় এর দেখা মেলে। ভুনা খিচুড়িও কিছুটা তেহারির মতোই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোজন রসিকরা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি এসব খাবার খেতে পছন্দ করেন। আজকাল মুরগির মাংসের খিচুড়ি কিংবা ডিম তেহারিও পাওয়া যায়।

মুড়ি ভর্তা
'ঝাল মুড়ি' বা 'মুড়ি মাখা' শব্দটি আমাদের জন্য বেশি পরিচিত হলেও পুরান ঢাকায় এর নামে 'মুড়ি ভর্তা'। তবে নামের পাশাপাশি ভিন্নতা আছে স্বাদেও। বিভিন্ন শাহী মসলার মিশ্রণে মুড়ির স্বাদটা জিভে লেগে থাকবে বহু সময়। বিশেষ বিশেষ মসলার মিশ্রণে পরিবেশন করা হয় মুড়ি, যার স্বাদ আপনি পুরান ঢাকা ছাড়া পাবেন না আর কোথাও। পুরান ঢাকার জিঞ্জিরা, লালবাগ কেল্লার মোড়, নাজিরা বাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন অলিতে গলিতেও এর দেখা মিলবে।

বুদ্ধুর পুরি  
পুরান ঢাকার সবচেয়ে নামকরা এবং পুরনো পুরির দোকানের নাম বুদ্ধুর পুরি। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ দোকানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজারের উপরে পুরি বানানো হয়। এদের স্পেশাল আইটেম ডিম পুরি।

লাচ্ছি, লাবাং, মাঠা, বোরহানি
ভারী খাবারের পর একটু ঠাণ্ডা লাচ্ছি, লাবাং, মাঠা, বোরহানি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে বেশ আগে থেকেই। মিষ্টিদই, গরম মশলা, চিনি, লবণ এবং মাঠা দিয়ে তৈরি করা লাবাং আর বাকি পানীয় এর দেখা মিলবে লালবাগ, চকবাজার ও নাজিমুদ্দিন রোডে। তবে আজকাল প্লাস্টিক বোতলে বাজারজাত করা হয় বলে রাজধানীর সব হোটেলেই এসব পানীয়র স্বাদ মেলে। 

তান্দুরি চা
কোলকাতার তান্দুরি চা বাংলাদেশেরে পুরান ঢাকায় এখন বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। পুরান ঢাকার লক্ষ্ণীবাজারের দিকে গেলেই চোখে পড়বে বিখ্যাত এ তান্দুরি চায়ের টং দোকান। 

সোনা মিয়ার দই ও মিষ্টি
গেণ্ডারিয়ার সোনা মিয়ার দই গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আজও সুনাম বজায় রেখেছে। সেই পুরনো গন্ধ স্বাদ এখনও ক্রেতারা পাচ্ছে। সোনা মিয়ার দই মিষ্টি এক নামে পুরনো ঢাকার সবাই চেনেন। গেণ্ডারিয়া ৩৩/এ, রজনী চৌধুরী রোডে দোকানটি অবস্থিত। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গেণ্ডারিয়া বড় মসজিদ চৌরাস্তায় এসে যেকোনো স্থানীয় লোককে জিজ্ঞাসা করলেই এই মিষ্টির দোকান দেখিয়ে দেবে। 

চা পুরো ঢাকাতেই চা নামের বিশেষ এই পানীয়ের দোকানের ছড়াছড়ি। বিশেষ চা পান করতে চাইলে গুলশান ১-এর পোস্ট অফিসের পাশে নাসিরের দোকানে যাওয়া যেতে পারে। তাদের চা তৈরির উপাদান একদম গোপন। এছাড়া খিলগাঁওয়ের বাগিচা মসজিদের পাশে আছে কাজীর দোকান, টক ও মিষ্টির মিশেলে জলপাই রঙা চা মেলে সেখানে।

আমারসংবাদ/এমএস