Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ক্ষমা চেয়ে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার মোদির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নভেম্বর ১৯, ২০২১, ০৯:২৫ এএম


ক্ষমা চেয়ে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার মোদির

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের দিল্লির সীমানায় কৃষকদের আন্দোলন অবশেষে জয় পেল। উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের নির্বাচনের মুখে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানান তিনি। 

২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সংসদে কৃষি আইন পাশ করে বিজেপির সরকার। মোট তিনটি বিষয়ে সেখানে পুরনো কৃষি আইনের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছিল। 

এর আগে গত বছরের জুন মাসে সংসদে ওই আইনের অর্ডিন্যান্স নিয়ে এসেছিল সরকার। তখন থেকেই আইনটি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার বড় অংশের কৃষক জানিয়ে দেয়, এই আইন তারা কোনোভাবেই মানবেন না। তারপরেও বিতর্কিত বিলটিকে আইনে পরিণত করে কেন্দ্রীয় সরকার।

সরকারের ওই পদক্ষেপে দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। দিল্লির সীমানায় ক্যাম্প করে বসে পড়েন কৃষকরা। তাদের উপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছে, জলকামান চালিয়েছে। প্রচুর আন্দোলনকারী বিক্ষোভ দেখাবার সময় মারা গেছেন। কিন্তু আন্দোলন থামানো যায়নি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির সীমানায় লাগাতার আন্দোলন জারি রেখেছেন তারা। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত কৃষকরা লালকেল্লা পর্যন্ত মিছিল করেন। কৃষকদের সেই মিছিল ঘিরেও বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু কৃষক আন্দোলন বন্ধ হয়নি।

ডয়চে ভেলে বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশির আবহাওয়া দিল্লির সীমানায় বসে থাকা আন্দোলনরত কৃষক শিবিরে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কৃষকদের জন্য নয়, মোদি এই ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। উত্তরপ্রদেশে এখন যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার চালাচ্ছে। কিন্তু আগামী নির্বাচন বিজেপির জন্য খুব সুখকর নয় বলেই বিজেপির অন্দরের রিপোর্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কার্যত উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বসে আছেন। তেলের দাম, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মানুষ যে খুশি নয়, তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের প্রচুর কৃষক দিল্লি সীমানায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ ভোট বিজেপি থেকে সরে যাচ্ছিল বলেই মনে করছেন বিজেপির নেতারা। এই পরিস্থিতিতে ভোট ফেরানোর লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী এ কাজ করলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাঞ্জাবে কৃষকরা বিজেপির উপর প্রবল ক্ষুব্ধ ছিলেন। হরিয়ানায় তারা বিজেপি নেতাদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের ক্ষোভ তীব্র ছিল। উত্তরাখণ্ডেও। সবদিক বিবেচনা করেই মোদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন। 

কৃষক নেতা ও স্বরাজ পার্টির প্রধান যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, এই সরকার ও প্রধানমন্ত্রী এতদিন কৃষকদের কথা শোনেনি। তারা কৃষকদের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলেছে। কৃষকরা অর্ধাহারে থেকেছেন, অনাহারে থেকেছেন। সরকার কিছুই করেনি। এখন তারা ভোটে হারবে বলে কৃষি আইন প্রত্যাহার করলো। এই সরকার শুধু এই ভাষাটাই বোঝে।'

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও টুইট করে বলেছেন, দেশের অন্নদাতা কৃষকদের সত্যাগ্রহের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হলো সরকার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা জিতলেন। অন্নদাতাদের সত্যাগ্রহ জিন্দাবাদ।

এর আগে একাধিকবার আইন ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল সরকারের কাছে। পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিধানসভায় আইনের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার আইন প্রত্যাহারে রাজি হয়নি। অবশেষে সে কাজ করতে বাধ্য হলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

আমারসংবাদ/জেআই