Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বরূপে ফেরেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


স্বরূপে ফেরেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চলছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে এখনো স্বরূপে ফিরতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের কোথাও শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেশি, আবার কোথাও কম।

এদিকে ক্লাসরুমে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও প্রবেশপথের বাইরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা গেছে। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মিরপুর ৬০ ফিট মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের বালক শাখায় দেখা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ক্লাস ছুটি হওয়ার পর সারিবদ্ধভাবে প্রবেশপথের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা ভেতরে জটলা তৈরি করছে। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ছিলো না। পাশেই শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সেদিকে তাদের গুরুত্ব ছিলো না। শুধু তাই নয়, গেটের বাইরেও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জটলা দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালক শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক অর্জুন কুমার পাল বলেন, আজ তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণি ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস ছিলো। প্রতিনিয়ত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ছুটির পর সবাইকে সারিবদ্ধভাবে মূল গেট দিয়ে বের করা হয়ে থাকে। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সেগুলো করা হয়। ‘তবে গেটের বাইরে মূল সড়ক হওয়ায় সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জটলা হয়ে থাকে।’ সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না বলেও জানান তিনি।

মিরপুর-২ ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাধিক ভবন হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা। এই প্রতিষ্ঠানের চলতি বছরের বাণিজ্য বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহফুজুর সরকার শিলা জানায়, ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি নিয়মিত ক্লাসে আসি। যেহেতু পরীক্ষার আর বেশি দিন নেই সে কারণে ভালো প্রস্তুতি নিতে ক্লাস মিস করছি না।

এদিন তাদের ক্লাসে মোট ৩৬ জনের মধ্যে ২৩ জন উপস্থিত ছিলো। মানবিক শাখার আরেকটি ক্লাসে ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জন উপস্থিত ছিলো। সবমিলিয়ে এই স্কুলে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে।

ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ সোহেল বলেন, মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ছেলে-মেয়েদের ক্লাস করানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মেয়েদের, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ছেলেদের ক্লাস শুরু করে ৪টার মধ্যে শেষ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। করোনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছে বলেও জানান তিনি। মিরপুর-২ ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাসে একজন করে বসানো হয়েছে। সেখানে খুদে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে ক্লাস করছে।

এই ক্লাসের শিক্ষার্থী নুসরাত জানায়, তার মা অসুস্থ থাকায় গত কয়েকদিন সে স্কুলে আসেনি। ক্লাস শুরু হওয়ার পর আজ প্রথম এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাসে আসবে বলেও জানায় সে।

এই স্কুলের শিক্ষক শাকিলা সুলতানা জানান, তার ক্লাসে ২৪ জনের মধ্যে মঙ্গলবার ১৯ জন উপস্থিত হয়েছে। শুরুতে উপস্থিতির হার বেশি থাকলেও পরে কিছুটা কমেছে বলে জানান তিনি।

এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি ছাড়া সকল শ্রেণিকে চারটি শাখায় বিভক্ত করে ক্লাস করানো হচ্ছে। এখানে প্রথম শ্রেণিতে ৭২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৮৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯২ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ নিজে বা পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাদের আসতে মানা করা হচ্ছে। এ কারণে ক্লাসে উপস্থিতি কিছুটা কম। যারা অনুপস্থিত থাকছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অসুস্থসহ নানা কারণে তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছে না ছোটদের ক্লাসে উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বড়দের উপস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানান এই শিক্ষক।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া আক্তার শিখা বলেন, ঢাকার অনেক স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তারা স্কুলে আসছে না। শিক্ষার্থীদের স্কুলে না আসার বিষয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। যারা অসুস্থ থাকছে তাদের আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। অন্য বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে পরিমাণে উপস্থিতি রয়েছে তা স্বাভাবিক বলেও জানান তিনি।