Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্ত্রীর হাতে ‘জ্বীনের বাদশা’ খুন

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ৩, ২০২২, ০৫:৪৬ পিএম


স্ত্রীর হাতে ‘জ্বীনের বাদশা’ খুন

ঢাকা থেকে ভোলাগামী লঞ্চে কথিত ‌‘জিনের বাদশা’ ওরফে জাকির হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় তার সাবেক স্ত্রী মোছা. আরজু আক্তারকে (২৩) গ্রেফতার করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আরজু আক্তার ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার ভারটিকটা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে পিবিআইয়ের সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকার পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, গত ৩১ জুলাই জাকির হোসেনের ১ম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, জাকির ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের দিকে স্ত্রী আরজু বেগমকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিবাহের পর জাকির কিছুদিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী আরজুর সঙ্গে বসবাস করে এবং একপর্যায়ে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের দিকে আরজু বেগমকে ডিভোর্স দেয়।

কাজের সুবাদে জাকির তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী মিনারার (৩০) বাসায় থাকতেন। গত ২৯ জুলাই সকাল ৭টার দিকে জাকির লঞ্চে করে বাড়িতে আসবে বলে জানান। পরে ওইদিন তাকে বারবার ফোন দিলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ঠিক সময়ে বাড়িতে না আসায় প্রথম স্ত্রীর সন্দেহ হয় এবং আত্মীয় স্বজনদের জানান।

পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করলে একপর্যায়ে সদরঘাট নৌ থানা জানায়, গত ২৯ জুলাই রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে সদরঘাটে থাকা এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের ৩য় তলার মাস্টার কেবিনের ভেতরে খাটের নিচে জাকিরের মরদেহ পাওয়া যায়। লঞ্চের কয়েকজন স্টাফের মাধ্যমে তার প্রথম স্ত্রী জানতে পারেন, কেবিনে তার স্বামীর সঙ্গে কফি কালারের বোরকা পরা মুখ ঢাকাবস্থায় এক নারী ছিলেন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

গ্রেফতার আসামি জানান, জাকির হোসেন বাচ্চু দুই বছর আগে জিনের বাদশা পরিচয়ে আরজু আক্তারকে ফোন দেন। তার পর থেকে আরজু আক্তারের সঙ্গে পরিচয়, প্রেম ও পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জাকির হোসেন বাচ্চু আসামি আরজু আক্তারকে জিনের বাদশা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে এবং তাকেও এ কাজে পারদর্শী করে তোলেন।

আরজুর সঙ্গে বিয়ের পরও জাকির একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। জিনের বাদশার পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে জাকির যে অর্থ উপার্জন করতেন তা অনৈতিক কাজে খরচ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে আরজুর সঙ্গে জাকিরের ব্যাপক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। তাই গত প্রায় ৫ মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রী আরজু আক্তারকে তালাক দেন জাকির।

তালাক দেয়ার পরও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রাখার সময় জাকির আবারও একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া করে এবং সে বিষয়টি আরজুর কাছে ধরা পড়ে। এতে আরজু আক্তার আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয় এবং জাকির হোসেন বাচ্চুকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

মামলার ঘটনার আগের দিন রাতে জাকির তার এক পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে রাত যাপন করেন। বিষয়টি আরজু আক্তার বুঝতে পারেন। এরপর হত্যার ঘটনার দিন ২৯ জুলাই জাকিরের ঢাকা থেকে লঞ্চে গ্রামের বাড়ি ভোলা যাওয়ার বিষয়টি আরজু জানতে পারেন। এরপর আরজু জাকিরকে লঞ্চের একটি কেবিন ভাড়া করে তাকেও বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন।

জাকির ও আরজুর বাড়ি একই এলাকায় পাশাপাশি গ্রামে হওয়ায় তিনি ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার সময় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে লঞ্চে ওঠেন। কেবিন ভাড়া নেয়ার সময় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য রাখেনি। লঞ্চে ওঠা থেকে নামা পর্যন্ত আসামি আরজু বোরকা পরে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরজু আক্তার আরও জানান, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তারা সদরঘাট থেকে ভোলার ইলিশা যাওয়ার জন্য লঞ্চে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরজু দুধের সঙ্গে ৫টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে লঞ্চে ওঠেন। আর জাকির এক বাটি রসমালাই কেনেন। লঞ্চে ওঠার ঘণ্টা খানেক পর আরজু ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুধ জাকিরকে খাইয়ে দেন। দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জাকির অচেতন হয়ে গেলে ওড়না দিয়ে তার হাত এবং পা বেঁধে ফেলেন। পরে অন্য একটি ওড়না দিয়ে জাকিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

হত্যার পর জাকিরের মরদেহ কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। লঞ্চটি ভোলার ইলিশা ঘাটে পৌঁছালে আরজু নেমে যান। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ইলিশা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। লঞ্চের স্টাফরা ওই কেবিনটি তিন জন বাচ্চাসহ দুইজন নারীকে ভাড়া দেন। লঞ্চটি ঘাট ছেড়ে আসার প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাদের সঙ্গে থাকা একটি বাচ্চা খাটের নিচে গেলে একজন নারী খাটের নিচ থেকে বাচ্চাটিকে আনার সময় মরদেহ দেখে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় লঞ্চের স্টাফদের নজরে আসে।

আমারসংবাদ/এসএম

Link copied!