Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ছেলেকে কিডনি দিলেন মা

একরামুল ইসলাম, পীরগাছা (রংপুর)

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


ছেলেকে কিডনি দিলেন মা

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের উত্তর তাম্বুলপুর (সওদাগরপাড়া) গ্রামের আব্দুর রশিদ প্রামাণিক ও রীনা বেগম দম্পত্তির ছেলে ইউনুস আলী রিপন (২৫)। তিনি গত পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।

চাকরির তিন বছর পর কাউনিয়া উপজেলার নিলাম খরিদা ভায়ার হাটের রুস্তম আলীর মেয়ে মোছা. রেশমা আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। রিপনের চাকরির প্রথম কর্মস্থল ছিলো দিনাজপুরে এরপর কুড়িগ্রাম ও শেষে গাইবান্ধায় পুলিশ লাইন্সে এসএএফ শাখায় কর্মরত ছিলেন।

কর্মরত থাকাকালীন গত ৮ এপ্রিল হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গাইবান্ধা সিভিল সার্জনের শরণাপন্ন হলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে রংপুর মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। সেখানে দুদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি জানতে পারেন তার ক্রনিক কিডনি ডিজেস হয়েছে। রিপনের পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে প্রথমে হেমোডায়ালাইসিস করতে পরামর্শ দেন, যা অনেক ব্যয়বহুল। আর এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলো না। তারপর গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপারের আর্থিক সহযোগিতায় হেমোডায়ালাইসিস শুরু করেন। পাশাপাশি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি ম্যানেজ করার জোর চেষ্টা করেন।

প্রথমে তার স্ত্রী মোছা. রেশমা আক্তারের সাথে তার কিডনি ম্যাচ করে। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে কিডনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি তার স্ত্রী সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেয় তার স্বামীর পরিবারকে। শেষমেশ তার মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু ছেলের স্ত্রী মোছা. রেশমা বেগমকে লিখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবুও রেশমা বেগম একটা কিডনি দিতে রাজি হননি তার স্বামীকে।

শেষে কারও সাথে কিডনি ম্যাচ না হওয়ায় রিপনের মা মোছা. রীনা বেগম (৫৫) তার একমাত্র ছেলেকে একটা কিডনি ট্রান্সফারের জন্য ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করেন। মায়ের অনুরোধে গত শুক্রবার ঢাকার সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার মায়ের কিডনি অপারেশন করে ছেলের দেহে প্রতিস্থাপন করেন প্রফেসর ডাক্তার কামরুল ইসলাম।

ইউনুস আলী রিপনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মায়ের ঋণ কখনো শোধ হয় না। আমার মা আমার জন্য যা করেছেন তা কোনোদিন শোধ হবে না। যখন কারো কাছে কিডনি পেলাম না, তখন আমার মা আমাকে নতুনভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটা কিডনি দিয়েছেন। আমার ও আমার মায়ের সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন।