Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

কৃষকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ ভারতের রাজধানী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ২৯, ২০২০, ০১:৩০ পিএম


কৃষকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ ভারতের রাজধানী

কৃষকদের আন্দোলনে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ভারতের রাজধানী। গত তিন-চারদিন ধরে দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষকের কব্জায়।

বিবিসি জানায়, নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের খাবার নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েই তারা রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির পথে- আর এখন রাজধানীর ‘লাইফলাইন’ জাতীয় সড়ক ৪৪ কার্যত তাদেরই দখলে।

দিল্লির বুকে অবস্থানরত এই হাজার হাজার কৃষক কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া আগাম আলোচনার প্রস্তাবও এদিন ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তারা তুমুল আন্দোলন শুরু করছেন।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা এই অসংখ্য কৃষক দিল্লিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখায় রাজধানীর একটা বিস্তীর্ণ অংশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরও বহু কৃষক দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টায় সীমান্তে অপেক্ষা করছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রোববার (২৯ নভেম্বর) তার মাসিক রেডিও ভাষণে নতুন কৃষি আইনের পক্ষে জোরালো সমর্থন করার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

আন্দোলনরত একজন কৃষক সরবজিৎ সিং বলেন, পাঞ্জাব থেকে লাঠি-জলকামান অনেক কিছু সহ্য করে আমরা এতদূর এসেছি। আর এখন সরকার বলছে আমাদের চুপচাপ গিয়ে বুরারি ময়দানে বসে পড়তে, যেটা কিছুতেই আমরা মানব না। তাহলে আমাদের এই আওয়াজ চাপা পড়ে যাবে। আমরা চাই দিল্লির পানি-দুধ-ফল-সবজির সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিতে, যাতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে ও তারা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়।

পাটিয়ালা থেকে আসা অমৃক সিং বলেন, সরকার যতক্ষণ না তিনটি কালো আইন বাতিল করছে এবং কৃষককে সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিয়ে একটি চতুর্থ আইন আনছে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।

বস্তুত শনিবার (২৮ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কৃষকরা যদি রাস্তা ছেড়ে দিয়ে দিল্লির বুরারি ময়দানে থিতু হন- তাহলে নির্ধারিত ৩ ডিসেম্বরের আগেও সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

কিন্তু রোববার কিষাণ নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন, অন্যদিকে রাজধানীতে উত্তেজনা বাড়ছে।

দিল্লির রোহিণীর বাসিন্দা এক তরুণী বলেন, কৃষক আন্দোলনের নামে যেভাবে শহরের চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ সবাই হেনস্থা হচ্ছেন তা মেনে নেওয়া যায় না।

দিল্লি সীমান্তে অবস্থানরত কৃষক রমণীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, তারা পিছু হঠবেন না এবং দরকারে পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে নতুন বাহিনীও দিল্লি অভিমুখে রওনা দেবে।

এই আন্দোলনে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত আছে, এর মধ্যে এই মন্তব্য করে কৃষকদের আরও চটিয়ে দিয়েছেন হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার। আর রোববার নতুন করে তারা ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণেও।

মাসের শেষ রোববার প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ‘মন কি বাত’ ভাষণ দিয়ে থাকেন, তাতে তিনি বলেন, পার্লামেন্ট অনেক ভেবেচিন্তেই কৃষি সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন আইন এনেছে। তাতে কৃষকদের অনেক বাধা দূর হয়েছে, অতি অল্প সময়েই তারা এর লাভ পাচ্ছেন।

মহারাষ্ট্রের মকাই-চাষী জিতেন্দ্র ভোজি কীভাবে নতুন আইনের সুবিধা পাচ্ছেন, তারও দৃষ্টান্ত দেন মোদী। কিন্তু কৃষকদের আন্দোলন যেহেতু এই আইনগুলোর বিরুদ্ধেই, তারা প্রধানমন্ত্রীর কথায় ক্ষুব্ধ।

দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়া অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকর বলেন, সরকার তো দাবি করে তাদের সব সিদ্ধান্তই মানুষের পক্ষে। কিন্তু দেশের কিষাণ-মজদুররা সেই চালাকি এখন ধরে ফেলেছে, এবং তারা বুঝে গেছে সরকার শুধু বৃহৎ কর্পোরেটদেরই ধামাধরা।

দুপক্ষের এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনে রাজধানী দিল্লির একটা বিস্তীর্ণ অংশ অচল হয়ে রয়েছে গত বাহাত্তর ঘন্টারও বেশি সময় ধরে।

আমারসংবাদ/জেআই