Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

শিকলে বন্দি থেকে যুগলের বিশ্বরেকর্ড, তবুও জমেনি প্রেম!

আমার সংবাদ ডেস্ক

জুন ১৯, ২০২১, ১০:১০ এএম


শিকলে বন্দি থেকে যুগলের বিশ্বরেকর্ড, তবুও জমেনি প্রেম!

চলতি বছরের ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে প্রেমকে আরো মজবুত করার জন্য একজনের হাতের সঙ্গে আরেকজনের হাত নিয়ে শিকল দিয়ে তালাবন্দি করেছিলেন ইউক্রেনের খারকিভের আলেকজান্দর কুদলে এবং ভিক্টোরিয়া পুশতোভিতোভা। সেই অবস্থায় একসঙ্গে দু’জন অতিক্রম করেছেন ১২৩ দিন। তবে জমেনি তাদের প্রেম।

শিকল বন্দি অবস্থায় একই সঙ্গে দু’জন বাথরুমে গিয়েছেন। একজন যখন গোসল করেছেন হাতে তালাবদ্ধ অবস্থায়, মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে অন্যজনকে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে সে দৃশ্য। এত কাছাকাছি, এত ভালবাসাবাসির পরও যখন তাদের হাতের শিকল খুলে দেয়া হয়েছে, তখন তারা যে যার মতো আলাদা হয়ে দূরে সরে গেছেন।

মে মাসের শেষের দিকে যখন তাদের হাতে লাগানো স্টিলের চেইন কেটে ফেলা হয়, তখন ২৯ বছর বয়সী পুশতোভিতোভা চিৎকার হরে ওঠেন- ‘হুররে! শেষ পর্যন্ত আমি মুক্ত হতে পেরেছি।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের আইল্যাশ টেকনিশিয়ান পুশতিভিতোভা। তিনি তার প্রেমিক কুদলেকে প্রস্তাব করেন, তাদের ভঙ্গুর ভালবাসাকে রক্ষা করার জন্য শেষ চেষ্টা চালাবেন। 

ভ্যালেন্টাইনস ডেতে তারা একসঙ্গে হাতে হাত রেখে তাতে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখবেন। কুদলে গাড়ি বিক্রেতা। তিনি প্রেমিকার কথায় রাজি হয়ে গেলেন। 

পুশতিভিতোভা বলেন, আমার মনে হয়েছে এটা হবে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। মনে হয়েছে এতে আমার জীবনে নতুন ইমোশন সৃষ্টি করবে, যা আমি এর আগে কখনো পাইনি। 

ঠিকই তাদের হাতে স্টিলের চেইনে তালা পড়লো। একসঙ্গে কাটিয়ে দিলেন ১২৩ দিন। কিন্তু তাদের যুগল জীবনে তা কোনো আলোকপাত করলো না। যে আশায় একে অন্যকে পাওয়ার আশায়, স্বর্গ রচনার আশায় তারা এমন পথে পা বাড়িয়েছিলেন, তা হলো না। তাদের সম্পর্কে আরো বড় ফাটল ধরলো।

এই প্রেমিক প্রেমিকার ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা কমপক্ষে ৭৮০০। তাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে শেয়ার করেছেন তারা। পরীক্ষা চলাকালে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন কুদলে। তাতে তিনি বলেছেন, যখনই আমরা একের সঙ্গে অন্যে মিলিত হয়েছি। কাছাকাছি এসেছি। পরক্ষণেই দু’জনের ব্যবধান বেড়েছে। পুশতোভিতোভা চেয়েছে তার আগের জীবনে ফিরে যেতে। সে যা ফেলে এসেছে সেসব বিষয়কে মিস করেছে। তাই দু’জনের এক হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।

এ সময়ে তারা একে অন্যের যত্ন নিয়েছেন। কেনাকাটা করতে গিয়েছেন একসঙ্গে। যেকোনো কাজে থেকেছেন একসঙ্গে। কারণ, তালা দিয়ে তাদের হাতকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তবে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজটি ছেড়ে দিতে হয়েছে পুশতোভিতোভাকে। কারণ, তার কাছে যেসব মেয়ে কাস্টমার যান, তারা পাশে আরেকজন পুরুষ কুদলেকে দেখলে স্বস্তি বোধ করেন না। তাই যেহেতু কুদলেকে ছেড়ে তার আলাদা হয়ে ওই কাজ করা সম্ভব না, তাই কাজই ছেড়ে দিয়েছেন পুশতোভিতোভা।

কিন্তু এত কাছে থাকলেও ঘন্টায় ঘন্টায় তাদের মধ্য কথা কাটাকাটি হয়েছে। বেড়েছে তিক্ততা। আবেগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। 

পুশতোভিতোভা বলেন, সারাদিন আমরা একসঙ্গেই থেকেছি। তা সত্ত্বেও আমার প্রতি কোনো মনোযোগ দেখতে পাইনি কুদলের। সে কখনো আমাকে বলেনি- তোমাকে মিস করছি। কিন্তু আমি তো এই কথাটা খুব শুনতে পছন্দ করি। 

অন্যদিকে কুদলে বলেছেন, এই পরীক্ষায় তিনি বুঝতে পেরেছেন তিনি এবং পুশতোভিতোভা সমমনা নন। আমি বুঝতে পেরেছি আমাদের মধ্যে পুরোপুরি ব্যবধান রয়েছে অনেক। 

অবশেষে ১৯ মে তাদের হাতের শেকল খুলে দেয়া হয়েছে। এতে হাতের কব্জিতে দাগ পড়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ে দাগ ফেলতে পারেনি। তবে এর মাধ্যমে তারা শিকলে বন্দি যুগল হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় একসঙ্গে থাকার বিশ্বরেকর্ড করেছে। 

যখন তাদের শিকল কাটা হয় কিয়েভের ইউনিটি মনুমেন্টের সামনে তখন সেখানে ইউক্রেনের প্রধান রেকর্ডরক্ষক ভিতালি জোরিন উপস্থিত ছিলেন। শেকল কাটার ঘটনাটি জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

আমারসংবাদ/জেআই