Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঢাকায় টাকা ওড়ে

মাহাথির মোবারক

ডিসেম্বর ২৪, ২০২০, ১২:১৫ পিএম


ঢাকায় টাকা ওড়ে

জীবন সে এক আজব জিনিসের নাম। জীবনটা কারো কাছে অনেক সুখের একটি জিনিস। আবার কারো কাছে জীবন মানে যন্ত্রণা।পৃথিবীর একেক মানুষ হয় একেক রকম। আর তাদের প্রত্যেকের জীবনও হয় ভিন্ন ভিন্ন। কারো জীবনে সুখের সীমা থাকে না। আবার কারো কারো জীবনে  দুঃখ কষ্টের কোন শেষ থাকে না।  

 সুখটাকে মনে হয় যেন সে এক রুপকথার গল্প। কারণ সুখ তো শুধু বড়লোকের জন্য। আর গরীবের জন্য কষ্ট আর কষ্ট। তাদের কাছে সুখ বলতে এক বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়া। আর কোন ভাবে জীবন যাপন করা। ঠিক তেমনি একটি কষ্টের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছি। যা রাশেদ নামের একটি ছোট্ট ছেলের পরিবারে এসেছে। পড়তে গেলেই চোখের পানি চলে আসে। ছোট্ট ছেলে রাশেদ। মায়ের দুঃখ কষ্ট দেখে আর সজ্জ করতে পারলো না সে । তাই এ ছোট্ট বয়সেই সংসারের দিকে তাকিয়ে তার চাচাতো ভাই ফারুকের সাথে ঢাকায় চলে আসলো। 

আজ একবছর হয়ে গেলো তার বাবা তাদেরকে রেখে অন্য জায়গায় নতুন একটি বিয়ে করে নিয়েছে। তারপর। থেকে তাদের আর কোন খোঁজ খবর নেয় না। তাই তাদের সংসার চলাতে আজ ছোট্ট রাশেদ বাড়ি ছেড়েছে।  পরিবারে আছে  রাশেদ সহ তার একটি ছোট বোন। বোনের বয়স মাত্র ৭ বছর হবে। আর রাশেদের বয়স ১৩ পার হয়ে ১৪ বছর পরেছে কেবল। তার বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে তার মা অনেক কষ্টে অন্যের বাড়ী কাজ কর্ম করে তাদের সংসারটা এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। রাশেদকে স্কুলে পড়াচ্ছিলো। 

কিন্তু এখন আর পড়ানো সম্ভব না। দিন দিন যেন তাদের অভাব অনটন  বেড়েই চলছে। আর ছোট বোনটা এখনো অনেক ছোট বলে পড়তে দেয় নি তার মা। এভাবেই চলতে থাকে তাদের ছোট্ট সংসার। কিন্তু আজ অনেক দিন ধরে তার মা অসুস্থ। অসুস্থতা ধীরে ধীরে  ভেরেই চলছে তাই এখন আর অন্যের বাসায় কাজ করতে যেতে পারে না।

ঘরে চাল ডাল খাবারের কোন কিছুই নেই। এভাবে আর কত সজ্জ করে থাকা যায়? তার মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো  রাশেদ। ডাক্তার বলে দিয়েছে তার মা আর হয়তো বাচবে না। যদি তার মাকে বাঁচাতে চাই তাহলে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। মায়ের এই অসুস্থতা দেখে রাশেদ তার মাকে না জানিয়েই তার এক প্রতিবেশী ভাইয়ের সাথে ঢাকা চলে গেলো। সে লোক মুখে অনেক শুনেছে ঢাকায় না কি টাকা উড়ে। তাই রাশেদ মনে মনে ভাবলো  যেভাবেই হোক না কেন আমি আমার মায়ের চিকিৎসা করবোই ইনশাআল্লাহ!  এ বলে রাশেদ চলে গেলো তার ভাই ফারুকের সাথে। 

এক দিন দু’ দিন করে তিন দিন পার হয়ে যায় কিন্তু রাশেদকে দেখতে না পেরে তার মা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লো। কয়েক দিন পর তার মা জানতে পারলো তার আদরের রাশেদ ফারুকের সাথে ঢাকায় চলে গিয়েছে কাজ করার জন্য। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া নেয়। থাকার কোন ভালো ব্যবস্তাও নেই।  রাতে গাছের নিচে বা ব্রীজের নিচে শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেয়। তারপরও বাড়ীতে আসে না। রাশেদের মা কত করে বলেছে বাবা আমার টাকা লাগবে না। আমাকে  ডাক্তার দেখাতে হবে। তুমি বাড়ী ফিরে আসো তাহলে তোমার মুখটা দেখেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো। কিন্তু রাশেদ ফিরে আসে নি। 

বারবার চিঠি পাঠানোর পরও রাশেদ ফিরে আসেনি। কয়েক মাস পার হওয়ার পর যখন রাশেদের অল্প কিছু টাকা জমা হলো। তখন রাশেদ টাকা গুলো দিয়ে ছোট বোনের জন্য সুন্দর একটা লাল  জামা কিনে নিয়ে আসলো বাড়ীরতে।বাড়িতে আসার পর দেখতে পেলো তাদের বাড়িতে অনেক মানুষ ভীর করে আছে। 

সামনে অগ্রসর হয়ে দেখতে পেলো যে মায়ের জন্য রাশেদ আজ ঢাকা গিয়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে  কাজ টাকা নিয়ে এসেছে সেই মাকে মানুষেরা মাত্র কবরে দাফন করে বাড়ীর দিকে ফিরছে। ছোট্ট বোনটিকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো রাশেদ। শেষ মেষ মায়ের মুখটাও দেখার ভাগ্য হলো না ছোট্ট ছেলে রাশেদের।

আমারসংবাদ/এমআর