আব্দুল্লাহ আল জাবেদ:
আগস্ট ১৯, ২০২১, ১২:২০ পিএম
মাথা ও ঘাড় বরাবর ব্যথাই মাথাব্যথা নামে পরিচিত। ব্রেইন ও হাড়ের আবরণ তার চারপাশের রক্তনালি, নার্ভ তাদের আবরণ, মাথার চামড়ার নিচের মাংসপেশি, চোখ, সাইনাস, কান ও ঘাড়ের মাংসপেশির ইত্যাদির প্রদাহ এবং টানই মূলত মাথাব্যথার প্রধান কারণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রায় দেড়শ প্রকারের মাথাব্যথা রয়েছে। প্রতিটি মাথাব্যথার আলাদা আলাদা সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে মাথাব্যথা মানেই হাইপ্রেশার বা ব্রেইনের ক্যানসার। আসলে সেটা সত্য নয়। হাইপ্রেশারের মাথা জাতীয় কোনো লক্ষণ সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই হাইপ্রেশারকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার। আর ব্রেইনের নিজস্ব কোনো পেইন ফাইবার নেই।
১.টেনশন টাইপ হেডেক: সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার নাম হলো টেনশন টাইপ হেডেক ।টি.টি. এইচ. সারা মাথাজুড়ে হয় এবং খুব একটা তীব্র না হলেও সারাক্ষণ থাকে। মনে হয় কে যেন একটা রশি বা গামছা দিয়ে পুরো মাথাটা শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। চলাফেরায় এ ব্যথা বাড়ে না। সকালের দিকে এই ব্যথা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। ক্লান্তি, অবসাদ, ঘুমের ব্যঘাত এই ব্যথা বেড়ে যায়।
২.মাইগ্রেন: দ্বিতীয় যে মাথাব্যথা হলো মাইগ্রেন। ছেলেদের থেকে মেয়েরা এতে বেশি ভুগে। সাধারণত মাথা একপাশে এ ব্যথা অনুভুত হয়। এটি টি.টি. এইচ এর মতো সারাক্ষণ চিনচিন করে নয় বরং থেমে থেমে হয় এবং সেটা তীব্র থেকে তীব্রতর। মনে হয়, কে যেন কিছুক্ষণ পর পর হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে মাথা বরাবর। আলোয় ও শারীরিক পরিশ্রমে এ ব্যথা বাড়ে তাই রোগী চুপচাপ অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত মাইগ্রেন পেইন থাকতে পারে। কিছুটা জেনেটিক বলে পরিবারের কারো থাকলে মাইগ্রেন হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩.ক্লাস্টার হেডেক: সাধারণত চোখ বরাবর এ ব্যথা হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় হয়, এবং দিনে কয়েকবার হয়। ক্লাস্টার হেডেক এ চোখ লাল হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের দৃষ্টিতেও সামান্য ব্যঘাত হয়। দিনে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর হয়, নির্দিষ্ট সময় নিয়ে থাকে তাই একে ক্লাস্টার হেডেক বলে।
৪.সাইনাস: নাকের দুপাশের হাড়ে ও কপালের হাড়ের ভেতর ছোট ছোট কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। এগুলোকে সাইনাস বলে। এতে বাতাস থাকে এবং এই বাতাস ব্রেইনের ভারের সাম্যতা রাখে। হাড়ের ভেতর এসব সাইনাসের আবরণে প্রদাহ হলে বাতাস ও সর্দি জমে থাকে। এর ফলে সাইনাসগুলো বরাবর তীব্র ব্যথা হয়। এটাই সাইনুসাইটিস ব্যথা নামে সাইনাস হেডেক নামে পরিচিত। এ ব্যথার সঙ্গে সর্দি হাঁচি কাশি থাকে।
৫.ক্রনিক ডেইলি হেডেক: মাসের প্রতিদিনই চিন চিন করে মাথাব্যথা হওয়াকে ক্রনিক ডেইলি হেডেক বলে। মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্যের জন্যে প্রায়ই মাথাব্যথা হয়। একে হরমোনাল হেডেক বলে। সাধারণত মাসিকের সময় বা আগে পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ও হরমোনের তারতম্যের জন্যে মাথাব্যথা হয়।
৬.সেক্সুয়েল হেডেক: স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময় বা আগে ও পরে মাথাব্যথা হতে পারে। এর নাম সেক্সুয়াল হেডেক। সাধারণত প্রচণ্ড এক্সারশনে এ ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের ব্যথা হয়। এ ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না। এবং সেরে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। তবে শারীরিক মিলনে হঠাৎ যদি কখনও তীব্র মাথাব্যথা হয় সেই সঙ্গে বমি ভাব, খিচুনি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, কারণ রক্তনালির ত্রুটির (এনিউরিজম/ম্যালফরমেশন) জন্যে এ ব্যথা তীব্রতর হয় এবং এ থেকে অনেক সময় স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হতে পারে। এক্সারশন ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মিলনে ছন্দপতন থাকলেও অনেক সময় মাথাব্যথা হয়। সাধারণত মেয়েদের এ ব্যথা বেশি হয়। এ ব্যথাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। অথচ স্বামী-স্ত্রীর শুধুমাত্র মিলনের ছন্দপতনে ধীরে ধীরে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং ডিভোর্স হয়ে যায়।
*মাথাব্যথা উপশমের সেরা উপায়
দিনের পর দিন যদি মাথাব্যথা বাড়তেই থাকে, তাহলে চিকিৎসকেরপরামর্শ নেওয়া উচিত। আবার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাথাব্যথার ওষুধও খাওয়া উচিত নয়। তবে ঘরোয়া উপায়েও মাথাব্যথা দূর করা যেতে পারে। রইলো তেমন কিছু টিপস-
মাথার দুই পাশে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ: মাথার দুই পাশ ও ঘাড়ের কাছে যদি কিছুক্ষণের জন্য আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করা যায়, তবে আরাম পাওয়া যাবে ও ক্লান্তি দূর হবে। ক্লান্তির কারণে মাথা ধরলে এই ম্যাসাজ খুব কাজে দেয়। আঙুলের ডগায় এসেনশিয়াল অয়েল লাগিয়ে কপালে আর রগে ম্যাসাজ করলে একটু বেশিই আরাম হয়। ল্যাভেন্ডার বা পেপারমিন্টের মতো কোনো সুগন্ধি তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথার যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যায়।
ঘরে বেশি আলো রাখবেন না: অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তাই মাথা যন্ত্রণা করলে ঘরের আলো কমিয়ে দেওয়াই ভালো। আধো-অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে মাথাব্যথার উপশম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কম্পিউটার-মোবাইলে চোখ নয়: অনেক বাচ্চারই এখন মাথাব্যথার সমস্যা বাড়ছে। অনলাইন ক্লাসের কারণে দিনের অনেকটা সময় কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকে বাচ্চারা। কম্পিউটার স্ক্রিন, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন থেকে যথাসম্ভব বাচ্চাদের দূরে রাখা চেষ্টা করুন। শুধু বাচ্চা নয়, বড়দেরও মোবাইল ও কম্পিউটার থেকে দূরে তাকা উচিত। আর বাইরে বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারলে ভালো।
রঙ চায়ে আদা ও মধু মিশিয়ে খান: মাথাব্যথা বাড়লে চা-কফি খাওয়া যেতে পারে। চা বা কফিতে উপস্থিত ক্যাফিন মাথাযন্ত্রণা কমাতে ভালো কাজ করে। আর যদি রঙ চা আদা ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে মাথা যন্ত্রণায় আরাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমারসংবাদ/এজে