Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

মোদির ঢাকা সফরে সঙ্গে থাকছেন মমতাও

মে ১১, ২০১৫, ০১:৪৮ পিএম


মোদির ঢাকা সফরে সঙ্গে থাকছেন মমতাও

 নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলোদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত করতে চেয়েছেন। তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থল সীমান্ত বিরোধ সেই সম্পর্কের উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেন্দ্রে বিজেপি হলেও সমস্যা দু’টি সমাধানের চাবি অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতে। তাই নরেন্দ্র মোদি মমতাকে বাগে আনার চেষ্টা করে আসছিলেন শুরু থেকেই। সারদা ও বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা তাকে সেই সুযোগ করে দেয়।

এর আগে নরেন্দ্র মোদি দফায় দফায় তার বিশেষ লোকজনকে পাঠিছেন মমতার কাছে। অবশেষে ফলও মিলেছে। গত সপ্তাহে লোকসভায় পাস হওয়া স্থল সীমান্ত বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলের এমপিরা। বিলটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। শুধু বিল পাসেই চলবে না, চুক্তি স্বাক্ষরে মমতার সম্মতি ও উপস্থিতি প্রয়োজন। আর তাই এবার মমতাকে রাজি করাতে পশ্চিমবঙ্গে দুই দিনের সফরে যান নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সফরের প্রথম দিন নজরুল মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মমতাকে বাংলাদেশ সফরে তার সঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদি। মমতা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই যাবো।’

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ ও ৭ জুন নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসবেন। ঢাকা ও নয়াদিল্লি আলোচনার ভিত্তিতেই ওই সফরসূচি চূড়ান্ত করেছে। সফরে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তবে আরেক সমস্যা তিস্তার পানি বণ্টনে চুক্তি হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, শুষ্ক মৌসুমে পানি বণ্টন নিয়ে এখনো দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েই গেছে। বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল নিয়েও দু’টি চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আশার কথা হলো নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির ঢাকা আসা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মমতা রাজি থাকলে তিস্তা চুক্তি নিয়েও সুখবর মিলতে পারে। এর আগে কংগ্রেস সরকারের সময়েও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু মমতা বানার্জি তখন বেঁকে বসায় সেই চুক্তি আর হয়নি। কয়েক মাস আগে ঢাকা সফরে এসে তিস্তা চুক্তির জন্য তার ওপর ‘ভরসা’ রাখার আহ্বান জানান মমতা।

অতীতের তিক্ততা ভুলে এক সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তারা রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। মনে করেন, এই সম্পর্কই ভারতকে এগিয়ে নিতে পারে। দুই পক্ষের এই নমনীয়তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশও। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ‘বেশ ভালো’ থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝামেলা লেগেই ছিল। মমতা ব্যানার্জীর ‘গো ধরা মনোভাব’ বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের সঙ্গে বছর খানেক ধরেই মমতার সম্পর্ক ছিল শীতল। নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের পশ্চিমবঙ্গ সফর সেই শীতল সম্পর্ককে অনেকটা উষ্ণ করে তুলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মমতা বুঝতে পেরেছেন তার টিকে থাকার জন্য কেন্দ্রের সহযোগিতা এই মহূর্তে অপরিহার্য। বিশেষ করে কেন্দ্রের অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। দুই দিনের সফরে একটি ‘আর্থিক প্যাকেজের’ ওপর জোর দিয়েছেন মমতা। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতা এক অর্থে মোদির কাছে ধরা। তার দলের কয়েকজন বিধায়ক এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই তাদের জেলে ভরেছে। তদন্ত এখনও চলছে। সুযোগ পেলে বামেরা এই কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতার মু-পাত করেন। সারদার ঘটনা নিয়ে মমতা এক বিব্রতর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তিনি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তাই কেন্দ্রের নানা প্রস্তাব এখন তিনি ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

অন্যদিকে এই মুহূর্তে মমতাকেও পাশে দরকার নরেন্দ্র মোদির। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্য সভায় নরেন্দ্র মোদির দল সংখ্যালঘু। বীমা, পেনশন, স্থলসীমান্তসহ বেশ কয়েকটি বিল উঠেছে রাজ্য সভায়। এসব বিল পাসে মমতার সহায়তা দরকার। তাই বিজেপির একটি অংশ এখন আর অযথা মমতাকে ঘাটাতে চান না। পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস আমলের কয়লা, স্পেকট্রাম ও সাবমেরিন কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বললেও সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে টু শব্দ করেননি। প্রসঙ্গত: ১৯৯৮ সালেও মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। বিজেপির সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।