Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪,

যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ইসরায়েল-হামাসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ২১, ২০২১, ০৪:৩০ এএম


যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ইসরায়েল-হামাসের

মিশরের মধ্যস্থতায় শুক্রবার (২১ মে) থেকে কার্যকর হওয়া ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি দল হামাসের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এগার দিনের সহিংসতার অবসান হলো। এসময়ে অন্তত ২৪০ জন মারা গেছে এবং এদের বেশির ভাগই মারা গেছে গাজায়।

উভয় পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে বলে বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে। মিশরের এক প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে বসেছিল। তবে দু’পক্ষই এবারের সংঘাতে তাদের জয় দাবি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি উন্নতির জন্য সত্যিকার সুযোগ এনে দিয়েছে।

উভয় পক্ষের মধ্যে গত ১০ মে লড়াই শুরু হয়েছিলো। বৃহস্পতিবারও (২০ মে) গাজার উত্তরে হামাস স্থাপনাগুলোতে অন্তত একশ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং জবাবে রকেট ছুঁড়েছে হামাস।

বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা মিশরের প্রস্তাবিত চুক্তিতে রাজি হয়ে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধবিরতি হবে সমঝোতার ভিত্তিতে এবং নিঃশর্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এটাই বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ দেখতে চায় না।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও কখন থেকে তা কার্যকর হবে, সেটা বলেনি।

তবে রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে হামাস জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে হামাস। দলটির এক নেতাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, এটা ফিলিস্তিনি জনগণের ‘বিজয়’ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পরাজয়’।

হামাস নেতারা এটাও বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া অবধি তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ সিসিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষ প্রতিপালন করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে যাচ্ছেন।

মিশরের পাশাপাশি কাতার ও জাতিসংঘ দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতি রাজি করানোর ভূমিকায় ছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক দূত ডেনিস রোস।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এই ধরনের যুদ্ধবিরতি স্বল্প সময়ের জন্য শান্তি আনতে পারবে হয়ত।

তার ভাষ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের হাতে রকেট থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি সুদূরপরাহত।

তার কথার প্রতিধ্বনি পাওয়ার কথাও জানিয়েছে বিবিসি। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজা থেকে রকেট হামলার খবর দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে ইসরায়েলির বিমান হামলার খবর।

এবার সংঘাতের শুরুটা হয়েছে ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে। এরপর ইসরায়েলের ‘জেরুজালেম দিবস’ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

পূর্ব জেরুজালেমের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের বিভক্ত দুই অংশের একটি গাজায় দেখা দেয় বিক্ষোভ।

গত ১০ মে গাজাবাসী ফিলিস্তিনিরা বিশেষ করে হামাস রকেট হামলার পর তার জবাবে সামরিক অভিযান শুরুর কথা জানায় ইসরায়েল।

ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলার পাশাপাশি গাজা সীমান্তে কামান-ট্যাংক থেকেও গোলা বর্ষণ করে। এতে অন্তত নারী ও শিশুসহ ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে। অন্যদিকে হামাসের ছোড়া রকেট হামলায় ১২ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার খবরও এসেছে।   

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করেই সংঘাত চলছিল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামলা বন্ধ না করার কথাই বলা হচ্ছিল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবারও বলেছিলেন, তার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত হামাসের উপর হামলা চালিয়ে যাওয়া হবে।

বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল শতাধিক বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ মিশর দুই পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানোর উদ্যোগ নিয়ে আসে। ইসরায়েল সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাজি হচ্ছেন বলেও মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

মিশরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার পর দুই পক্ষই নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে। তবে আলোচনা এখনও চলছে।

এরপর রাতে দুই পক্ষেরই রাজি হওয়ার ঘোষণা আসে।

যুদ্ধবিরতির পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার ক্ষেত্রে মিশর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবার মিশরের মধ্যস্থতায় দুইপক্ষ আলোচনায় বসবে কি না, সেটাই এখন দেখার।

আমারসংবাদ/জেআই