Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

‘ডিসিরা ক্ষমতা বাড়াতে বলেছেন, আমরা সম্মতি দেইনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৯:২০ এএম


‘ডিসিরা ক্ষমতা বাড়াতে বলেছেন, আমরা সম্মতি দেইনি’

স্থানীয়ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষমতা বা নজরদারি বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সংযুক্ত করে কমিটি গঠনে তাদের দেওয়া প্রস্তাবকে নাকচ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়াদির আলোচনা পর্বে এই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজেদের সংযুক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসকরা

তিনদিনের ডিসি সম্মেলনর দ্বিতীয় সেশন শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকরা জেলা পর্যায়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ক্ষমতা বা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু আমরা তাতে সম্মতি দেইনি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অলরেডি জেলা প্রশাসকদের সে ক্ষমতা রয়েছে। তারা যেকোনো সময় যেকোনো প্রকল্পের খোঁজখবর নিতে পারেন। 

তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে আরও বেশি নজরদারি বাড়াতে আমরা আইএমইডিকে শক্তিশালী করতে বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস করছি। প্রত্যেক বিভাগে বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কার্যালয় খোলা হবে। 

মন্ত্রী আরও বলেন, জেলা প্রশাসকদের সহায়তা শব্দটি ব্যবহারে সাবধান হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। কারণ, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা যে সহায়তা করে, সেটার পরিমাণ খুবই সামান্য। আমরা ঋণ নেই, আবার যথাসময়ে সেগুলো পরিশোধ করি। সুতরাং, তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, দাতা সংস্থা না। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসিদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। সেটাকে আমরা হাইলাইট করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়, তার বড় একটা কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটাকে আরও দ্রুত করার জন্য তাদের সহায়তা চেয়েছি। তারা সহায়তা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগের একটি আদেশ অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

এম এ মান্নান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় করার ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রধানের একটা নির্বাহী আদেশ আছে। আইএমইডির স্থাপনা যেন মাঠ পর্যায়ে তৈরি করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা অফিস করব। সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিভাগীয় প্রধানের সহায়তা চেয়েছি। আইএমইডিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যান আছে। এছাড়া গাছ লাগাও, পশুপাখি হত্যা করো না, নদীর ওপর যে পুলগুলো হয় সেগুলার উচ্চতা যেন যথাযথ থাকে, সোজাভাবে রাস্তা করো- প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা যেন মেনে চলা হয় সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি। বিভাগীয় পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় স্থাপনের ফাইলটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা এখনও এগিয়ে চলছে। সময় মতো নিশ্চয় এটা হবে। 

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের গুরুত্ব আছে। তারা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো সাধারণভাবে আলোচনা হয়েছে। যেগুলো গ্রহণযোগ্য তা গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি প্রস্তাবগুলো সাধারণ আলোচনা হিসেবেই গণ্য হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত কমিটিতে ডিসিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রত্যাখ্যান বিষয়েও কথা বলেন মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, দেশে এমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না, যেখানে কোনো জনকল্যাণ নেই। ছোট-বড় সব প্রকল্প গ্রহণ করার আগে স্থানীয়ভাবে মতামত গ্রহণ করা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের মতামত দেন। তাই কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনায় কোনো গুরুত্ব পায়নি। যেহেতু একটি প্রস্তাব উঠেছে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি করে স্থানীয় পর্যায়ে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করব।’

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়াদিকে সামনে রেখে নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়।

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিন ব্যাপী এই সম্মেলনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।

ডিসি সম্মেলন মোট অধিবেশন হবে ২৫টি। এর মধ্যে কার্য অধিবেশন রয়েছে ২১টি। এতে ৫৫টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা অংশ নিচ্ছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সম্মেলনে ২৬৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ের, ১৮টি। এ ছাড়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৬টি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৪টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১২টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।

মাঠ পর্যায়ের কর্ম সম্পাদনে জেলা প্রশাসকরা যেসব আইনগত, প্রশাসনিক, আর্থিক কিংবা অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন সেসবের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলায় বিদ্যমান সম্ভাবনা সম্মেলনের মাধ্যমে সরাসরি তুলে ধরা হবে। এরপর সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সুযোগগুলো কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করা হবে।

সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলন করা হয়ে থাকে।

এবার ডিসি সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। মহামারির কারণে দুই বছর পর এই সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলন শেষ হবে ২০ জানুয়ারি। ডিসি সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। পরে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এরপর ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।

আমারসংবাদ/জেআই