Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বসন্ত বরণে মেতে উঠেছে তরুণ-তরুণীরা

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫, ০১:৫০ পিএম


বসন্ত বরণে মেতে উঠেছে তরুণ-তরুণীরা

 

ঋতু বৈচিত্রের এ দেশে বাঙালীর মনে-প্রাণে প্রতিটি ঋতুর প্রতিই থাকে গভীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা। এগুলির মধ্যে অন্যতম ঋতুরাজ বসন্ত। বুকে সেই ভালবাসাকে ধারণ করে শুক্রবার  রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ বসন্ত বরণে মেতেছে। কৃষ্ণচূড়া-পলাশের রাঙা হাসি, গানে-নাচে এবং ভালোবাসায় ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে সব বয়সের নারী-পুরুষ। রঙ্গিন সাজে বর্ণিল এ উৎসবে মেতেছে তরুণরা। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সবুজ শ্যামল এই প্রকৃতি। লাল, হলুদ, বেগুনি নানান ফুলের সমাহার। চারিদিকে শুধু ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধ।

অন্যদিকে শনিবার থেকে সবাই পালন করছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। রাজধানীর শাহবাগ, চারুকলা, বই মেলা, টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি এবং উদ্যানে উদ্যানে নর-নারীরা বাসন্তী সাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। রাস্তার দু’ধারে বসেছেন অনেক চুড়িওয়ালী। অনেক নারী ফুলের তৈরি গলার মালা, হাতের চুড়ি, মাথার ব্যান্ডসহ নানা অলংকারাদি নিয়ে ঘুরছেন বিক্রির জন্য। ক্রেতারাও কিনেছেন তাদের মনের মতো ডিজাইনে গড়া এসব জিনিস। বাসন্তী পোশাকের সঙ্গে মানানসই ফুল আর চুড়ি না হলে চলে না। শাহবাগ থেকে শুরু করে টিএসসি, কলা ভবন এলাকায় বসেছে প্রায় শ’খানেক চুড়ির দোকান। এসব চুড়ির প্রায় সবই কাচের।

এর মধ্যে রেশমি ও কাচের খাঁজকাটা চুড়ি তরুণীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সকালে বসন্ত বরণের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় এসরাজ বাদনে। সকাল সাড়ে ৯টায় বসন্ত শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় বসন্ত উৎসবের প্রথম পর্ব। বসন্ত উৎসবের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বকুলতলায় মূল মঞ্চে দলীয় নৃত্য, একক আবৃত্তি, সংগীতসহ বিভিন্ন আয়োজন ছিল পুরো সকাল জুড়ে। সকাল ৯টায় বসন্ত কথন পর্বে সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, বসন্ত উৎসবে মানুষের বাগানে উপস্থিত হয়েছি। সবার পরনে বাসন্তি রঙের পোশাক। সবার মনে বাসন্তি প্রকাশ, প্রাণের উচ্ছাস।

যতোদিন এই অসামপ্রদায়িক উৎসবের আয়োজন চলবে, ততোদিন কোনো সামপ্রদায়িক অপশক্তি বিজয়ী হতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ, চারুকলা অনুষদের ডিন আবুল বারক আলভি, পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্থপতি সফিক উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। ‘বসন্ত কথন’ শেষে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাতে ফুলের রাখি পরিয়ে দেন, কপাল রাঙিয়ে দেন আবীরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসন্ত বরণের কনসার্টের আয়োজন করে। সকাল ৮ টা থেকে রাত পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যাগে শিক্ষার্থীরা ভাস্কর্য চত্ত্বরের সামনে কৃষ্ণ চূড়ার ছায়ায় নাচ, গান, আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছে বসন্ত বরণ উৎসব।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবস্থল পরিনত হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায়। মিলন মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করতে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন জবির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উৎসবে মেতেছিল পাজ্ঞাবি আর বাসন্তী রঙ্গয়ের শাড়ী পড়া শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বসন্তকে বরণ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ উপলক্ষে বাংলা বিভাগের উদ্যোগে নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে মহুয়া তলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বেলা ১১ টায় পরে একটি বসন্ত র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালী, কবি খালেদ হোসাইনসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ ও হলের উদ্যোগ বসন্ত বরণ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চলে। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবেন শম্পা রেজা, নাশীদ কামাল, রেজওয়ান আলী, শিউলী ভট্রচার্য, মুরাদ, নীলয় প্রমুখ।

এছাড়া উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে, পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, লক্ষ্মীবাজার ও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে সারাদিনই ছিল বাসন্তী আয়োজন। এছাড়া বিকালে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ছায়ানটে সকাল আটটায় সঙ্গীতের মাধ্যমে বরণ করা হয়েছে পহেলা ফাগুনকে।