Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

২০০ বছর পর এমন হামলা দেখল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জানুয়ারি ৭, ২০২১, ০৭:১০ এএম


২০০ বছর পর এমন হামলা দেখল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশন চলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল হিলে ঢুকে পড়ে। ২শ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এমন ঘটনা দেখেনি কেউ।

ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবারের (৬ জানুয়ারি) মৃত্যুর ঘটনায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি বলেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশের গুলিতে ওই নারী নিহত হন। বাকি তিনজন হাসপাতালে মারা যান।

ট্রাম্প তার ভিডিওতে তার সমর্থকদের বাড়ি ফেরার অনুরোধ করলেও তিনি আবারও দাবি করেন জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দল নির্বাচন চুরি করেছে যদিও তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নি।

সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আমি তোমাদের বেদনা বুঝি, আমি জানি তোমরা কষ্ট পেয়েছ।তোমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে, আমাদের শান্তি দরকার, আমরা চাইনা কেউ আহত হোক।

অপরদিকে, ‘আমাদের গণতন্ত্র এক নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে’ উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, এই বিক্ষোভ একটি বিদ্রোহের সমতুল্য এবং এখনই তার অবসান হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের ঢুকে পড়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। তারা বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক দৃশ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে ‘শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।

এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, এটা পুরোপুরি অসুস্থ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোনো দেশে এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোনো স্থান নেই।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘গণতন্ত্রের উপর এই আঘাতের ঘটনায়’ ‘কানাডিয়ানরা প্রচন্ড বিরক্ত’।আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের’ নিন্দা জানিয়েছেন।

এর আগে ১৮১৪ সালে হামলার কবলে পড়েছিলো ক্যাপিটল ভবন। ওই ঘটনার ২০৪ বছর পর বুধবার এমন ঘটনা ঘটল। তবে দুটি ঘটনার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে।

১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ব্রিটিশ বাহিনী নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে এবং এতে আগুন জালিয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হিস্টোরিকাল সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর ওই যুদ্ধ ‘ওয়ার অব ১৮১২’ নামে পরিচিতি। ১৮১২ সালের জুন মাসে শুরু হওয়া সেই যুদ্ধ শেষ হয় ১৮১৫ সালে। যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বাহিনীর হামলার শিকার হয় ক্যাপিটল ভবন।

যুক্তরাষ্ট্রের হিস্টোরিকাল সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৮১২ সালের সেই যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে এই ধরণের আগ্রাসন হল।

জানা যায়, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার আলেকজান্ডার কুকবার্ন এবং মেজর জেনারেল রবার্ট রসের নেতৃত্বে ১৮১৪ সালের আগস্ট মাসে ক্যাপিটল ভবনে হামলা হয়। তখন নির্মানাধীন ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল, তাই আগুন বেশি ছড়ায়নি।

ওই সময় কানাডা ছিল যুক্তরাজ্যের উপনিবেশের অধীন। আর আপার কানাডার রাজধানী ইয়র্কে মার্কিন হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিশোধ নিতেই ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ বাহিনী এ হামলা চালায়। শুধু ক্যাপিটল ভবন নয়, হোয়াইট হাউসসহ ওয়াশিংটন ডিসির বিভিন্ন জায়গায় এ হামলা চালায় ব্রিটিশ বাহিনী।

ওই হামলার সঙ্গে বুধবারের ঘটনার পার্থক্য হল এবার নিজ দেশের নাগরিকদের হামলার শিকার হয়েছে ক্যাপিটল ভবন। এখন সেখানে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিও নাই।

ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটি হামলার পর এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউএস ক্যাপিটল শুধু একটি ভবন নয়, এটি মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি। এখানে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর আমাদের সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের মৌলিক স্মারক।

আমারসংবাদ/জেআই