আগস্ট ১৭, ২০২১, ১২:১০ পিএম
ঘড়ির কাটা রাত ৯টার আশপাশ। প্রতিদিনের মতো সেদিনও রাতে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। চারিদিকে কোলাহল শোনা যাচ্ছে। আর পথচারিরা যে যার মতো গন্তব্যে ছুটে চলেছে। কেউবা নিজের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। কোথাও আলো, কোথাও অন্ধকার, কিন্তু মিট মিট করে আকাশে চাঁদ হাসছে। দেখা যাচ্ছে তারার মেলা।
কিন্তু কেউ অপেক্ষারত সেই মানুষটির খোঁজ নিচ্ছে না। কেউ তার জন্য একমুঠো খাবারের কথা বলছে না। বৃদ্ধার মতো আরো অনেককে দেখা যাচ্ছে, যারা অপেক্ষা করেছে খাবারের জন্য।
ঘটনাস্থল দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিনের মতো সেই দিনেও পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছি। হঠাৎ চোখে পড়লো সেই বৃদ্ধ মানুষটি। নেই তার ঠিকানা, নেই তার পরিবার পরিজন। কেউ বলতে পারছে না সেই বৃদ্ধার নাম। কেউ খোঁজ নেয় না তার। পেট পুরে খেতেও পারেন না তিনি। প্রতিদিন একবার খাবার খান, অনাহারেও মাঝে মাঝে কাটাতে হয়।
এই দৃশ্য দেখতে দেখতে সেখানে উপস্থিত হলো একদল তরুণ। হাতে তাদের খাবারের প্যাকেট। একটি নয়, দুইটি নয় অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট। সেগুলো থেকে এক একটি করে তারা বিতরণ করছে। বিতরণ করছে ঐই সব ব্যক্তিদের যারা একটু আগে এখানে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিল।
[media type="image" fid="137579" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]
জানা গেল, তারা প্রতিদিন এখানে আসেন। রেল স্টেশনে পড়ে থাকা অসহায় ব্যক্তি, পথশিশু এবং না খেয়ে থাকা ব্যক্তিদের খাবার বিতরণ করেন। তাদের এই কার্যক্রমটির বয়স প্রায় এক বছর।
করোনা পরিস্থিতিতেও তাদের শততম দিনে এভাবেই শহরে ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষদের মাঝে খাবার বিলি করছেন তারা। তাদের একটি সংগঠন আছে। নাম ‘হ্যালো পার্বতীপুর’। এই সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের পকেট খরচের টাকা সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিজেরাই পুঁজি তৈরি করে। এই স্বল্প পুঁজি নিয়েই তারা অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ায়। প্রতিদিন একবার আর্থিক অসংগতি থাকা মানুষের জন্য এক বেলা সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা করার ক্ষুদ্র এই প্রয়াস শুরু হয়- ‘হ্যালো পার্বতীপুর’র মাধ্যমে।
তারা নিজেরাই বাজার করে নিজেরাই রান্না করে সুস্বাদু খাবার। এর নিয়ে যান তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। তাদের এই রান্না করা খাবার এখন পরিতৃপ্তি জোগাতে অনেকটাই সক্ষম। পার্বতীপুরে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা কম নয়। তবে স্বল্প পরিসরে হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ছিন্নমূল মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সংগঠনটি। আর অর্থের যোগানের পুরোটাই আসছে তাদের পকেট খরচ থেকে।
হ্যালো পার্বতীপুর -এর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল ইসলাম ইমু বলেন, করোনার কারণে গরিব-অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের খাবারের কষ্ট বেড়ে গেছে। এতে আমাদের এখানে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের এই উদ্যোগ যেন কিছু মানুষকে হলেও মাসে অন্তত একদিন ভালো খাবার দিতে পারে। গত পাঁচ মাস ধরে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর পুরো টাকা আসে আমাদের পকেট খরচ থেকে। প্রতিমাসের পকেট খরচ থেকে কিছু অংশ আমরা সঞ্চয় করি। পরের মাসের শুরুতে সে টাকাগুলো একত্র করা হয়। সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা এসব খাবার বিতরণ করেন। এতে খাবার পেয়ে ছিন্নমূল মানুষরা খুবই খুশি।
হ্যালো পার্বতীপুর সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার বিপ্লব বলেন, সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা যে যার মতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমরাও চেষ্টা করছি, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা সংগঠনের এই সদস্যরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে চেষ্টা করছি প্রতিদিন রান্না করে খাবার বিতরণের। আমাদের ইচ্ছা আছে এই ক্রান্তিকাল কেটে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াবার।
লেখা: আসমাউল মুত্তাকিন
আমারসংবাদ/এমএস