আলোচিত শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’ কে এই সুব্রত বাইন

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
আলোচিত শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’ কে এই সুব্রত বাইন

ঢাকার অপরাধজগতের এক পরিচিত নাম সুব্রত বাইন। নব্বইয়ের দশকে চাঁদাবাজি, খুন, জমি দখল আর রাজনীতিকদের ছায়ায় বেড়ে ওঠা এই ‘তারকা সন্ত্রাসী’ আবারও আলোচনায়। সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল ও গুলশানে একাধিক খুনের ঘটনায় তাঁর নাম উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

২১ এপ্রিল হাতিরঝিলে গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী আরিফ সরদার (৩৫)। পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে সুব্রত বাইনের নির্দেশে। এ ঘটনায় তাঁর অনুসারীদের সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।

তবে এটিই প্রথম নয়। সুব্রত বাইন অনেক আগেই ঢাকার অপরাধজগতে ‘ভয়ংকর’ পরিচিতি পেয়েছিলেন।

সুব্রত বাইনের পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। জন্ম ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আদি বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ার জোবারপাড় গ্রামে। মা ও তিন বোনকে নিয়ে মগবাজারে ভাড়া বাসায় বড় হন। ছোটবেলা কেটেছে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে, পরে ঢাকায় শেরেবাংলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন।

সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়েই তাঁর অপরাধ জগতে পা রাখা। কলেজজীবনে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে পরিচয় থেকেই তাঁর হাতে ওঠে আগ্নেয়াস্ত্র। এরপর গড়ে তোলেন মগবাজারকেন্দ্রিক নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

১৯৯৩ সালে মধুবাজারের এক সবজিবিক্রেতা খুনের ঘটনা সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রথম বড় অভিযোগ। এরপর মগবাজার, রমনা, মধুবাগ, কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন দখল ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে।

১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ খুনের দায়ে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্তু তা তাঁকে থামাতে পারেনি। রাজনীতিকদের ছায়ায় ক্রমেই অপরাধজগতে আরও গভীরে প্রবেশ করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন সুব্রত। তাঁর জন্মদিনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাঁকে পরিচিত করে ‘তারকা সন্ত্রাসী’ হিসেবে। পরে যুবলীগের লিয়াকতের সঙ্গে এলাকা দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

২০০১ সালে ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে। এরপর পালিয়ে যান কলকাতায়। সেখানেও অপরাধ থামেনি। কলকাতা ও নেপালে থেকে চালিয়ে যান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ২০০৮ ও ২০১২ সালে দুইবার গ্রেপ্তার হন। তারপরও একাধিকবার পালিয়ে যান।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য, দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকেও সুব্রত বাইন আবার সক্রিয় হয়েছেন ঢাকার অপরাধজগতে। ভারত থেকে অস্ত্র এনে তা ব্যবহার করে নতুন করে খুন ও দখলের রাজত্ব শুরু করেছেন।

সাম্প্রতিক খুনের ঘটনার সূত্র ধরে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, আরাফাত, শরিফসহ একাধিক সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ বলছে, আগেও বহুবার গ্রেপ্তার হলেও সুব্রত জামিনে বেরিয়ে অপরাধে ফিরে গেছেন।

জনমনে প্রশ্ন—ধরা পড়ার পর আবারও কি শেষবারের মতো থামবেন সুব্রত বাইন?

বিআরইউ