ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসেন মাজেদ
নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৭:০০ পিএম
পাইলস রোগটির সাথে আমরা হাজার বছর ধরে পরিচিতি। এটা এক প্রকার ধাতুগত পীড়া। মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের চারপাশের শিরাগুলো ফুলে মটরদানা কিংবা আঙ্গুরের মতো কিংবা ছাগলের বাঁটের মতো ছোট ছোট টিউমার হলে তাকে অর্শ বা হেমোরয়েড বলে। অর্শ প্রধানত দুই প্রকার যথা— অন্তর্বলি ও বহির্বলি, এছাড়া এক প্রকার অর্শকে মিশ্রবলি বলে। যেটি উভয় স্থানে থাকে।
বয়স : ৩০-৬০ বছর বয়সের ভেতর এই রোগের প্রকোপ সব চেয়ে বেশি। ২০ বছর বয়সের নিচে পাইলস খুব একটা দেখা যায় না। পাইলস শনাক্ত করা খুব সহজ কাজ নয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কেবল যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে পাইলস শনাক্ত করতে পারেন। কখনো কখনো টয়লেটে বসিয়ে কোথ দিতে হয়ে। আমাদের কাছে বিভিন্ন রোগী আসিয়া বলে আমার পাইলস। তখন রোগী লক্ষণ দেখি বুঝি পাই এনাল ফিশার, পলিপ অথবা ফিস্টুলা অর্থাৎ মলদ্বারের যেকোনো রোগকে সবাই পাইলস হিসেবে জানেন। কিন্তু এইখানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। এই রোগ মহিলাদের চেয়েও পুরুষের কিছুটা বেশি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বা কোনো না কোনো সময় পাইলসের সমস্যায় ভোগেন।
কারণ : নানা কারনে অর্শ হতে পারে। প্রধান কারণ লিভারের মধ্যে এবং ধমনীতে রক্তাধিক্য হলে অর্শ হয়। এ ছাড়া অলস প্রকৃতির লোকের সারা দিন বসে বসে থাকা, ঘিয়ে ভাজা বা অধিক মসলা যুক্ত রান্না খাওয়া, অধিক কোথ দিয়ে পায়খানা করা। ঘন ঘন জোলাপের ওষুধ খাওয়া মলদ্বারের কৃমির অত্যচারের জন্য বারবার খোটলানো, কাম রিপুর উত্তেজনার কারণে এবং মা-বাবার এই রোগ থাকলে সন্তানেরও অর্শ হয়।
লক্ষণ : সময় সময় মলদ্বার চুলকায়। ধপ ধপ করে ব্যথা করে এবং জ্বালাপোড়া করে। কাটা পোটার মতো বেদনা এবং কোমরে বেদনা। মল ত্যাগকালে মলদ্বার থেকে রক্তস্রাব হয়। কোনো কোনো সময় রক্তস্রাব হয় না।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা : তিনটি বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে, ১. আহার ও ভ্রমণ সম্বন্ধে নিয়ম পালন , ২. নিয়মিত পায়খানা পরিষ্কার হওয়ার ব্যবস্থা, ৩. অর্শের স্থানটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা।
এলোপ্যাথিক চিকিৎসা : অর্শের কোনো সুচিকিৎসা হয় না। অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো গতি নেই। কিন্তু তাতেও রোগ নির্মূল হতে পারে না। অতএব প্রথম থেকেই অর্গানন অনুসরনকারী হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যে পুরাতন রোগ বীজ রোগীর দেহে বর্তমান রোগের সৃষ্টি করেছে সেই ধাতুগত দোষ দূরিকরণার্থে উপযুক্ত ওষুধ সেবন না করলে শুধু অস্ত্রোপচার বা এলোপ্যাথি ওষুধ খেলে কোনো লাভ হবে না।
হোমিও প্রতিবিধান : রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। আবার অনেক চিকিৎসক বের হয়েছে নিজেদের অর্শ-ভগন্দেরের চিকিৎসক বলে থাকে। কিন্তু ওইসব ডাক্তাররা রোগীদের ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আবার মলম বা ক্রিম লাগাতে রোগীদের বলে। যেটা সাময়িক নিরাময়। কিন্তু পরে জঠিল আকার ধারণ করে। এরকম অনেক চিকিৎসক চট্টগ্রাম ফেনীসহ অনেক জায়গায় এসব রোগীর অপচিকিৎসা দিয়ে থাকে। এজন্য যেসব ডাক্তার নিজেদেরকে হানেমানের উত্তনসূরি বলে থাকে, তারা যেন রোগীর সঠিক লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তা হলে হোমিওতে অর্শরোগীর চিকিৎসা আল্লাহর রহমতে দেয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যেসব মেডিসিন নির্বাচন করেন যেমন— এলুমিনা, এলো, আর্সেনিক এল, এন্টিম ক্রোড, এমন কার্ব, নার্কস ভোম, সালফার, ইস্কিউর্লাস হিপ, কলিন সোনিয়া, এসিডি নাইট্রেকাম ইত্যাদিসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে। এসব ওষুধ বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরো জঠিল আকারে পৌঁছতে পারে।
লেখক : স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি, কো-চেয়ারম্যান হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ
আরও পড়ুন-
*হূদরোগ নিরাময়ে হোমিও পরামর্শ
*যে কারণে শীতকালে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
*শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যেসব খাবার