Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

দর্শনা চেকপোস্টে পরীক্ষা ছাড়াই মিলছে করোনার নেগেটিভ সনদ

ইসলাম রকিব, চুয়াডাঙ্গা

জানুয়ারি ১৫, ২০২২, ১০:৪৫ পিএম


 দর্শনা চেকপোস্টে পরীক্ষা ছাড়াই মিলছে করোনার নেগেটিভ সনদ

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ভারত থেকে আসা এক যাত্রীকে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই দেয়া হয়েছে নেগেটিভ সনদ।

সেই করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আবার টাকা নিলেও তার রশিদ দিচ্ছেন না চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। দর্শনা চেকপোস্টে সব যাত্রীদের করোনার র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। প্রতি জনের কাছ থেকে সে অনুযায়ী নেয়ার কথা ১০০ টাকা। 

তবে, অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে রশিদ দেয়া হচ্ছে না, আবার নমুনা না নিয়েও করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। আবার টাকা নিয়েও করা হয় না নমুনা পরীক্ষা। 

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি দুপুরে ভারত থেকে দেশে আসেন বাংলাদেশি নাগরিক রেখা রানী সাহা। চেকপোস্টে ঢুকেই স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ছিল তার। কিন্তু তা করা হয়নি। 

তিনি বলেন, ‘আমি দর্শনা চেকপোস্টে ঢোকার পর আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নেয়া হয়। কোনো নমুনা ছাড়ায় আমাকে নেগেটিভ রশিদ ধরিয়ে দেয় তারা। পরে ওনারা চলে যেতে বললেন।’ 

বাংলাদেশের আসা অপর দুই নারী যাত্রী বলেন, ‘আমাদের দুজনের থেকে ২০০ টাকা নেয়া হয়েছে। নমুনাও নিয়েছে তবে আমাদের টাকা নেয়ার রশিদ দেয়নি তারা। 

এদিকে দর্শনা চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথের রেজিস্ট্রার খাতায় দেখা যায়, তালিকায় নমুনা না নেয়া রেখা রানী সাহার নামই নেই। তাহলে কিভাবে পেলেন করোনার নেগেটিভ সনদ, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় হেলথ স্ক্রিনিং বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি ইন্সেপেক্টর) জামাত আলীর সাথে। 

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড়ে তিনি নমুনা না দিয়েই চলে গেছেন। আবার কোনো কোনো সময় ভিড়ের কারণে অনেক সময় রশিদ দেয়া সম্ভব হয় না। আবার দু-একটা মিসও হতে পারে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যান্সার, স্কিন, হার্টের রোগী এবং ১২ বছরের নিচে যারা আসেন তাদের ইমিগ্রেশনের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে হয় বলে স্বীকার করেন তিনি। 

স্থানীয় স্বাস্থ্য সচেতনরা বলেন, শুরু থেকে চেকপোস্টের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। নমুনা না নিয়ে করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়া হয়েছে। এভাবে হলে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়বে। দায়িত্বদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেন তারা। 

দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে এক হাজার ৮০৪ বাংলাদেশি নাগরিক, এক হাজার ১২৬ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৩৩৭ বাংলাদেশি নাগরিক ও এক হাজার ৭২৫ ভারতীয় নাগরিক ভারতে গেছেন। এরমধ্যে ১১ বাংলাদেশি এবং ১৩ ভারতীয় নাগরিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রবেশের অনুমতি মিললেও ভারতীয় নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের ভারতে পাঠানো হয়েছে। 

দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই আব্দুল আলীম বলেন, ‘দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। ভারতের কোনো যাত্রীদের করোনা পজেটিভ হলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। দেশের কোনো যাত্রীর পজেটিভ হলে তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়ে থাকে। তবে দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতেই হবে। এখানে কোনো দুর্নীতির সুযোগ নেই। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। 

তবে টাকার বিনিময়ে করোনার সনদ এবং টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা না করেই নেগেটিভ সনদ দেয়া— এটা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের সাথে কথা বললে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ 

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা জামাল শুভ জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান জানান, ভারতে আসা-যাওয়া প্রত্যেক যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে থাহলে এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।