Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মিয়ানমারের সেই ‘বৌদ্ধ বিন লাদেনে’র আত্মসমর্পণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ৪, ২০২০, ০৯:৪৭ এএম


মিয়ানমারের সেই ‘বৌদ্ধ বিন লাদেনে’র আত্মসমর্পণ

দেড় বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে মিয়ানমারের কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথু সোমবার (২ নভেম্বর) পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

ইয়াঙ্গুনের আঞ্চলিক সরকারের ধর্মীয় মন্ত্রণালয়ের পরিচালক সেইন মউ তার আত্মসমর্পনের বিষয়টি এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন।

১৮ মাস পর সোমবার (২ নভেম্বর) অনলাইনে একটি ভিডিওতে তাকে মাস্ক পরা অবস্থায় ইয়াঙ্গুনের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এ সময় তিনি বলেন, সরকার আমাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে আসতে বাধ্য করেছে।

তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রেসিকে ‘শয়তান’ হিসেবে উল্লেখ করে মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, আমি পুলিশের কাছে যাবো এবং তারা যা চায় সেটা করবো।

আশিনের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো ও রাষ্ট্রদ্রোহের যে অভিযোগ সেটা প্রমাণিত হলে তার তিন বছরের জেল হতে পারে। দেশটির জাতীয় নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তার এই পদক্ষেপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন।

৫২ বছর বয়সী এই ভিক্ষু দীর্ঘদিন ধরে তার জাতীয়তাবাদী ও ইসলামবিরোধী, বিশেষত রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্তৃপক্ষ তাকে এক বছরের জন্য প্রচার কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।

বৌদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ জাগানোর জন্য টাইম ম্যাগাজিন আশিন উইরাথুকে ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ নামে অভিহিত করে। গত বছর মে মাসে পুলিশ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

আশিন উইরাথু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি মুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা ও দোকানপাট বয়কট করার জন্যে প্রচারণা শুরু করেন। এরকম একটি প্রচারণা শুরু করার পর ২০০৩ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে তার ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুরো সাজা খাটতে হয়নি। সাত বছর পর সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তিনি ২০১০ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে এক পর্যায়ে আশিন উইরাথু সোশাল মিডিয়াও ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন যে মিয়ানমারে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকার কারণে বৌদ্ধ সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়েছে।

এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাকে নিষিদ্ধ করে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করেই তার এসব বিদ্বেষমূলক পোস্ট।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনেও উইরাথুকে চিত্রিত করা হয় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে।

রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হওয়ার জন্যে আশ্বিন উইরাথুর সমর্থকদের ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়। এর পরই সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

২০১৩ সালের জুলাই মাসে ম্যাগাজিনটির একটি সংখ্যার প্রচ্ছদে তার একটি ছবি ছাপিয়ে তাতে লেখা হয়: এক বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ।

আশিন উইরাথুর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয় ২০১৫ সালে। ওই ডকুমেন্টারিতে তাকে বর্ণনা করা হয় একজন বৌদ্ধ বিন লাদেন হিসেবে।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দুঃখ দুর্দশা অনুসন্ধান করে দেখতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লী-কে ২০১৫ সালে যখন সেদেশে পাঠানো হয়েছিল উইরাথু তখন তাকে একজন ‘দুশ্চরিত্রা’ ও ‘বেশ্যা’ হিসেবে গাল দিয়েছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই