Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

শিশুদের হূদরোগে হোমিও নিরাময়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

জুলাই ১৯, ২০২০, ০৬:৪৪ পিএম


শিশুদের হূদরোগে হোমিও নিরাময়

হার্টের সমস্যা বর্তমান একটি অন্যতম আতঙ্কের নাম। বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশের মানুষ যে দুটি রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয় তার একটি হলো ক্যান্সার, অন্যটি হলো হূদরোগ বা হার্ট ডিজিজ।

অথচ অন্যান্য জটিল রোগের মতো হূদরোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। বিশেষ করে সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যেও হার্টের বড় রকম সমস্যা দেখা যায়।

তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন এ সমস্যার যথাযথ হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসাও আছে, বিভিন্ন শ্রেণির লোকেরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে প্রতিহিংসাবসত হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে নানা রকমের বদনাম ছড়ায়, তার মধ্যে একটি বড় অপপ্রচার হলো হোমিওপ্যাথি ঔষধ দেরিতে কাজ করে।

অথচ হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন, হূদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্টিক, আলসারসহ অনেক রোগের জন্য মানুষেরা ৫০ বছর ও অন্যপ্যাথি ওষুধ খেয়ে পুরোপুরি রোগ মুক্ত হতে পারে না, দুর্ভাগ্যজনক হলেও কেউ বলে না যে, অন্যপ্যাথি ওষুধ বিলম্বে কাজ করে।

হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে প্রচলিত বদনামগুলোর মার্কেট পাওয়ার জন্য একটি মূল কারণ হলো নাম ডাকওয়ালাা দক্ষ হোমিওচিকিৎসকের যথেষ্ট অভাব, বলা যায় খুবই অভাব। হোমিওচিকিৎসা বিজ্ঞানীদের হূদরোগ চিকিৎসায়, বিবরণী পড়লে হতাশ প্রাণে আশার আলো দেখা দেয়।     

বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ও দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য সম্পাদক ডা. এমএ মাজেদ লিখেন...
একটি সুস্থ শিশু নিয়ে আসে আশার আলো। কিন্তু, সৌভাগ্যের দীপশিখা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশু ও তার পরিবারকে নিয়ে যায় হতাশার সমুদ্রে, সেও পরবর্তীতে জাতির জন্য বোঝা হয়ে ওঠে। শিশুর জন্মগত হূদরোগ এমনই একটি রোগ যার শুরু মায়ের গর্ভে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০০০ জন জীবিত শিশুর মধ্যে ৮ জন শিশু জন্মগত হূদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই ১০০০ জনের ৮ জনের মধ্যে আবার ২-৩ জনের রোগের লক্ষণ জন্মের প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই নানাবিধ উপসর্গসহ প্রকাশ পায়।

বাকিদের পরবর্তীতে জীবনের যেকোনো সময় তা প্রকাশ পেতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্মগত হূদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আজকে আমরা শিশুর জন্মগত হূদরোগ নিয়ে আলোচনা করব।

* জন্মগত শিশুর হূদরোগ কী
মায়ের গর্ভে থাকাকালে শিশুর হূদযন্ত্র তৈরি ও বিকশিত হওয়ার প্রাক্কালেই যদি কোনো প্রকার ত্রুটি হয় এবং শিশু সেই হূদযন্ত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, তবে তাকে জন্মগত হূদরোগ বলে। অনেক সময় একে শিশুর হার্টে ফুটো বা ছিদ্র আছে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়।

* জন্মগত শিশুর হূদরোগ হওয়ার কারণ
জন্মগত শিশু হূদরোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় ও গর্ভ পরিকল্পনাকালীন সময়ে বিভিন্ন ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, রেডিয়েশন, মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ, প্রভৃতি রোগ, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা সংক্রমণ ইত্যাদির সাথে শিশু হূদরোগের যোগসূত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও জেনেটিক কিছু রোগ যেমন— ডাউন সিনড্রোম, টারনার সিনড্রোম নিয়ে জন্মানো শিশুরা হূদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।

* লক্ষণসমূহ
জন্মের পর থেকেই ঘন ঘন ঠাণ্ডাকাশি ও শ্বাসকষ্ট, মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে অসুবিধা ও অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের আঙ্গুল ও ঠোঁটে নীলাভ ভাব, ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধির অপ্রতুলতা ইত্যাদি।

* মায়েদের লক্ষণীয়

* শিশুটির জন্মের পর পরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না

* ভীষণ রকমের কালচে বা নীলাভ ভাব তার ঠোঁটে বা চামড়ায় দেখা যাচ্ছে কি না

* শিশুটির হার্টবিট যদি অস্বাভাবিক রকমের কম বা বেশি হয় অথবা ছন্দ্যোবদ্ধ না হয়ে অস্বাভাবিকভাবে চলে

* বাচ্চাটি জন্মগ্রহণ করার পর মায়ের দুধ পান করার সময় হাঁপিয়ে যায় কি না

* অল্প অল্প দুধ পান করে ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিয়ে আবার কিছু সময় পর দুধ পান করছে কি না

* দুধ পান করার সময় শিশুটি অস্বাভাবিক রকমের ঘামছে অথবা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে

* শিশুটি অন্যসব বাচ্চাদের মতো ওজনে বাড়ছে না

* জন্মের পর থেকেই শিশুর বারবার ঠাণ্ডা কাশি লেগেই আছে কি না এবং সে কারণে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে।

* শিশুটি কান্নার সময় অস্বাভাবিক রকমের কালো হয়ে যায় এবং একইসাথে শ্বাস কষ্ট হয়। একটু বড় বাচ্চারা খেলার সময় একটু দৌড়াদৌড়ি করলেই কালো হয়ে যায়, শ্বাস কষ্ট হয় এবং উপুড় করে শুইয়ে দিলে বা বড় বাচ্চারা হাঁটু গেড়ে বসলে তাদের স্বস্তি আসে। বড় বাচ্চাদের কখনো কখনো বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও হতে পারে।

* জন্মগত সমস্যা
হূৎপিণ্ড একটি পেশিবহুল অঙ্গ। দুটি অলিন্দ এবং দুটি নিলয়— সব মিলিয়ে হূৎপিণ্ডের চারটি ভাগ। অনেক সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুর হূৎপিণ্ডের অনেক রকম গঠনমূলক সমস্যা থেকে যায়। হূৎপিণ্ডের মধ্যে ফুটো থাকা, হূৎপিণ্ডের গঠন ঠিকঠাক না হওয়ার মতো নানা সমস্যা থাকে। এই সমস্যাকে বলা হয়, জন্মগত সমস্যা। ফলে হূৎপিণ্ড দিয়ে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হয়। জন্মের সময়ে শিশুর হূৎপিণ্ডে হওয়া সমস্যাকে টিজিএ বলা হয়।

* হূৎপিণ্ডের সমস্যার কারণে যেসব রোগ দেখা দেয়

* কাওয়াসাকি ডিজিজ
এই রোগ হলে জ্বর হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ হলে যেমন জ্বর হয়, এই শিশুদের অনেকটা সে ধরনের জ্বর আসে। সঙ্গে গাব্যথা হয়। এর পাশাপাশি, চোখ ও জিভ ভীষণ লাল হয়ে যায়।

* রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ
হূৎপিণ্ডের সমস্যার ফলে এই রোগ হয়। এই রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, গাব্যথা। সঙ্গে হাঁপানি। এই রোগটিই বর্তমানে শিশুদের মধ্যে বেশি হচ্ছে।
 
* মায়ো কাউটিস
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণও জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। যদিও এই রোগের ফলে শরীর নীল হয়, ওজন কমে যায়, খেতে খেতে বাচ্চা হাঁপিয়ে যায়। তবে জন্মগত সমস্যার ক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি থাকে। সুস্থ হওয়ার পর শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। তবে জ্বর বা অন্য কোনো সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। একইসঙ্গে হার্ড গেম যেমন— ভলি, বাক্সেটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা থেকে দূরে থাকতে হবে।

* জন্মগত হূদরোগ প্রতিরোধে করনীয়
গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগে মাকে হাম (রুবেলা) প্রতিরোধ করে বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এই জন্য গগজ ওহলবপঃরড়হ দিতে হবে, গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।

* হোমিও সমাধান
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় হূদরোগ একেবারে তুচ্ছ, হোমিওপ্যাথি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, রোগ এবং রোগের কারণ থাকে মানুষের স্তরে যাকে জীবনীশক্তি বলা হয়, পক্ষান্তে শরীরে এবং মনে আমরা রোগ নামে যা দেখি, এগুলো আসলে রোগ নয় বরং রোগের ফলাফল মাত্র। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, যেহেতু রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য মানুষের শক্তি স্তরে কাজেই রোগ নিরাময়কারী ওষুধকেও হতে হবে শক্তি ওষুধ।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ নির্বাচন করে থাকে, ক্র্যাটিগাস, অরম মেটালিকাম, এডোনিস, ভান্যালিস, অর্জুনআর্নিকা, মন্টেনা, গ্লোনয়িন, ভ্যানাডিয়ম, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, বেলাডোনা, স্পাইজেলিয়া, এনথেলমিয়া, ন্যাজাট্রাইপুডিয়ামস, নাক্স ভুমিকাসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে।

লেখক— সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কার্যনির্বাহী পরিষদ
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র  
স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
মোবাইল- ০১৮২২৮৬৯৩৮৯

আমারসংবাদ/এসটিএম