সুন্দরবনে তেল দূষণে ভারতের সতর্কতা জারি

সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনায় ভারত উদ্বেগ প্রকাশের পর এবার সতর্কতা জারি করেছেন। ভারতের সুন্দরবন প্রাণিমণ্ডল সংরক্ষণ বিভাগের উপপ্রধান প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘পশ্চিম বঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় পূর্বসতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় উপকূলরক্ষী ও সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন নদীগুলোতে নৌকাযোগে টহল দেওয়া হচ্ছে।’

 
গত সপ্তাহে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। সে কারণে উদ্বেগে রয়েছে ভারতেও।

 
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে ওই এলাকার প্রাণিজগতের ওপর বিশেষ করে বিপন্ন ডলফিন প্রজাতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

 
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সব ধরনের পূর্বসতর্কতা জারি করেছি। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত।’

বৃহস্পতিবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ এ বনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী যানসহ সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি করে জাতিসংঘ। এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়টিও তুলে ধরে ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়। যদিও এ দুর্ঘটনার পর শ্যালা নদীতে বাণিজ্যিক নৌচলাচল ইতিমধ্যে বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।

 
পানি থেকে তেল অপসারণে চার জাহাজ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী। তেলের ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট করতে জাহাজগুলো রাসায়নিক পদার্থ ছিটাবে। যদিও পরিবেশবিদদের বাধার মুখে ওই কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

সুন্দরবনের প্রধান বন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘এই দুর্যোগটি সুন্দরবনের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। কীভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করব তা আমরা জানি না।’  

 ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ‘সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েল ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের ওই বনের প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে তেল পানি থেকে তুলছেন স্থানীয় জেলে ও গ্রামবাসী।

 
স্থানীয়রা বলছেন, ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রমের কাছে ওই ট্যাংকার দুর্ঘটনা হয়। সেখানে ডলফিন, কুমির ও অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় জলজ প্রাণির বিচরণ দেখা যাচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গের বনপ্রধান উজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্য রয়টার্সকে জানান, সুন্দরবনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তেল দূষণের ফলে তাদের ওপর কোনো  নেতিবাচক প্রভাব পড়ার চিহ্ন এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আগামীতে এর প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। তা মোকাবিলা করতে হবে।’

 

তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।