চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিতভাবে দাবি করতে পারে—এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ও সমাবর্তনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত ৫ম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যখন নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়, তখন বলতেই পারে—আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। একইভাবে, ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ও গর্ববোধ করে যে আমি তাদের ছাত্র ছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও গর্ব করতে পারে যে আমি শুধু শিক্ষকই ছিলাম না, পাশের গ্রামের ছাত্রও ছিলাম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গর্ব ন্যায্য।”
অর্থনীতির বর্তমান ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. ইউনূস বলেন, “বর্তমান অর্থনীতি হলো ব্যবসাকেন্দ্রিক, মানুষের জন্য নয়। আমরা ব্যবসাভিত্তিক সভ্যতা গড়ে তুলেছি—যা আত্মঘাতী এবং টেকসই নয়। আমাদের নতুন সভ্যতা গড়তে হবে। সেই বিশ্ব গড়ার ক্ষমতা আমাদের সবার আছে, কিন্তু আমরা গৎবাঁধা পথে চলতে চলতে নতুন কিছু ভাবতেই ভুলে যাই।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষের দুর্ভোগ দেখে তাদের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণা আসে। তখন ভাবিনি, একদিন এই কাজের জন্য নোবেল পুরস্কার পাবো।”
গবেষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “গবেষণা যেন শুধু খণ্ডিত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গবেষণা হতে হবে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। না হলে তা হবে দিকহীন, গন্তব্যহীন গবেষণা।”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যেকের হাতে। আমি যেমন করে দেখি, অন্যরাও তেমন করে দেখবে। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে একটি স্বপ্ন থাকা জরুরি—কেমন সমাজ, কেমন বিশ্ব, কেমন শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চাই। সেই স্বপ্ন অনুসরণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
সমাবর্তনে ড. ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ৪২ জনকে পিএইচডি এবং ৩৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। এর আগে চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি।
ইএইচ