Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

পাকিস্তানে গৃহপরিচারিকাদের ট্রেড ইউনিয়ন

এপ্রিল ১৫, ২০১৫, ০৬:৫৬ এএম


পাকিস্তানে গৃহপরিচারিকাদের ট্রেড ইউনিয়ন

 পাকিস্তানে গৃহভৃত্য বা পরিচারিকারা মিলে সে দেশে তাদের প্রথম ট্র্ডে ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন। রাজধানী ইসলামাবাদে তাদের এই শ্রমিক সংগঠনে ইতিমধ্যেই সদস্য হয়েছেন প্রায় ২২৫জ ন, সংখ্যাটা আরো বাড়ছে।

পাকিস্তানের প্রায় প্রতিটি মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারেই এক বা একাধিক গৃহপরিচারিকা রাখাটা রেওয়াজ। বাসন মাজা, ঘর ঝাড়ামোছা থেকে নানা ফাইফরমাশ তাদের রোজ খাটতে হয় – কিন্তু প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই মালিকের সঙ্গে তাদের কাজের কোনো চুক্তি বা কন্ট্রাক্ট থাকে না।

এর ফলে তাদের নিয়মিতই নানা শোষণ ও অবিচারের শিকার হতে হয়। মুনাজাই ইশহাক নামে এক গৃহপরিচারিকা বলছিলেন, মালিক তাকে মিথ্যে চুরির অপবাদ দিয়ে থানায় দিয়েছে– ইচ্ছে করে মাইনে আটকে রেখেছে, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।

কিন্তু পাকিস্তানে আনুমানিক প্রায় ৮৫ লাখ গৃহপরিচারিকার ভাগ্য এবার কিছুটা হলেও বদলাতে পারে – কারণ জাতিসংঘের সমর্থনে সে দেশে অবশেষে এই অসংগঠিত খাতের জন্য গড়ে উঠেছে একটি ট্রেড ইউনিয়ন।মুনাজাই ইশহাক নিজেও তার সদস্য হয়েছেন এবং আশা করছেন তাদের জীবনে এবার বোধহয় একটা পরিবর্তন আসবে।

বাড়ির মালিকরা যে পরিচারিকা বা ভৃত্যদের সঙ্গে ঠিকমতো ব্যবহার পর্যন্ত করেন না, বেশি খাটিয়ে নিয়ে পয়সা পর্যন্ত দেন না – ইউনিয়ন চালু হলে সেগুলো অন্তত বন্ধ হবে বলে মুনাজাইয়ের আশা।

তা ছাড়া তাদের ছেলেমেয়েরাও হয়তো পড়াশুনোর সুযোগ পাবে, যেটা এই পরিচারিকাদের অনেকেই সারা জীবনে কখনও পাননি।
নতুন এই ইউনিয়ন বাড়ির মালিক ও গৃহ-পরিচারিকাদের মধ্যে একটি লিখিত কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি চালু করার ওপর জোর দিচ্ছে, যেটা দুপক্ষই স্বেচ্ছায় সই করবেন।

পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারও এই ইউনিয়ন গড়ার ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পাঞ্জাব শ্রম মন্ত্রণালয়ের ইশরাত আলি বিবিসিকে বলছিলেন, গৃহপরিচারিকাদের অধিকার রক্ষায় আগামী দুবছরের মধ্যেই আইন তৈরি হয়ে যাবে।
সেই নতুন আইনে গৃহভৃত্য বা পরিচারিকাদের উপযুক্ত নথিভুক্তকরণ (রেজিস্ট্রেশন) এবং যাচাই-বাছাইয়েরও (ভেরিফিকেশন) ব্যবস্থা করা হবে বলে মি আলি জানান।

তবে পাকিস্তানের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় আছে – এবং দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন পাকিস্তান ওয়ার্কার্স ফেডারেশন গৃহভৃত্যদের ভবিষ্যৎ দ্রুত পাল্টানোর ব্যাপারে বেশ সন্দিহান।

ফেডারেশনের নেতা চৌধুরী নাসিম ইকবাল মনে করেন, ‘‘যেহেতু আইন তৈরি হবে পার্লামেন্টে এবং তার সদস্যরা সবাই হয় সামন্ততান্ত্রিক প্রভু বা শিল্পপতি – তাই তারা ট্রেড ইউনিয়নের প্রস্তাবে বাধা দেবেন বলেই মনে হয়। কারণ এতে সরাসরি তাদের স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত হবে।’’

ইসলামাবাদ থেকে বিবিসির নওশিন আব্বাস বলছেন, গৃহপরিচারিকার কাজ পাকিস্তানের বহু অসহায় দরিদ্র নারীকে রুটিরুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছে ঠিকই – কিন্তু তাদের অনেকেই এখন মনে করছেন এর জন্য খুব চড়া মূল্য তাদের চোকাতে হয়েছে।

আর সে কারণেই তাদের অনেকে এখন চাকরি হারানোর ঝুঁকি নিয়েও নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি।