Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পারিবারিক সাইলোতে খুশি সুবিধাবঞ্চিতরা

বেলাল হোসেন, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে ফিরে

অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৯:৩৫ পিএম


পারিবারিক সাইলোতে খুশি সুবিধাবঞ্চিতরা

নদীমাতৃক এই দেশে উপকূলীয় অঞ্চলের অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বিশেষ সহায়তার অংশ হিসেবে সরকার পারিবারিক সাইলো বিনামূল্যে দিচ্ছেন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটে দুস্থ, অসহায় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে পারিবারিক সাইলো। সারা দেশের তিন লাখ সুবিধাবঞ্চিত পরিবার এই সুবিধা পাবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি সাইলো টেকসই ও খাদ্য সংরক্ষণে নিরাপদ নিশ্চয়তার প্রতীক।

টানা দুই বছর পানি, ধান কিংবা চাল যেকোনো খাবারকে শুষ্ক ও সতেজ রাখতে সহায়ক। আর ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য এই সাইলো বিশেষ আশীর্বাদ স্বরূপ। একটি সাইলোর মূল্য এক হাজার ৮০০ টাকা, যা দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষ পাচ্ছেন বিনামূল্যে। একটা পরিবার এই হাউজহোল্ড সাইলোতে রাখতে পারবেন ৪০ কেজি ধান, ৫৬ কেজি চাল এবং ৭০ লিটার পানি। মাটিতে পুঁতে রেখে খাদ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন উপকারভোগীরা। হঠাৎ বন্যা, প্রকৃতিক দুর্যোগ এবং আকর্ষিক বন্যায় সব কিছুই ভাসিয়ে একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে, আপদকালীন দুর্যোগের জন্য খাদ্য মজুত রাখা এই সাইলোগুলো ত্রাণকর্তার মতো কাজ করবে, যা খাদ্যের অভাব নিবারণে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা।

 মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের আট বিভাগের ২৩ জেলার ৫৫ উপজেলা, সিটি ও পৌরসভায় তিন লাখ পরিবারকে একটি করে পারিবারিক সাইলো দিচ্ছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের তিনটি উপজেলার (শিবালয়, দৌলতপুর  ও হরিরামপুর) ১৩ হাজার পরিবারকে একটি করে বিতরণ করা হয়েছে। শিবালয় উপজেলা কমপ্লেক্সে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত হয়ে সাইলো বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। সরকারের এই সাইলো পেয়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও অসহায় মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। সাইলো পাওয়া কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। 

তারা বলেন, এই সাইলো আমাদের বিপদের বন্ধু। আপদকালীন দুর্যোগে পেটের ক্ষুধা নিবরণে ভূমিকা রাখবে। টেপরা গ্রামের অধিবাসী জামারুন বলেন, দুর্যোগে আমাদের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। খাবার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অভাবে দিন কাটে। লোকে বলছে এই প্লাস্টিকের পটে খাবার রাখলে সহজে নষ্ট হয় না, এটা পেয়ে আমি অনেক খুশি। কারণ এটার মধ্যে জিনিস রেখে বিপদের সময় আমরা খাব। 

পাশেই দাঁড়ানো খোদেজা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে পানি উঠে চাল-ডাল যা থাকে সব ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এই ড্রামে চাল রেখে বন্যার সময় খেতে পারবো। এটা পেতে কোনো টাকা লাগেনি। আমরা গরিব মানুষ; এটা পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়েছে। আর নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, এটা নতুন জিনিস। খাদ্য জমিয়ে রেখে দুর্যোগের সময় চলা যাবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, এই সাইলোগুলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির যেকোনো স্থানে পুঁতে রেখে তার মধ্যে খাদ্য সংরক্ষণ করলেও দুর্যোগ বয়ে গেলেও খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা বীজ ধান সংরক্ষণ করা যায় এর মধ্যে।  

মন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় ও অল্পবৃষ্টিতেই প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলোর মানুষের মুখে হাসি ফুটাবে এই সাইলো। দুই বছর পর্যন্ত খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। 

তিনি আরও বলেন, সারা দেশে এর আগে পাঁচ লাখ সাইলো বিতরণ করেছি। দ্বিতীয় প্রকল্পের অধীন এখন তিন লাখ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এটা মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিতরণ চলছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। 

মানিকগঞ্জ শিবালয়ের এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় আমার সংবাদকে বলেন, এটা সংকটকালীন অসহায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করার প্রকল্প। বিশেষ করে আমাদের নদীভাঙন এলাকার মানুষের জন্য এই খাদ্য সংরক্ষণের সুরক্ষিত সাইলো খুবই কাজ দেবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি দুস্থ অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে এ ধরনের চিন্তাশীল প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, সারা দেশের আট বিভাগের ২৩ জেলার ৫৫ এলাকায় এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের তিনটি উপজেলা (শিবালয়, হরিরামপুর ও দৌলতপুর), টাঙ্গাইলের একটি (ভূয়াপুর), রাজবাড়ীর চারটি (সদর, কালুখালী,  গোয়ালন্দঘাট ও পাংশা),  পালগঞ্জের দুটি (টুংগীপাড়া ও কোটালীপাড়া), সাতক্ষীরার দেবহাটা, জামালপুরের তিনটি উপজেলা, শেরপুরের দুটি, চট্টগ্রামের দুটি, কক্সবাজারে দুটি, নোয়াখালীর দুটি এবং চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে একটি করে, কুড়িগ্রামে দুটি, নওগাঁয় চারটি এলাকায়, রাজশাহী ও নাটোরে একটি করে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে দুটি করে, সুনামগঞ্জে চারটি, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী, পটুয়াখালীর দশমিনা ও রাঙাবালী, বরগুনার আমতলী ও বামনা এবং ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, দৌলতখান, চরফ্যাশন ও মনপুরা।