Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বাবার জন্যই পৃথিবীটা এত সুন্দর

মেহরুন নেসা আনিকা

অক্টোবর ৭, ২০২০, ০৭:৫০ এএম


বাবার জন্যই পৃথিবীটা এত সুন্দর

এক রাতে আমার ভীষণ জ্বর এলো, দুই তিন টানা জ্বর, বাবা নামক এই মানুষটা পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর সেই দিন এলো যেদিন বাবাই আমাকে নিয়ে বসুন্ধরা ঘুরতে নিয়ে গেলো সেই দিনটাই ছিলো আমার জীবনের সেরা একটা দিন বাবা মানে কখনো কখনো মনে হয়েছে ভীষণ স্বচ্ছ একটা আয়না যেখানে তার সামনে দাঁড়ালে তার ভেতরটাতে শুধু আমি আমাকেই দেখতে পাই ।

বাবা কি কখনো কখনো আমি বুঝে উঠতেই পারি না। বাবাকে খুব ছোট বেলা থেকেই খুব একটা কাছে পাইনি। বাবা শব্দটা কখনোই ছোট মনে হয়নি আমার কাছে। বাবা বরাবরই বিস্তৃত একটা শব্দ। যার মানে এখনো আমার অজানা। আমার কাছে বাবা মানে কখনো কখনো মনে হয় বিশ্বস্ত একটা কাঁধ যেখানে নির্ভয়ে চেপে বসা যায় শৈশবে আর বড় হাওয়ার সাথে সাথে চাপিয়ে দেয়া যায় একটা একটা করে দুঃখ কষ্ট দায়িত্বে বোঝা।

সারাদিন অফিস করে রাতে কখন বাসায় আসতো টের পেতাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখতাম মাথার কাছে একটা বনরুটি আর দুটো কলা রাখা থাকতো তখন মনে করতাম যে মানুষটা সকালে আমার জন্য মাথার কাছে বনরুটি আর কলা রেখে যায় সেই মানুষটাই আমার বাবা। বাবা কখনো আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে পারিনি। সপ্তাহের একটা অফ ডে তে কখনো সাহস করে বলতে পারিনি ‘বাবা আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে?’।

এক রাতে আমার ভীষণ জ্বর এলো, দু’তিন দিন টানা জ্বর, বাবা নামক এই মানুষটা পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর সেই দিন এলো যেদিন বাবাই আমাকে নিয়ে বসুন্ধরা ঘুরতে নিয়ে গেলো সেই দিনটাই ছিলো আমার জীবনের সেরা একটা দিন। বসুন্ধরায় রাস্তায় একটা টাইলস কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, যাতে একটা টিউলিপ ছিলো। সেটা বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। রোজ সকালে উঠে এটাকে আমি সাবান পানি দিয়ে মুছে দিতাম।

তারপর একদিন এলো বাবাকে রেখে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসতে হলো। বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বললো ‘মা, আমি তোমার টাইলস যত্ন করে রেখে দিয়েছি’ আমার বাবার কাছে সেই টাইলস এখনো আছে। টাইলসের মতনই যত্নে রেখেছে আমার সব ভালো লাগার জিনিস। আমার বাবা যেন একটা সুপারম্যান। তার সুপারম্যান এর মতন সব ঠিক করে দেওয়ার সুপার পাওয়ার আছে। তার যেন সুপাম্যানেরই মতো একটাই পোশাক আর একটাই শর্ত সবাইকে ভালো রাখা। বাবা সবসময় নিজে পেছনে থেকে আমাদের সামনে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে চিরকাল। কখনো পিছনে তাকাতেই হয়নি আমাদের। তাকালে হয়তো দেখতে পেতাম কেউ কত অদম্য মনোবলে ঠেলে দিচ্ছে সামনের দিকে।

বাবার মতন কিছুই আগলে রাখতে জানিনা, বাবার প্রতি ঈদে দেওয়া নতুন টাকা যত্ন করে রেখে দিয়েছি। বাবাকে একদিন এমন অনেকগুলো টাকা জড়ো করে ভরকে দেবো বলে। বাবাকে বলতে পারিনি কখনো কতটা ভালোবাসি, বলতে পারিনি কাউকে এত ঋণী করে যেতে নেই । বলতে পারিনি তোমার এত ভালোবাসা আর আত্মত্যাগ এর দাম দেওয়ার মতন যোগ্য কখনো হতে পারবো না বাবা।তোমাকে বলা হয়নি তোমাকে ভীষণ মিস করি।তোমাকে বলা হয়নি তোমার মুখে মা শব্দে কেমন অনুভব করি।

বলা হয়নি কতটা ভালোবাসা চেপে রেখেছি তোমার জন্য, পেছন থেকে কাঁধে হাত দিয়ে বলতে পারিনি ‘বাবা তুমি আমাদের জন্য কত করো’ কখনো ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা কিছুই প্রকাশ করা হবে না হয়তো। তবে এমন একটা দিন আসুক যেদিন পৃথিবীর সব সুখ জড়ো করে এনে বাবার পায়ের কাছে এনে দিতে পারবো। বাবা হয়তো জানবেও না কখনো তার মেয়ে কতটা ভালোবাসা গোপন করে গেছে তার কাছ থেকে, হয়তো একটা গল্পও জানবে না যেখানে রাজা তার রাজকন্যাকে নিয়ে শুধু একদিন নয়, রোজ ঘুরে বেড়ায়। বাবারা কখনো না বলা কথা টের পায় না। টের পায় হ্যালো বলার সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে গলাটা কেঁপে উঠলো কি-না, অসুস্থ শোনালো কি-না, কিছু লাগবে কি-না। ভীষণ ভালোবাসি বাবা, কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি। বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা থাকলো। ভালো থাকুক সব বাবারা। ভালো থাকুক বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসা পরিত্যক্ত বাবারা । ভালো থাকুক সেই সকল সুপারম্যানরা যারা চিরকাল শুধু সন্তান এর কথাই ভেবে এসেছে। ভালো থাকুক ‘বাবা’ ডাক টা।