Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

আমার সংবাদ ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


করোনায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খোলার কয়েকদিনের মধ্যে মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের  অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মৃত ছাত্রীর নাম রোদেলা। সে মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকার বশির উদ্দিন মোল্লা ও শামসুন্নাহার জ্যোৎস্নার মেয়ে।

এদিকে গোপালগঞ্জে দুই স্কুলছাত্রী এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে গোপালগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থান থেকে ওই শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ওই দুই স্কুলের শ্রেণিকক্ষ দুটি তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত মোনালীসা ইসলাম গোপালগঞ্জ পৌরসভার শিশুবন এলাকার মাসুদ শেখের মেয়ে এবং কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নং ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ছাত্রী তিনা খানম।

মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের  অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মৃত ছাত্রীর নাম রোদেলা। সে মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকার বশির উদ্দিন মোল্লা ও শামসুন্নাহার জ্যোৎস্নার মেয়ে।

বশির উদ্দিনের স্বজনরা জানান, গত তিন দিন ধরে রোদেলা শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও চলছিল। গত বুধবার দুপুরে তার শ্বাসকষ্ট  বেড়ে যায়, এক পর্যায়ে রোদেলা অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত মুন্নু জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। গাবতলী এলাকায় পৌঁছে সে অ্যাম্বুলেন্সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুন্নু জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান  বলেন, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। যে কারণে তাকে কুর্মিটোলা বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, মেয়েটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। তখন তার কোনো শারীরিক সমস্যা ছিলো না। গত তিনদিন ধরে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার ৫৮ জন সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করোনো হয়। তবে তাদের কারও দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রাথমিকের দুই শিক্ষার্থীর করোনায় বন্ধ পাঠদান : গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২ নং বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। ওইদিন অন্যান্য শিক্ষার্থীর সাথে পাঠদানে অংশ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালীসা ইসলাম বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণ শুরু করে। ১৪ সেপ্টেম্বর মোনালীসার মাথা ব্যথা ও জ্বর শুরু হয়। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেনি। পরে ২১ সেপ্টেম্বর করোনার পরীক্ষার নমুনা দেয়া হয় এবং ২২ সেপ্টেম্বর মোনালীসা ইসলামে করোনা পজেটিভ আসে।

আক্রান্ত মোনালীসার মা মিতু খানম বলেন, এতদিন আমার মেয়ে বাড়িতে ছিলো এবং সুস্থ ছিলো। গত ১২ সেপ্টেম্বর মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাই, ১৪ সেপ্টেম্বর সে মাথা ব্যথা ও হালকা জ্বর অনুভব করে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেই। ২১ তারিখে তার জ্বর না কমায় নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করতে দেই স্বাস্থ্য বিভাগে। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে।

এরপর থেকে তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তাকে দুইদিন অক্সিজেন দেয়ার পর এখন কিছুটা শারীরিক উন্নতি হয়েছে। আমাদের পরিবারে অপর কোনো সদ্য করোনায় আক্রান্ত হয়নি।

বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, মোনালীসা ইসলাম সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ক্লাস করে। সেদিন তার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ জ্বর ও মাথা ব্যথা লক্ষ্য করা যায়। এরপর তার নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা পজেটিভ আসে। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারে সাথে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া সে যে কক্ষে ক্লাস করেছিলো সেই কক্ষটি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি শ্রেণির ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে অন্য কোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করাচ্ছি।

অপরদিকে, কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নং ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিনা খানম অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে স্কুরে ক্লাস করে। পরে ওই ছাত্রী ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে।

এরপর থেকে তাকে নিজ বাড়িতে মায়ের সাথে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে তৃতীয় শ্রেণি ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি শ্রেণির ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এ ছাড়া পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির মোট চারজন শিক্ষার্থী ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে আমরা ওই বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলায় ২০১ নম্বর কক্ষ বন্ধ করে দেই।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। আমরা তাকে করোনার চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে সে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন আছে।

এদিকে আমাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। পরে ওই দুই শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কলোনি এলাকায় অবস্থিত বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন।

তিনি বলেন, গত সোমবার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির দুজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজন ছাত্রীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার  তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

করোনায় আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির দুজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজনের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা সবাই মেয়ে এবং তারা ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার সদস্য।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার মমতাজ ফেরদৌস বলেন, বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়।

পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আগামী এক সপ্তাহের জন্য ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেসব শ্রেণির ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।