Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪,

পাঁচ শ বছর ধরে মসজিদে আকসায় আজান দেয় যে পরিবার

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ১৯, ২০২১, ১১:০৫ এএম


পাঁচ শ বছর ধরে মসজিদে আকসায় আজান দেয় যে পরিবার

বংশ পরম্পরায় পাঁচ শ বছর ধরে মসজিদে আকসায় আজান দেওয়ার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কাজ্জাজ পরিবার। বর্তমানে এ পরিবারের অষ্টম পুরুষ ফিরাস আল কাজ্জাজ মসজিদে আকসায় মুআজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন ফজরসহ তিন সময় তার আজানের ধ্বনি ভেসে আসে মসজিদে আল আকসার মিনার থেকে।

কাজ্জাজ বংশের অষ্টম পুরুষ ফিরাস আল কাজ্জাজ। ৩২ বছর বয়সী ফিরাস আল আকসা মসজিদের কনিষ্ঠতম মুআজ্জিন। মসজিদে আকসার সন্নিকটে আল সিলসিলা রোডের পাশে তার পরিবারের বসবাস। তবে কয়েক বছর ইহুদিদের আসার সম্প্রসারণ করতে গিয়ে তার ঘরও ভেঙ্গে ফেলা হয়। 

৮০ বছর বয়সী বাবার সঙ্গে পালাক্রমে ফিরাস প্রথম দিকে আজান দিতেন। তার বাবাও ৪০ বছর যাবত আল আকসায় আজান দিয়েছেন। এখন ফিরাস ফজর, মাগরিব ও ইশার নামাজের আজান দেন। আর ফিরাসের বাবা দিনেরবেলা জোহর ও আসরের সময় আজান দেন। 

ফিরাস বলেন, ছোটবেলায় আমি বাবার সঙ্গে মসজিদে আকসায় যেতাম। তখন আমার ১০ বছরও অতিক্রম হয়নি। তখন খুব কাছ থেকে আমি আজান শোনার সুযোগ পাই।

ফিরাসের পরিবারের মূলত বর্তমান সৌদি আরবের হেজাজের অধিবাসী। পাঁচ শ বছর আগে তার পূর্ব পুরুষ মসজিদে আকসায় আসেন। সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় উসমানি সম্রাজ্যের দায়িত্বশীলরা তাকে মসজিদে আকসার মুআজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর থেকে বংশ পরাক্রমায় তারা আজান দিয়ে আসছেন। মূলত জিকির ও ধর্মীয় সঙ্গীত চর্চাই সুফি ধারার এ পরিবারের অন্যতম ঐতিহ্য। তাই পারিবারিক সূত্রে শৈশব থেকে জিকির ও ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে তিনি বেড়ে ওঠেছেন। 

বাবার স্মৃতিচারণ করে ফিরাস বলেন, একদিন বাবা আমাকে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করতে বলল। তখন আমার মাত্র ১০ বছর বয়স। তখনই প্রথম নিজের সুন্দর কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করি। বাবা আমাকে উৎসাহ দিতে থাকেন। আর আমি তার কাছে শিখতে থাকি। 

১২ বছর বয়সে ফিরাস প্রথম বারের মতো মসজিদে আকসায় আজান দেন।

ফিরাস বলেন, মানুষ আমাকে উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে দেয়। তখন আমার মনে হয়নি যে আমি একটি বিশেষ মসজিদে অবস্থান করছি। বরং মনে হয়েছে আমি সাধারণ কোনো স্থানে আছি। এখন আমি লক্ষাধিক মানুষের সামনেও কোনো ইতস্তবোধ ছাড়াই কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি।

মসজিদে আকসার অতীত-বর্তমান নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ফিরাস বলেন, আল আকসায় অতীত ও বর্তমানের মধ্যে বিশাল তফাত। আগে এখানে অনেক মাদরাসা ছিল। আরব বিশ্বের অনেক বড় বড় আলেম এখানে আসতেন। ইসলাম ও কোরআন শিক্ষা দিতেন তারা। সুললিত সুরে কোরআন তেলাওয়াতের নানা ধরনের পদ্ধতি শেখাতেন। কিন্তু এখন আর তাদের কেউ আসতে পারেন না। ইসরায়েলি সেনারা এ অঞ্চলকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আল আকসা প্রান্তরে প্রবেশ করলে আপনার অনুভূতি বদলে যাবে। আমার মনে হয়, এখানের জড় পাথরগুলো আল কুদসের শত-সহস্র বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলছে। আল আকসা মসজিদ আমাদের কাছে যেমন আধ্যাত্মিক স্থান, তেমনি তা রাজনৈতিক ইস্যুও বটে। এখানে এসে মুসলিমরা ইবাদত করবেন। রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজরিত এ ভূমি আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের স্থান।

ইসরায়েলের দখলদারিত্ব নিয়ে ফিরাস বলেন, আল আকসার অবস্থা এখন বদলে গেছে। এখন আমরা ইহুদিকরণের যুগে প্রবেশ করেছি। তাই আকসায় ঢুকতে আমাদেরকে নানা বিধি-নিষেধ অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু সব দুঃখ-কষ্টের পরও আমরা কখনও এ শহর ছেড়ে যাব না।

ফিরাস বলেন, একবার আমি মালদ্বীপ সফর করি। কিন্তু একদিন না যেতেই আমার আর সেখানে থাকতে মন চায়নি। আমি দ্রুত নিজের শহরে ফিরে আসি। আমি এ শহর ছেড়ে দূরে কোথাও থাকতে পারি না। আমরা পানিতে থাকা মাছের মতো। পানি থেকে বের হলেও মারা যাব। এ পূণ্য ভূমির অনেক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য আছে। সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয় হলো, এখানে সব নবী-রাসুল নামাজ আদায় করেছেন। এখান থেকে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) উর্ধ্বাকাশে মেরাজে গিয়েছেন।

ফিরাস আল কাজ্জাজ জেরুজালেমের ভোকাল মেলোডিজ ইনস্টিটিউটে দুই বছর আজানের অনুশীলন করেন। এরপর কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শায়খ মুহাম্মদ আল মিসরির কাছে পড়েন। মূলত আরব বিশ্বে সঙ্গীত চর্চার আগে কোরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী হতে হয়। 

ফিরাস বলেন, আরব শিল্পীরা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে গান চর্চা শুরু করেন। তাই মিশরের প্রয়াত বিখ্যাত শিল্পী উম্মে কুলসুমও কোরআন পাঠের চর্চা করেছেন। তাছাড়া সিরিয়ার প্রশিদ্ধ শিল্পী সাবাহ ফাখরি প্রথম দিকে একজন মুআজ্জিন ছিলেন। গান চর্চা করা খুবই সহজ। কিন্তু ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠেছি যা আমার জীবনে খুবিই প্রভাব ফেলেছে। তবে একজন গায়কের জন্য আজান দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারণ এতে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয় এবং কোরআন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হয়। সর্বপরি একজন মুআজ্জিন মানুষকে নামাজের দিকে আহ্বান করেন। আজানের সুমধুর সুর মানুষের অন্তরে গভীর রেখাপাত করে।

সূত্র : ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর

আমারসংবাদ/জেআই