Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

যানজটে নাকাল নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

অক্টোবর ২২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


যানজটে নাকাল নারায়ণগঞ্জ

শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জের যাতায়াত ব্যবস্থায় চলছে নৈরাজ্য। ফলে এখানকার যানজট নিত্যসঙ্গী। কোনো কোনো সময় ছুটির দিনও নারায়ণগঞ্জের সড়কে যানজট লেগেই থাকে। শৃঙ্খলার অভাব আর অব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়েছে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা।

পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে যেনো জিম্মি নারায়ণগঞ্জবাসী। প্রশাসনও নিরূপায় তাদের কাছে। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের তথ্য মতে, ১৯৭১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বি আরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির সংখ্যা মোট ১১ হাজার ৮০২। 

এরমধ্যে বাসের সংখ্যা ২২০, অটোরিকশা ৬০০১, মোটরসাইকেল ২৮৫, প্রাইভেটকার ১৮৩, পিকআপ ভ্যান ১৯৭, ট্যাংকলরি ২২০, ট্রাক ৮৪০ এবং ট্রাক্টর ৩৫২টি। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটিই ঠিক নেই। রেজিস্ট্রেশন করা তালিকার কয়েকগুণ বেশি পরিবহন চলাচল করছে নারায়ণগঞ্জের সড়কে।

রাস্তাজুড়েই পার্কিং : শহরের রাস্তায় বের হলেই ৫-১০ মিনিটের পথ যানজটের কারণে যেতে সময় লাগে ঘণ্টার সমান। যানজটের অন্যতম কারণ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রাস্তার পাশে বিশাল মার্কেট নির্মাণ হলেও নেই পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। 

যেসব মার্কেটের নিচে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোয় দোকান, শোরুম ও রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেয়া হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয়েছে অসংখ্য প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। নির্দিষ্ট লেনের গাড়িগুলো পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে আটকে থাকে দীর্ঘসময়। পার্কিং করা এ গাড়িগুলো মূলত মার্কেট, শোরুম, রেস্টুরেন্টে আসা গ্রাহকদের।

যত্রযত্র অবৈধ স্ট্যান্ড : শহরে বৈধ তালিকার চেয়ে অবৈধ স্ট্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের যেনো কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে স্ট্যান্ড। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শহরে বৈধ ইজারা দেয়া স্ট্যান্ড রয়েছে মাত্র পাঁচটি। 

এগুলো হলো— কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নিউ মেট্রো হল সম্মুখস্থ সড়কে বাস, বেবি ও টেম্পোস্ট্যান্ড, মীর জুমলা রোড বেবিস্ট্যান্ড (বাস টার্মিনাল সংলগ্ন), জিমখানা সড়ক বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া শহীদ মিনার সংলগ্ন বেবিস্ট্যান্ড।

এছাড়া বাকি সব স্ট্যান্ডই অবৈধ। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায়ই রয়েছে কমপক্ষে আটটি অবৈধ স্ট্যান্ড। যার মধ্যে চাষাঢ়ায় খাজা সুপার মার্কেটের সামনে মুক্তারপুরগামী লেগুনাস্ট্যান্ড এবং বিপরীত দিকে সুগন্ধা বেকারির সামনে সিদ্ধিরগঞ্জের  শিমরাইল মোড়গামী অবৈধ লেগুনাস্ট্যান্ড। চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবের বিপরীতে রয়েছে সাইনবোর্ডগামী একটি অবৈধ লেগুনার স্ট্যান্ড। রাইফেল ক্লাবের পরে আজগর ফিলিং স্টেশনের পাশে রয়েছে অবৈধ একটি সিএনজি ও টেম্পোস্ট্যান্ড। 

সরকারি মহিলা কলেজের সামনে বিকল্প সড়কে রয়েছে ফতুল্লা-পাগলাগামী বেবি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। ২নং রেলগেট সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকের সামনে, অগ্রণী ব্যাংকের সামনে ও কালিরবাজার এলাকায়ও রয়েছে কয়েকটি বেবিট্যাক্সির অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো বছরের পর বছর ধরে বহাল তবিয়তেই রয়েছে।

নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে বাস : নারায়ণগঞ্জ টু চন্দ্র রুটে মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট ও নারায়ণগঞ্জ টু গাজীপুর রুটে নিয়মিতভাবে চলাচল করছে গ্রিন অনাবিল নামের দুই কোম্পানির বাস। রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী উঠানো-নামানো করে আসছে। 

ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে বড়-ছোট দুর্ঘটনা। হাতেগোনা কিছু সংখ্যক বাসের অনুমোদন নিয়ে এক একটি কোম্পানি শতাধিকের বেশি বাস পরিচালনা করছে এ রুটে। শহরের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড না থাকা ও বাসের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অবৈধভাবে রাস্তার দুইপাশে এলোমেলোভাবে বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখায় সরু রাস্তা আরও সরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, গ্রিন অনাবিল পরিবহনের রুট পারমিট সাইনবোর্ড পর্যন্ত। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ফিটনেস ও পারমিটহীন গাড়ি মামলা করে ডাম্পিং ও জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।

সড়কেই টিকিট কাউন্টার : নারায়ণগঞ্জের সড়কেই বসানো হয়েছে বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টার। রাস্তার এক কিনারেই তারা ছোট টেবিল বসিয়ে টিকিট বিক্রি করছেন। যাত্রীরাও রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন, যা যানজট সৃষ্টি ও অনেক সময় দুর্ঘটনারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অবৈধ ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য : শহরজুড়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনা। শহরের জিমখানা মোড়, ডিআইটি, ২নং রেলগেট চত্বর, গলাচিপা, ১নং রেলগেট, কালীরবাজার, চাষাঢ়া মোড়ের সোনালী ব্যাংকের সামনে, খাঁজা মার্কেটের পেছনে, শহীদ মিনারের সামনে ও পাশে, সরকারি মহিলা কলেজের সামনে, চাষাঢ়া রেলস্টেশনের সামনে, চাষাঢ়া চত্বর সুগন্ধা বেকারির সামনে গেলেই দেখা মিলবে অবৈধ ইজিবাইক নিয়মিত যাতায়াত করছে। তারা সড়কেই যাত্রী ওঠানামা করে। সেই সঙ্গে এসব অবৈধ ইজিবাইকের অধিকাংশ চালক অনভিজ্ঞ। অনেক ক্ষেত্রে ইজিবাইক কম বয়সী কিশোর এমনকি শিশুদেরও ড্রাইভিং করতে দেখা যায়।

এসব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শহরের অবৈধ স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো। পাশাপাশি অদক্ষ চালকের বিরুদ্ধেও নজরদারি রয়েছে। ইজিবাইকের বিষয়টি জানা রয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে ইজিবাইক ও অটোরিকশা শহরে প্রবেশ রোধ করতে হলে বেশ কিছু পয়েন্ট যেমন— জেলা পরিষদ, অক্টো অফিস, মণ্ডলপাড়া, মেট্রো হলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে লোক লাগবে। কিন্তু এ ডিউটি কে করবে?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে অবৈধ যান প্রবেশ রোধ করতে হলে অন্তত ৫০ জন লোক দরকার। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে ট্রাফিক বিভাগে লোকসংখ্যা মাত্র ১০০ জন। স্বল্প লোকবল দিয়েই পুরো জেলায় কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাহায্য নেবো। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সড়কে শৃঙ্খলার স্বার্থে বিআরটিএর মাধ্যমে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ এবং মোবাইল কোর্ট। নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট আছে। কেননা এখানে প্রচুর জনসংখ্যা এবং গাড়ির সংখ্যা অনেক। সেই সঙ্গে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া মোড় পর্যন্ত রাস্তাটা ১৪৩ ফুটের মতো চওড়া। অবৈধ স্ট্যান্ড যেগুলো রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কাজ করেছি। এ কার্যক্রম চলমান। ইজিবাইক সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয় আইন এবং বিধি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।’