মার্চ ২১, ২০২০, ১০:৫৭ এএম
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সুযোগে অনেক ভুল তথ্যও ছড়াচ্ছে। মনে রাখতে হবে, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। ভাইরাসটি নতুন।
এ নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি করোনা বিষয়ে কী করবেন, কী করবেন না, তা তুলে ধরেছে। এবার সে সব বিষয় নিয়ে লিখেছেন— জিয়া উল ইসলাম
করোনায় তথ্য গোপনে দেশেরই ক্ষতি
লি ওয়নেলিয়াং, উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ।’ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই করোনা ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থলে কাজ করছিলেন চিকিৎসক লি। তখন তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত সাতজনকে দেখতে পান।
এর কিছুদিন পর এই কথা তিনি অন্য চিকিৎসককে এই রোগের ব্যাপারে বলে সতর্ক করেছিলেন কিন্তু সেই কথা চীনের পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তারা চারদিন পর জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে ও সে সামাজিকভাবে ক্ষতি করছে এবং গুজবের অভিযোগ আনা হয়। এরপর তাকে সর্তক করা হয়।
কিন্তু দেখা গেল, এর ১০ দিন পর ২০ জানুয়ারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন জরুরি অবস্থা জারি করে। তারপর এর কথা তো সবার জানা। এই করোনা ভাইরাস ধংসলীলা চালিয়েছে চীনেম তেমনি ইতালিতেও কিন্তু এই করোনা ভাইরাস নিয়ে সে দেশের সরকার তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
আর এ জন্য আজকে চীনের থেকেও বেশি মৃত্যু হচ্ছে এই করোনা ভাইরাসের কারণে ইতালিতে। এই পর্যন্ত তিন হাজারে বেশি মারা গেছে। তাই সব দেশের ও জনগণের উচিত তথ্য গোপন না করে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা ।
যেভাবে সেরে উঠলেন এলিজাবেথ
৩৭ বছর বয়সি নারী এলিজাবেথ স্নাইডার তিনি থাকেন আমেরিকায় সিয়াটলে। ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগে আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনা ভাইরাসে। ভুগেছেন কয়েকদিন। এরপর সুস্থও হয়ে উঠেছেন।
সেই এলিজাবেথ যুক্ত হয়েছিলেন মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনে। সবার প্রতি তার পরামর্শ একটাই, আতঙ্কিত হবেন না। এলিজাবেথ জানিয়েছেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি তার বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টি ছিলো।
এর তিনদিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি অফিসে কাজ করছিলেন তিনি। এমন সময় অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। প্রচণ্ড ক্লান্তি, সারা গায়ে ব্যথা আর মাথা ব্যথার সঙ্গে জ্বরও ছিলো তার। কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
এলিজাবেথ জানান, জ্বর বাড়তে বাড়তে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়। রাত নাগাদ তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ ডিগ্রিতে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে এলিজাবেথও শঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
তবে তার শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণগুলো করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মিলছিল না। কফ, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা বা শ্বাসনালীতে কোনো সমস্যা ছিলো না তার।
এলিজাবেথের ধারণা, ওই পার্টি থেকেই হয়তো তিনি অসুস্থ হয়েছেন। কেন না, সেদিন পার্টিতে আসা অন্যদেরও একই সময়ে একই ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয় বলে জানতে পারেন তিনি।
এদিকে, অসুস্থবোধ করায় অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করার চেষ্টা করেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না। সেই টেস্টের পর চিকিৎসকরা এলিজাবেথকে জানান, তিনি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত নন। বরং তার লক্ষণগুলো বার্ড ফ্লুর সঙ্গে মিলে যায়।
সেই অনুযায়ীই স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেন তারা। কিন্তু বার্ড ফ্লুর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে তার। এরপর আবার অনলাইন টেস্টের জন্য আবেদন করেন এলিজাবেথ।
এবারে নাক থেকে সংগৃহীত নমুনা তিনি পাঠিয়ে দেন পরীক্ষার জন্য। সেই পরীক্ষার ফলই জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এরপরই তিনি নিজেকে ঘরে আটকে ফেলেন, অর্থাৎ সেলফ আইসোলেশনে চলে যান।
পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ওষুধ সেবন করতে থাকেন। সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগেনি এলিজাবেথের। দিন কয়েকের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসেন তিনি।
এলিজাবেথ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দয়া করে কেউ আতঙ্কিত হবেন না। আপনি যদি তুলনামূলক তরুণ ও সুস্থ হন এবং অসুস্থ হলে নিজের যত্ন নিতে পারেন, তাহলে আমার বিশ্বাস আপনি সুস্থ হবেনই।
আমি নিজেই তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।’এলিজাবেথের পরামর্শ, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে আপনি যদি সামান্য অসুস্থও বোধ করেন, তাহলে যত দ্রুতসম্ভব একজন চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন ও পরীক্ষা করান। সবসময় হাত পরিষ্কার রাখুন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সেই সঙ্গে পরিবারের বয়স্কদের নিরাপদে রাখুন, কারণ ঝুঁকিটা তাদেরই বেশি।
ভাইরাসের সত্য-মিথ্যা
এ কটু পরপর পানি, লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত পানি বা গরম পানি পান করলে কিংবা গলা ভেজালে অথবা রসুন মুখে রাখলে করোনা গলা থেকে ফুসফুসে যায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের একটি তথ্য ঘুরছে। এই তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে পুষ্টিবিদের মতে, কুসুম গরমপানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২. গরমে করোনার সংক্রমণ হবে না, এই ধারণাও ভুল। আবহাওয়া ও পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। করোনা যেকোনো তাপমাত্রায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে তুলনামূলকভাবে গরম এলাকায় শীতপ্রধান এলাকায় থেকে কিছু কম।
৩. থার্মাল স্ক্যানার কেবল শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করে। এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কাজেই থার্মাল স্ক্যানারে ধরা না পড়লে করোনা হয়নি, এমন মনে করা ঠিক নয়। সাধারণত উপসর্গ দেখা দিতে দুই থেকে ১০ দিন সময় লাগে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
৪. ফেস মাস্কে করোনা প্রতিরোধ করা যায়, এটিও একটি ভুল ধারণা। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পর মুখ ও মাস্কের মধ্যে বেশ খানিকটা ফাঁকা থাকে, যা ড্রপলেট (মুখ নিঃসৃত ক্ষুদ্র তরল কণা) প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। এন-৯৫ মাস্ক বাতাসের ৯৫ শতাংশ শূন্য দশমিক ৩ মাইক্রন বা তার চেয়ে বড় কণা আটকাতে পারে। তার মানে এই নয় যে, এটি পরলে করোনা প্রতিরোধ করা যাবে। কোভিড-১৯ রোগী এবং রোগীর পরিচর্যাকারী, সেবাদানকারী, হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক পরা জরুরি।
৫। বারবার হাত ধোয়া ও হাত নাকে-মুখে- চোখে না লাগানোই সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবান-পানি সবচেয়ে কার্যকর। করোনা ভাইরাসের বাইরের আবরণটি চর্বির। কাজেই ক্ষারযুক্ত যেকোনো সাধারণ সাবান এ ক্ষেত্রে কার্যকর। কারণ, ক্ষারে চর্বির আবরণটি ভেঙে যায়, হাত ভাইরাসমুক্ত হয়। সাবান-পানি না থাকলে অ্যান্টিসেপটিক হ্যান্ডওয়াশ বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে পারেন।
৬। সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি-কাশি কিংবা কথা বলার সময় মুখ থেকে নিঃসৃত তরল কণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে যেকোনো বস্তু বা তলে লেগে যায় করোনা ভাইরাস। সে জায়গা স্পর্শ করলে হাত থেকে ভাইরাসটি নাক-চোখ-মুখ দিয়ে সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারে। তাই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। অন্তত তিন ফুট দূরে থাকতে হবে।
হোম কোয়ারেন্টাইন পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা
পরিবারের একজন সদস্য যখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, তখন অন্যদের যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির করে বসে থাকতে হবে এমনটা ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ঠিকই অব্যহত রাখতে পারবেন।
তবে এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষটির দেখাশোনার ভারও তাদের নিতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে পুরো ঘরই। রোগীর উপসর্গগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ডাকতে হবে ডাক্তার।
যদি উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন কারো সাথে দেখা করতে হয়, তাহলে সে সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। যদি সেই ব্যক্তির দেহ-নিঃসৃত তরলের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে অবশ্যই হাতে গ্লাভস ব্যবহার করবেন। কাজ শেষে এই মাস্ক ও গ্লাভস অবশ্যই ফেলে দেবেন। সামান্য কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য সেগুলো পুনরায় ব্যবহারের কথা মাথায়ও আনা যাবে না।
পরিবারের বয়স্ক সদস্য এবং যাদের বিভিন্ন রোগবালাই আগে থেকেই আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে, হতে পারে মৃত্যুও। তাই কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে তাদের না যাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার গাইডলাইন
১. বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন।
২. আলোবাতাসের সুব্যবস্থাসম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন। সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত এক মিটার (তিন ফুট) দূরে থাকুন। রাতে পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন।
৩. আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান এবং ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
৪. স্তন্যদায়ী মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন।
৫. বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার প্রয়োজন হলে, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
৬. কাশি, সর্দি, বমি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
৭. সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে-গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।
৯. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
১০. কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার/সোর্জিক্যাল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক/বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং ওপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন।
১১. ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। আপনার খাওয়ার বাসনপত্র— থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন
কোনো ব্যক্তি যখন সকল প্রকার সামাজিকতা থেকে দূরে থেকে ঘরের মধ্যে অবস্থান করেন তখন সেটি স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত নাও হতে পারেন। আবার হয়তো তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ ভ্রমণও করেননি। বরং, এই ভাইরাস যেনো ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য নিজেকে আলাদা রাখুন।
লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন আসলে কী?
লকডাউন
লকডাউন শব্দটি নতুন আসায় এর বাংলা প্রতিশব্দ এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে এর অর্থ ‘অবরুদ্ধতা’ বলছেন অনেকে। তবে লকডাউন শব্দটির ব্যাখ্যায় ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গা থেকে বের হতে না দেয়া কিংবা ওই জায়গায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়াই হলো ‘লকডাউন।’
এছাড়া অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে কোনো নিদিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করাই ‘লকডাউন।এর শাব্দিক অর্থ তালাবদ্ধ করে দেয়া। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্স বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধে আছি, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’
পাশাপাশি তিনি পাঁচটি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যে রয়েছে— এমন কাজ যা বাসায় বসে করা যায় না এবং যা থামিয়ে রাখাও যাবে না, সুপার মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করা, বাসার সন্তান ও বৃদ্ধদের খোঁজে কিংবা পরিবারের জরুরি প্রয়োজনে, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু সময় ব্যায়াম এবং জরুরি ওষুধপত্র কেনা।
এসব কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়াকেই ফ্রান্সে ‘লকডাউন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো ব্যতীত বাইরে বের হলে জেলসহ জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়।
কোয়ারেন্টাইন
যেসব ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু তিনি সুস্থ হতে পারেন, আবার নাও পারেন, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে কিন্তু কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে। কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়।
কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালে যদি আপনাকে কারো সাথে দেখা করতেই হয়, তাহলে অবশ্যই ফেস মাস্ক ব্যবহার করবেন। সেই সাথে যিনি আপনার সাথে দেখা করতে আসবেন তাকেও বলবেন একই কাজ করতে।
আইসোলেশন
আইসোলেশন হচ্ছে, কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে বা ধরা না পড়লেও উপসর্গ থাকে তখন তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বিশেষ এই পদ্ধতিতে কোনো রোগীর হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র অন্য কারো সংস্পর্শে যাবে না।
জীবাণু যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য রোগীকে যত রকম ব্যারিয়ার দেয়া সম্ভব, আইসোলেশনে তা দেয়া হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য, আর কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য। আইসোলেশনে কতদিন রাখা হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখা হয়।
আমারসংবাদ/এআই