Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৮:৪০ পিএম


পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধস
  • ডিএসই ও সিএসইতে দাম কমেছে ৭১ শতাংশ
  • বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আজ কমলো তো কালকে বাড়বে। এভাবেই চলবে পুঁজিবাজার- ডিএসই পরিচালক, রকিবুর রহমান

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। করোনাকালেও ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। যাতে কারসাজি করে বাজারের টাকা লুট করতে না পারে। এই বার্তা বিনিয়োগকারীদের মনে আশার আলো জাগিয়েছে। তারা আস্থার সাথে বাজারে লেনদেন করতে থাকেন। রবির সাথে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দাম অনেক বেড়েছে। ১০ টাকার শেয়ার ৭০ টাকা হয়েছে। এতে সূচকের সাথে অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনও বেড়েছে। শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে সম্প্রতি ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাতে পুঁজিবাজারে আগের মতো কেলেঙ্কারি না হয়। কিন্তু চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে কমতে থাকে। কমে গতকাল ব্যাপকভাবে ধস নামে। ডিএসইর মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও দাম কমেছে ৭১ শতাংশ। তবে এমন টানা দরপতনকে স্বাভাবিক বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, টানা দাম বাড়ার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন দাম কমার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংশোধন হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল মঙ্গলবার দেশের শেয়ারবাজারে এক প্রকার ধস নেমেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পতনের মুখে পড়ে শেয়ারবাজার। আগের দুদিনের ধারায় গতকাল শুরু থেকেই লেনদেনে অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। ফলে সূচকেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। লেনদেনের সময় যতই গড়াতে থাকে বাড়তে থাকে পতনের তালিকায় নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। একইসঙ্গে বড় হতে থাকে সূচকের পতন। লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পতনের প্রবণতা চলতে থাকায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠান। আর দাম কমেছে ২৫৫টির। আর ৭৫টির দাম অপরিবর্তিত ছিলো। ব্যাপকভাবে পতনের মধ্যে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতের রয়েছে মাত্র একটি। প্রকৌশল খাতের চারটি, খাদ্য খাতের পাঁচটি, জ্বালানি খাতের দুটি, বিমা খাতের আটটি, আইটি খাতের দুটি, পাট খাতের একটি, ওষুধের তিনটি এবং বস্ত্রের তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া চারটি মিউচুয়াল এবং দুটি করপোরেট বন্ড রয়েছে।

এদিকে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা। যা আগের দিন ছিলো এক হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪৬০ কোটি টাকা।

শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দিলেও তা স্বাভাবিক বলছেন বাজার সংশিষ্টরা। তারা বলছেন, টানা দাম বাড়ার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, দাম বাড়বে আবার কমবে- এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আজ কমলো, কালকে আবার বাড়বে। এভাবেই চলবে পুঁজিবাজার। শিগগিরই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। গতকালের পতন কিছু না। সূচকের যে পতন হয়েছে তা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন। কয়েকদিন ধরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিলো। এ সময় অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। তখন তো কেউ কিছু বলেনি। রবির ১০ টাকার শেয়ার ৭০ টাকা হয়েছে। এখন দাম কমার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংশোধন হচ্ছে। দেখা যাবে আবার বাড়বে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশে ৮০ শতাংশ বিনিয়োগকারী বড় প্রতিষ্ঠানের। তারা বুঝে জেনে শুনে এ বাজারে বিনিয়োগ করেন। তাতে সমস্যায় পড়ে না। কিন্তু অনেকে না বুঝে বিনিয়োগ করায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী বলতে কিছু নেই বলে জানান তিনি। দেখা যায়, টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের ১১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি।

এছাড়া লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে— লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল। লাফার্জহোলসিম এবং আইএফআইসি ব্যাংক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৯৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৯টির এবং ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সম্প্রতি ডিএসই কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেছেন, পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের মধ্যে সম্পর্ক এখন খুবই ভালো। আগের ভয়াবহ ধসের ঘটনা আর দেখতে হবে না। দেশের পুঁজিবাজারে আর ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না। শিগগিরই ডিএসই ভবন একটি অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে। আর ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমানও বলেছেন, ২০১০ সালের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী। লেনদেনযোগ্য শেয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের। প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে। একসময় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি বোনাস দিয়ে পরিচালকরা টাকা নিয়ে যেতেন। বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, আপনারা না জেনে, না বুঝে পুঁজিবাজারে আসবেন না। আমাদের ভয় হচ্ছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এদিকে শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এই তথ্য জানান।

আমারসংবাদ/জেআই