বাড়ছে পুলিশের ঝুঁকিভাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১২:০৪ এএম
বাড়ছে পুলিশের ঝুঁকিভাতা
  • দীর্ঘ এক দশক পর ঝুঁকিভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
  • সর্বোচ্চ ঝুঁকিভাতা হবে ৬ হাজার ৪৮০ টাকা
  • কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ সদস্য উপকৃত হবেন
  • দ্রুত এসআরও জারি করে কার্যকরের দাবি মাঠপর্যায়ের সদস্যদের

দীর্ঘ এক দশক পর পুলিশের ঝুঁকিভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কনস্টেবল থেকে শুরু করে এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআই পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য নতুন করে ঝুঁকিভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাকরির মেয়াদ ও পদের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা এখন সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৮০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা পাবেন। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই ঝুঁকিভাতা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। শিগগিরই এসআরও (স্ট্যাচুটরি রুলস অ্যান্ড অর্ডার) জারি করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকিভাতায় সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। নতুন কাঠামোয় কনস্টেবলদের জন্য চাকরির বয়স অনুযায়ী ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে তাদের বর্তমান ঝুঁকিভাতা বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। 

যাদের চাকরির বয়স ২০ বছরের বেশি, তারা সর্বোচ্চ সুবিধা পাবেন। নায়েক পদে কর্মরতদের জন্য ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হয়েছে ৩৪০ থেকে ৬৮০ টাকা পর্যন্ত। এতে তারা মাসিক সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০ টাকা ঝুঁকিভাতা পাবেন। এএসআইদের জন্য নতুন ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি ৩৬০ থেকে ৭৬০ টাকা পর্যন্ত। যার ফলে তাদের ভাতা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫৬০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে। 

অন্যদিকে এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআইদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে ৫৪০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা পর্যন্ত। ফলে তাদের ঝুঁকিভাতা পৌঁছাবে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৮০ টাকায়। অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘পুলিশের ঝুঁকিভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এটি এখনো কার্যকর হয়নি। এসআরও জারি হলেই নতুন হার কার্যকর হবে।’ 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি কেবল পুলিশের আর্থিক সহায়তা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিরও প্রতীক। প্রতিনিয়ত জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের এই বাড়তি সহায়তা পেশাগত দক্ষতা ও মানসিক শক্তি বাড়াতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশের ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে, যারা প্রতিনিয়ত দূষণ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে কাজ করেন। পুলিশ বাহিনীর ভেতরে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধির দাবি ছিল। বিশেষ করে কনস্টেবল, নায়েক ও এএসআই পর্যায়ের সদস্যদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের ঝুঁকিও বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকার কর্তৃক নেয়া এই পদক্ষেপ অনেকের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। তবে বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা চাইছেন দ্রুত এসআরও জারি করে নতুন ঝুঁকিভাতা কার্যকর হোক। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই বাড়তি আয় তাদের জীবনে স্বস্তি বয়ে আনতে পারে। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ ধরনের আর্থিক সহায়তা তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে। একই সঙ্গে তরুণ সদস্যদের পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। যেহেতু পুলিশের কাজ মানেই ঝুঁকি, তাই এই ভাতা এক ধরনের ন্যায্য প্রাপ্তি হিসেবেই বিবেচিত। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মাঠপর্যায়ের প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য উপকৃত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকারীদের পাশে দাঁড়ানোয় সরকারের এই পদক্ষেপ বাহিনীর ভেতরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।