Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদি

জুন ৩, ২০১৫, ০৫:৩৮ এএম


ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদি

নরেন্দ্র মোদি বুঝলেন, দেশ চালানো বড় দায়! বাজপেয়ী জমানায় গুজরাট দাঙ্গার জন্য এই নরেন্দ্র মোদিকেই একদা ভিসা দিতে রাজি হয়নি আমেরিকা।

এই মোদির রাজ্যের গোধরা দাঙ্গা নিয়ে জাতিসংঘে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। এমনকি গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই মোদিকেই তাদের ধর্মীয় টুপি পরাতে পারেননি সংখ্যালঘু সমাজের নেতারা।

আর সেই মোদিই কি না আজ সরকারের এক বছর পার হতে না হতে ৩০ জন ইমাম এবং মুসলিম ধর্মীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন!

আর সেখানেই তিনি জানিয়ে দিলেন, কোনো স্তরেই সাম্প্রদায়িকতাকে বরদাস্ত করা হবে না। উন্নয়নই সব সমস্যার সমাধান। সংখ্যালঘু সমাজের উদ্দেশে এমন একটা বার্তা দেয়ার জন্য তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন শবে বরাতের দিনটিকে।

অল ইন্ডিয়া ইমাম সংগঠনের প্রধান ইমাম উমের আহমেদ ইলিয়াসির নেতৃত্বে ৩০ জনের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মঙ্গলবার নিজের বাসভবনে দেখা করেন মোদি।

সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে পাশে নিয়ে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপ করেন। আর তার পরেই আলোচনার ফাঁকে বলে দেন, বিভাজনের রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাসী নন।

মোদির কথায়, ‘সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর রাজনীতি এ দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। উন্নয়নই এখন যাবতীয় সমস্যার সমাধান। আমি সেই লক্ষ্যেই আছি।’

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি এই কাজই করেছেন। আজও লক্ষ্যচ্যুত হননি। পাল্টা বার্তা এসেছে সংখ্যালঘু সমাজের পক্ষ থেকেও। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, গত এক বছরে মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করে প্রতিনিধি দল বলেছে, উন্নয়নের পথে তারাও শরিক হতে চান।

ভোটব্যাংকের বিভাজনের রাজনীতিকে সরাসরি খারিজ করেন এই নেতারাও। একই সঙ্গে ‘মুসলিম যুবকদের এক হাতে কোরআন আর এক হাতে কম্পিউটার’ নিয়ে মোদির দৃষ্টিভঙ্গিরও তারিফ করেন তারা।

ভাবমূর্তি বদলের জন্য মোদির এই সক্রিয়তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতির অন্দরে। যদিও সরকার ও বিজেপির একটা বড় অংশের বক্তব্য, মোদির আজকের এই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থান আকস্মিক নয়।

সাম্প্রদায়িক বিবৃতি দেওয়ার জন্য মঙ্গলবারই এক সাক্ষাৎকারে সঙ্ঘ পরিবারের কিছু নেতার বিরুদ্ধে কামান দেগেছিলেন মোদি। আজকের বৈঠক ও বার্তা তারই পরবর্তী ধাপ।

গো-হত্যা বন্ধসহ বেশ কিছু কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে যে বিতর্ক-উত্তেজনা চলছে, সরকার এখন তাতে জল ঢালতে চাইছে। গো-হত্যা বিতর্কে জল ঢালতে সক্রিয় হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।

উত্তর-পূর্বের এই নেতা প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। রিজিজু রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি নিজেই গরু খান এবং বিভিন্ন এলাকার মানুষের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।

সাম্প্রদায়িকতা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার এই বিতর্ক কিন্তু বিজেপিতে নতুন নয়। যে লালকৃষ্ণ আডবাণী বিরোধী দলে থাকার সময় রামমন্দির আন্দোলন করে হিন্দুত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, তিনিই পাকিস্তান সফরে গিয়ে জিন্নার সমাধি দর্শন করে তাকে ধর্মনিরপেক্ষ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সেই ঘটনা নিয়ে আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে আডবাণীর চূড়ান্ত সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘাতে শেষ পর্যন্ত বলি হতে হয়েছিল আডবাণীকে। দলের সভাপতির পদও তাকে খোয়াতে হয়েছিল।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মোদির মধ্যেও কিন্তু আসলে দুটি সত্ত্বা আছে। এক মোদি শিল্প এবং সংস্কারের পক্ষে। অম্বানী থেকে আমেরিকা। তিনি ‘স্যুটেড-বুটেড’, আধুনিক। অন্যজন গৈরিক বসনে হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল সফরে যান এবং তাতে খুশি হয় নাগপুর। এ এক ভারসাম্যের খেলা। বৈপরীত্যের ঐক্য।

আরএসএসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে মোদির এই উদ্যোগ কিন্তু নাগপুরকে জানিয়েই। অমিত শাহ ক’দিন আগেই নাগপুরে গিয়ে এ ব্যাপারে মোদির কৌশল তাদের জানিয়ে এসেছেন।

ওই আরএসএস নেতাটি বলেন, সঙ্ঘ এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন যদি ভাল হয়, তা হলে অনেক বড় ব্যাপারও ছোট হয়ে যায়। আর সম্পর্ক খারাপ হলে অনেক ছোট ব্যাপারও বড় হয়ে যায়।

বাজপেয়ী জমানায় সুদর্শনের সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে ব্যক্তিগত তিক্ততা এসে গিয়েছিল। উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে আডবাণী সেতুর কাজ করতেন। আরএসএসের সমর্থন ছিল তার সঙ্গে। এখন মোদির সরকারে কিন্তু কোনো আডবাণী নেই। মোদিই বাজপেয়ী, মোদিই আডবাণী!

একই সঙ্গে বলা হচ্ছে, মোহন ভাগবতের সঙ্গে মোদির সম্পর্কের রসায়ন যথেষ্ট ভাল। আরএসএস নেতৃত্ব বলছেন, এটা ঠিক যে, মোদি সরকারের এক বছরের কাজকর্মের অনেক ত্রুটি তারা অমিত শাহের মাধ্যমে ধরিয়ে দিয়েছেন। তবে তার মানে এই নয় যে, সঙ্ঘ মোদি বিরোধী হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে বিজেপিতে মোদির কোনো বিকল্প নেই।

আরএসএসের এই নেতা আরো বলেন, আরএসএসের কাছে মোদি এমন এক সন্তান, যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন আছে। মোদিকে আরএসএস এই আশ্বাসও দিয়েছে, আগামী কয়েক বছর তারা রামমন্দির, ৩৭০ ধারা, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো কড়া হিন্দুত্বের প্রসঙ্গগুলি তুলবে না। কারণ সরকারের সামনে পরিস্থিতি বেশ কঠিন।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, শেয়ার বাজারের অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়। মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতিও চিন্তার। এই পরিস্থিতিতে মেরুকরণের রাজনীতি ভুলে উন্নয়নের রাস্তায় না হাঁটলে এখন সবথেকে বেশি বিপদ কিন্তু মোদিরই।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েও দিয়েছেন, তার পাখির চোখ উন্নয়ন। বিহারের নির্বাচনের এখনো বেশ কয়েক মাস বাকি আছে। তাই বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকেই এখন তুলে ধরতে হবে মোদিকে।

প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু নেতা চেঁচাতে পারেন। কিন্তু সে দিকে নজর দিতে গেলেই বিপদ বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। সরকার চালানো যে বড় গরজ!সূত্র: আনন্দবাজার।