Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝরেপড়া রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৪, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


 ঝরেপড়া রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

শহরের প্রান্তিক এলাকার শিশুদের স্কুল থেকে ঝড়েপড়া রোধে এবং তাদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজন স্কুলে সুশাসন, আর্থিক সহায়তায় স্বচ্ছতা, উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ।

সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ গত বুধবার ‘রিডিউসিং স্কুল ড্রপআউট ইন আরবান স্লামস অব বাংলাদেশ : ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। 

‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভের (আরডিসি) সহায়তায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪০টি স্কুলে এবং ৬৭৩টি গৃহস্থালিতে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে এই গবেষণাটি পরচালনা করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

এই জরিপে দেখা গেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্কুলেই স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও অভিভাবক-শিক্ষক সমিতি রয়েছে তাদের ২৭.৫ শতাংশের এবং স্কুল কেবিনেট রয়েছে ৫৭ শতাংশের। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট কালেক্টিভের সভাপতি ড. মেসবাহ কামাল। 

তিনি বলেন, এই জরিপমতে, অংশীদাররা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু, বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকার মেয়েশিশুদের, ঝরেপড়ার উচ্চ হার সম্পর্কে সচেতন। তবুও তারা মনে করেন না যে এই হার চিহ্নিত ও প্রতিরোধে তাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। ঝরেপড়া প্রতিরোধে তারা সাধারণ স্কুল-ভিত্তিক উদ্যোগের সুপারিশ জানান। অংশীদারদের মতে— বাসায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দেখভাল করার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে অভিভাবকদের। 

তারা আরও মনে করেন, স্কুলশিক্ষক এবং অভিভাভবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলে যাওয়া এবং পড়াশোনা নিশ্চিত করা। জরিপে অংশগ্রহণকারী অংশীদারদের মতে, স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া প্রতিরোধে শিক্ষক এবং অভিভাবকের নজরদারি প্রয়োজন। এই জরিপের মধ্য দিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে— শিশুর পড়াশোনা নিশ্চিতে স্কুলে অভিভাবক-শিক্ষক সমিতির ভূমিকা আশা করা হলেও বিদ্যমান দায়িত্ব ও ভূমিকা খুবই কম। এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত  তথ্যমতে, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি স্কুলের অধিকাংশ বিষয়ের দেখভাল করেন এবং স্কুলের বিষয়ে অন্য অংশীদারদের প্রভাব প্রত্যাশা করে না। অংশীদাররা আরো জানান, অভিভাবক-শিক্ষক মিটিংয়ে এবং স্কুলের বিষয়ে অভিভাবকরা প্রায়ই আগ্রহী থাকেন না।

জরিপে দেখা গেছে, দীর্ঘকালীন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তাই স্কুলের নিজেদেরও শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিপূরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিকারমূলক শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় পুনরায় ফিরে যেতে পারে। 

গবেষণা প্রতিবেদন মতে, স্কুল পুনরায় চালু হওয়ার ফলে, আর্থিক সহায়তা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান জরুরি। সকল শিক্ষার্থী যেন স্কুলে ফিরে আসে তা নিশ্চিতে স্কুলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। স্কুলের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য ফি এর বোঝা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে মত দেন তারা। প্রতিবেদন পরিবেশনকালে অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল ঝরে পড়া রোধে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা পালনের গুরুত্ব প্রকাশ করেছে এই গবেষণার সুপারিশে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক, মানিক কুমার সাহার সঞ্চালনায় এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন অপরাজেয় বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ওয়াহিদা বানু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দা তাহমিনা আক্তার। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা কর্মকর্তা নিশাত নাজমী এবং সুরভির নির্বাহী পরিচালক আবু তাহের। 

আলোচকরা বলেন, শিশুদের স্কুলে ধরে রাখতে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নও জড়িত। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হাইজিন ব্যবস্থা জোরালো না করলে মেয়েরা স্কুলে যেতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে শিশু নির্যাতন বন্ধেও। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে— স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, অভিভাবক-শিক্ষক সমিতি এবং স্কুল কেবিনেটের সক্ষমতা বৃদ্ধি। অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাভাতা হিসেবে আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা প্রভৃতি।