ফখর উদ্দিন রাজী (রায়হান)
মে ২, ২০২১, ১০:০০ এএম
বাড়ির বউরা বলে
আজকাল কাজের মেয়ে পাওয়া যায়না।
কাজ করতে করতে
তাদের সোনার দেহ, হয়ে গেছে কয়লা।
গালে হাত দিয়ে বসে বসে তারা ভাবে,
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
পান্তা খেতে দিলেই বিনা মাইনেতে,
কাজের মেয়ে পাইতাম।।
হঠাৎ করেই দেশটার যে কি হ'ল,
নদীর তীর,পুকুর ডোবা,অলিগিলি সব গারমেন্টসে ভরে গেল।
বাসাবাড়ির কাজের মেয়েগুলো,
সবাই সেলাই দিদিমণি হয়ে গেল।।
মাস গেলেই মাইনে, যদিও কম,
তবুও অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা ভালই ছিল,
মাংস পোলাও না হউক, লাঠি ঝাটা আর পান্তার বদলে তারা,
খেতে পারছিল দু'বেলা দু'মুঠো গরম ভাত।।
পরাধিনতার শিকল ভেঙ্গে,
তারা পেয়েছিল স্বাধিনতার স্বাদ।
কাজের ফাঁকে টিকেট কেটে সিনেমা দেখার,
প্রেমিকের হাত ধরে পারকে বসে গল্প করার।
বাড়ির মেমসাহেবদের খুব রাগ হত তাদের দেখে,
সেলাই দিদিমণিদের এত সুখ তাদের সহ্য হত না।
হাতগুলো নিসপিস করত,
কতদিন কাজের মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে মারতে পারে না।
পারেনা গরম খুন্তি দিয়ে স্যাকা দিতে,
মেরে অজ্ঞান করে বাথরুমে আটকে রাখতে,
পারেনা গরম পানি শরীরে ঢেলে দিতে,
বাড়ির সাহেবরা আড়ালে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে।
রাতদিন খেটে খুটে,
ন্যায্য পারিশ্রমিক না পেয়েও তারা ভাল ছিল।
কিন্তু একের পর এক গারমেন্টসে অগ্নিকাণ্ড
আর বড় বড় ভবনগুলো ধসে পরছিল।
শত শত সেলাই দিদিমণিকে লাশ বানিয়ে দিল,
কি বিভৎস্য, কি কুৎসিত একেকটা লাশ।
অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে একেকটা প্রাণ,
পথে বসেছে একেকটা পরিবার।
গ্রামে খেতে পড়তে না পেরে,
চখে মুখে অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে,
লঞ্চে চড়ে, ট্রাকে চড়ে, ট্রেনে চড়ে, বাসের ছাদে চড়ে,
তারা আসে শহরে।
তাদের ঠাঁই হয় কোন বস্তিতে,
যেখানে পানি নেই, বিজলী বাতি নেই,
চারিদিকে দুরগন্ধ, ময়লা, পঁচা পানি,
একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে, সারারাত ঘুমাতে পারে না।
অনেক আশা করে পথ চেয়ে
বসে থাকে গ্রামে রেখে আশা
অসুস্হ বাবা, মা, ছোট ছোট ভাই বোন
কবে মাস শেষ হবে, শহর থেকে কিছু টাকা আসবে।
টাকা পেলেই বাবার অসুধ কেনা হবে,
ছোট ভাই বোনকে স্কুলে ভরতি করা হবে,
বাজার থেকে আনা হবে মোটা চাল, শুটকি মাছ, কাঁচা মরিচ,
পেট পুড়ে খাবে গরম ভাত।
কিন্তু সাভারের একেকটা সেলাই দিদিমণির দগ্ধ লাশ,
একেকটা স্বপ্নের অপমিত্যু।
মরণের আগপরযন্ত বাবা মায়ের থেমে থেমে কান্না,
ভুলতে পারবে কি তারা, সন্তানের এই বিভৎস্য মিত্যুর কথা?
যাদের ঘামের বিনিময়ে অনেকে,
আজকে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন,
দামি গাড়ি দাবরিয়ে বেড়ান,
ছেলের জন্য, মেয়ের জন্য, বউয়ের জন্যজন্য আলাদা আলাদা গাড়ি কিনেন।
যাদের জন্য শান্ত ফাঁকা ঢাকা শহরটা,
আজকে গাড়ির শহর, জ্যামের শহর,
যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আপনারা
লন্ডনে, কুয়ালালামপুরে বাড়ি কিনেন।
ছুটি কাটাতে চলে যান পাতায়া শহরে,
আপনাদের ব্যাংক একাউন্টগুলো,
যাদের পরিশ্রমে ফুলে ফেঁপে উঠেছে,
তাদের কথা একটু ভাবুন, তাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা একটু ভাবুন।
না হলে যে তারা আবার গ্রামে ফিরে যাবে,
কারো বাড়িতে ঘর মুছবে,রান্না করবে।
পান্তা খেয়ে ধান ভানবে ঢেঁকিতে,
অবার হয়ে যাবে কারো বাড়ির ঝি।
আপনাদের সেলাই মেশিনগুলো আর চলবে না,
পাবেননা খুঁজে আর কোন সেলাই দিদিমণিকে,
পয়সার অভাবে কিনতে পারবেননা পেট্রেল,
লেখক: উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা
পলাশ, নরসিংদী।