Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হলো

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫, ১০:৫৭ এএম


কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হলো

 

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের  মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে।

 তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে তার মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি রিভিউ আবেদন করবেন কি-না বা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। জবাবে কামারুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জানাবেন।

এর আগে বেলা দেড়টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ও আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি কারাগারে পৌঁছায়। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবউজজামান, কোর্টকিপার সঞ্জয় সরকার ও ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলাম সেগুলো পৌঁছে দেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কপিটি আইজিপি (প্রিজন) এর বরাবরে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে মৃত্যু পরোয়ানার অনুলিপি।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ট্রাইব্যুনাল-২-এর ৩ বিচারপতি মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম। পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। আইন অনুসারে এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার জন্য ১৫ দিনের সময় পাচ্ছেন আসামিপক্ষ। তারা যদি এ সময়ের মধ্যে রিভিউ করেন তাহলে ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। রিভিউ নিষ্পত্তির পর বা রিভিউ খারিজ হলে এ প্রক্রিয়া ফের শুরু হবে।

এরপর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন। ক্ষমা না চাইলে ফাঁসি কার্যকর করার শেষ ধাপগুলো সম্পন্ন করা হবে। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চার বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করেন। রাত পৌনে ৮টায় আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালের রায় ও অন্যান্য ডকুমেন্টস, যেগুলো আপিল শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায় গ্রহণ করে মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া শুরু করেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ৬ জুন রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি।
 
২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে। পরে ২ আগস্ট একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে।
 
একাত্তরে ময়মনসিংহের আল-বদর প্রধান কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তকরণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাজা দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। অন্য দুটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরেকটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।