Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শঙ্কায় এনভয়ের বিনিয়োগকারীরা

জাহিদুল ইসলাম

জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৫:৩৫ পিএম


শঙ্কায় এনভয়ের বিনিয়োগকারীরা

ঋণ পরিশোধসহ নতুন প্রকল্প চালু করতে প্রিফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে ৮৭ কোটি টাকা সংগ্রহে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জানিয়েছিল তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইল। যাচাই-বাছাই শেষে গত ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দেয় কমিশন। 

তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও মুনাফা বিগত দুবছর ধরে ক্রমাগত নুিমুখী হওয়ায় নতুন এই শেয়ার ইস্যুতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। তবে এতে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রিফারেন্স শেয়ার নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে এমনই বার্তা কোম্পানির দায়িত্বশীল সূত্রের। 

জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রিফারেন্স শেয়ারের বিষয়ে এনভয় টেক্সটাইলকে অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানা যায়।

এতে বলা হয়, প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহে ইস্যুকৃত প্রিফারেন্স শেয়ারের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এটি হবে সম্পূর্ণ অবসায়নযোগ্য, অ-রূপান্তর ও কিউমিলেটিভ। 

এক্ষেত্রে শেয়ারটির অভিহিত মূল্য ১০ টাকা এবং নির্ধারিত লভ্যাংশ ৭ থেকে ৭.৫ শতাংশ। শেয়ারে সংগৃহীত অর্থ এনভয় টেক্সটাইলের নতুন প্রকল্প ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন বাস্তবায়নে এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। তবে গত দুবছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিম্নমুখী থাকায় এই শেয়ার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। 

আর্থিক প্রতিবেদন ও ডিএসই’ বরাতে বিনিয়োগকারীরা জানায়, ২০২১ প্রতিষ্ঠানটির দায় বেড়েছে কয়েকগুণ। হ্রাস পেয়েছে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি ও অ-চলতি সম্পদের পরিমাণ। এছাড়া রিটেইন্ড আর্নিং, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভি) কমেছে। তবে চলতি ও অ-চলতি দায়সহ বিলম্বিত কর দায় বেড়েছে। 

একইসাথে প্রতিষ্ঠানটি শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ রাখেনি। দায় বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা জানান, ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির চলতি ও অ-চলতি দায় মোট এক হাজার ২৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের চেয়ে এই দায় বেড়েছে ৭৭ কোটি টাকা, যা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৪৬ শতাংশ। 

এছাড়া বিলম্বিত কর বেড়েছে ১৪ কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আবার ইপিএস ও এনএভি বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমে গেছে। সমাপ্ত বছরে ইপিএস ০.৫৬ টাকায় নেমে আসে, যা আগের বছর ছিল ১.৬৩ টাকা এবং ২০১৯ সালে ছিল ৩.৩১ টাকা। 

অপরদিকে এনএভি ২০২০ সালের ৩৮.৪৩ টাকার পরিবর্তে ৩৭.৭৯ টাকায় নেমে আসে।

এদিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ক্রমাবনতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনেরও অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলেন, শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) অনুসারে ডব্লিউপিপিএফে নেট মুনাফার ৫ শতাংশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে নেট মুনাফা ৩০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বিপরীতে এক কোটি ৫২ লাখ টাকা এই ফান্ডে রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা কম রেখেছে। আগের বছর কম রেখেছে ৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। বিগত দুবছরে এই তহবিলে মোট ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা কম রেখেছে। এটি শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এনভয় টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বিপরীতে সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এক হাজার ১১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। 

আইন লঙ্ঘন এবং নেতিবাচক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরও প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে বাজার থেকে প্রায় শতকোটি টাকা তুলে নিলে তা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তাই নতুন করে টাকা উত্তোলনের পরিবর্তে বর্তমান সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে প্রতিষ্ঠান ও এসইসি’র প্রতি প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের বিষয়ে দৈনিক আমার সংবাদ থেকে যোগাযোগ করা হয় কোম্পানি সচিব সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে। তিনি জানান, আমাদের পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। মূলত এটা কমাতেই শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। এই শেয়ারে ফিক্সড ডিভিডেন্ড দেয়া হবে, ফলে পরিচালন ব্যয় কমবে এবং ভবিষ্যতে ভালো ফল আসবে। 

দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। কোভিডের কারণে শেষ দুবছরে আমাদের পারফরম্যান্স কমে গেছে। টেক্সটাইল খাতের ১৪ কোম্পানির কেউ ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। অনেকেই ‘বি’ ক্যাটেগরিতে নেমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠিত পুরোনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে  গেছে। এর মাঝেও আমরা ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে রয়েছি।

সঞ্চয় ও উদ্বৃত্তের চেয়ে ব্যাংক লোন বেশি থাকা নিয়ে বলেন, এটা আসলে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, এটাকে ওই অর্থে ধার বলা যায় না। যখন ক্যাপাসিটি বাড়ে, তখন ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফাইন্যান্সে যেতে হয়। আমাদের ক্যাপাসিটি তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে ইয়ার্ন আছে। এর ক্যাপাসিটিও দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন ব্ল্যান্ডেড ইয়ার্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। তাই আমাদের দক্ষতা যখন বাড়বে, তখন ওয়ার্কিং ক্যাপিটালও বাড়বে। কিন্তু পরবর্তীতে এটা কমে যাবে। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য আমাদের বেশিরভাগ হচ্ছে শর্টটার্ম লোন।

এ ব্যাপারে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘এনভয় টেক্সটাইলের ডিভিডেন্ড কস্ট ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। তাদের এভারেজ বরোয়িং কস্টের চেয়ে এটা কম হওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল কস্ট কমবে। পাশাপাশি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহার ও নতুন প্রজেক্ট নেয়ায় কোম্পানির প্রোফিটিব্যালিটি সামনে বাড়বে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন বলেই আমরা আশা করি। তবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা কেউই নিশ্চিত নই। অনেক কাজই ভালোর জন্য করা হয়; তারপরও ভালো হয় না। তাই বিনিয়োগকারীদের বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে হবে।’ 

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাস্টমার কমপ্লেইন অ্যাড্রেস মডিউল আছে, সেখানে কমপ্লেইনের হার্ডকপি বা সফ্ট কপি দিতে পারে বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগ পেলে আমরা দেখব। তবে আগে জেনারেল মিটিংয়ে প্রশ্ন করতে হবে। সেখানে যদি বিনিয়োগকারী সন্তুষ্ট না হন, তখনই আমাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।’