Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইলিশ রপ্তানি করতে চায় সরকার

মার্চ ৩০, ২০২২, ০৭:২৫ পিএম


ইলিশ রপ্তানি করতে চায় সরকার

‘ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই’ বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সব মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ পৌঁছে দিতে চাই।

এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২২ উদযাপন করবে সরকার।  

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ইলিশ মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি।

বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ফলে ইলিশ দেশের জি আই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে। প্রায় ছয় লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহণ, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ  উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২২ উদযাপন করা হবে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, জাটকা ধরলে সর্বনাশ’। এ বছর দেশের ইলিশ সম্পৃক্ত ২০টি জেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২২ এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

এছাড়া গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বড় পরিসরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধনী সমাবেশ ও নৌর্যালি অনুষ্ঠিত না হলেও বৃহস্পতিবার ৩১ মার্চ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন এবং তৎসংলগ্ন পদ্মা নদীতে নৌর্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

এ কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ভোক্তাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা জাটকা ধরা, কেনা-বেচা এবং খাওয়া থেকে বিরত থেকে জাতীয় মাছ ইলিশের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন বলে জানান তিনি। 

মন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান আইন সংশোধন করে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময় নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস করা হয়েছে এবং জাটকার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি করা হয়েছে। বিগত ২০০৮ থেকে ২০০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছপল দুই লাখ ৯৮ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদন ও প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ফলে ইলিশ আজ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে এসেছে। 

তিনি বলেন, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল নিয়ে নির্বিচারে জাটকা নিধন। এই অবৈধ জাল নির্মূলে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট চার সপ্তাহ দেশের ১৭টি জেলায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময়ে মোট ৩০ দিনে মোট ৮৮৪টি মোবাইল কোর্ট ও তিন হাজার ৫৪৬টি অভিযান পরিচালনা করে চার হাজার ২১৭টি বেহুন্দি জাল, ৪৬৯ দশমিক ৫২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৯ হাজার ৫৬২টি অন্যান্য জাল যেমন বেড়জাল, চরঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল ইত্যাদি অটক করা হয়েছে। 

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান সরকার জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিগত তিন লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৬ টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে চার মাসে ৫৬ হাজার টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছে। যা বিগত বছর থেকে প্রায় ১০ হাজার টন বেশি ছিল। 

প্রথম কিস্তি মার্চ এপ্রিল মাসের জন্য তিন লাখ ৯০ হাজার ৭০০ টন জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩১ হাজার ২৫৬ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। ২০২১ সালে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪ জন জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ১১ হাজার ১১৯ টন চাল দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ হাজার জেলে পরিবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ভিজিএফ চাল পেয়েছে। ভিজিএফ সহায়তা দেয়া।  

পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার জেলেকে তাদের চাহিদানুযায়ী নানা প্রকার উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। হাট বাজারে জাটকা বিক্রি বন্ধ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব ড. ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, জাটকা বিক্রি বন্ধের জন্য দেশের হাট বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সবাকে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জেলেদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে বলে জানান তিনি।