Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

একে অন্যের স্বামীকে কিডনি দান করলেন মুসলিম-হিন্দু নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০৯:০০ এএম


একে অন্যের স্বামীকে কিডনি দান করলেন মুসলিম-হিন্দু নারী

একে অন্যের স্বামীকে কিডনি দান করে নজির স্থাপন করলেন মুসলিম ও এক হিন্দু নারী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরাখণ্ডে। 

রাজ্যের রাজধানী দেহরাদুনে তাদের জীবন কাটছিল। এখন থেকে ৯ মাস আগে তারা দু’জন সুলতানা আলি ও সুষমা উনিয়্যাল একে অন্যকে চিনতেন না। তারা ছিলেন মধ্যবিত্ত মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের সদস্য। কিন্তু কি অদ্ভুত মিল। শুধু তাদের মধ্যে একটি ইস্যুতে অভিন্নতা ছাড়া চালচলন, কথাবার্তা, সংস্কৃতি, ধর্ম- কোনোকিছুতেই মিল ছিল না।

তাদের সেই ইস্যু হলো দু’জনেরই স্বামীর জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রয়োজন। সুলতানা আলির স্বামী আশরাফ আলি (৫২) এবং সুষমা উনিয়্যালের স্বামী বিকাশ উনিয়্যাল (৫১)। দু’জনেই ২০১৯ সাল থেকে কিডনির জটিল সমস্যায় ভুগছেন। তাদের কিডনি কোনো কাজ করছিল না। এ অবস্থায়ও তাদের দেখা সাক্ষাত হয়নি। তারা আলাদাভাবে একজন কিডনিদাতার জন্য আবেদন করলেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে যেতে থাকে। কারো সঙ্গে ঠিকঠাক মতো কিডনি ম্যাচ করছিল না। সুষমা ও সুলতানা নিজেরা নিজেদের স্বামীকে কিডনি দিতে পারেননি। ফলে বাড়তে থাকে অনিশ্চয়তা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।

এরই মধ্যে এ বছর জানুয়ারিতে একটি ব্যতিক্রমী দিন এসে হাজির হয়। সেদিন তাদেরকে বিকাশ এবং আশরাফের চিকিৎসক ডা. শাহবাজ আহমেদ ফোন করেন। তিনি দেহরাদুনে ওই হাসপাতালে বিখ্যাত একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ। 

তিনি বলেন, আমি তাদের ফাইল দেখলাম। মনে হলো সুলতানার রক্তের গ্রুপ-এ বিকাশের সঙ্গে ম্যাচ করতে পারে। আবার সুষমার রক্তের গ্রুপ-বি আশরাফের সঙ্গে ম্যাচ করতে পারে। এ অবস্থায় আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই দুটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

ফোনে তিনি সুষমা ও সুলতানাকে তাদের কিডনি যথাক্রমে আশরাফ ও বিকাশকে দান করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার মধ্যে প্রথমেই উদ্বেগ ছিল। উদ্বেগ ছিল দুটি পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে। তারা এক ধর্মের মানুষ, অন্য ধর্মের কাউকে কিডনি দিতে রাজি হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল ডা. শাহবাজ আহমদের।

আরব নিউজ আরো লিখেছে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে বর্তমান নেতৃত্বে আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি। মুসলিমদের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় উত্তেজনার ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গ্রুপ হলো মুসলিম। ভারতে মোট জনসংখ্যা ১৩৬ কোটি। তার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি ভারতে হিন্দু নন- এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক রাজনীতি করে পুরো দেশকে মেরুকরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এসব জানেন ও নীরব সম্মতি দিয়ে গেছেন। গত কয়েকটি বছর মুসলিমবিরোধিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন শহরের ইসলামিক নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। কয়েকটি ঘটনায় পিটিয়ে মুসলিমদের হত্যা করার খবর পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে অবহিত ডা. শাহবাজ আহমেদ। তা সত্ত্বেও তিনি ওই দুটি পরিবারের কাছে তাদের মতামত চেয়েছেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আমি পরিবার দুটিকে পরিচয় করিয়ে দেই। তারা আমার পরিকল্পনায় রাজি হন। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর দেখতে পাই যে, তাদের কিডনি বদল করা যেতে পারে। এটা হবে ভাল একটি কিডনি প্রতিস্থাপন। এভাবেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। এর দু’এক মাস পরে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতভর অপারেশন চলে। ১০ ঘণ্টা সময় লাগে এতে। 

ডা. শাহবাজ আহমদ বলেন, কিডনি দানের মধ্য দিয়ে এই দুটি পরিবার এখন আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

ভারতের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়ক ট্রান্সপ্লান্টেশন অব হিউম্যান অর্গানস অ্যাক্ট-২০১১ এর অধীনে মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনুমতি থাকবে, যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একেবারে নিকট আত্মীয় এক্ষেত্রে অপারগ হয়। এই আইনের অধীনে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন আত্মীয় তার অঙ্গ দান করতে পারেন। 

ডা. শাহবাজ আহমদ বলেন, ভাগ্য ভাল যে আইনের মধ্যে আমরা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি। তা নাহলে বিষয়টি অন্যদের বোঝানো এবং প্রমাণ দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়তো। 

এখানে উল্লেখ্য, প্রতি মাসে ডা. শাহবাজ দু’ থেকে তিনটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। তিনি এই অপারেশনের পরে বলেছেন, এই দুই রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে উত্তমভাবে।

আমারসংবাদ/জেআই