মিষ্টিতে পটাশিয়াম মিশিয়ে ‘নারী বশীকরণ’, অবশেষে ধরা তান্ত্রিক আসাদ

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
মিষ্টিতে পটাশিয়াম মিশিয়ে ‘নারী বশীকরণ’, অবশেষে ধরা তান্ত্রিক আসাদ
গ্রেপ্তার প্রতারক মো. আব্দুস সবুর: সংগৃহীত ছবি

ফেসবুকে তান্ত্রিক সাধনার বিজ্ঞাপণ দিয়ে প্রতারণা ও জিম্মি করার মাধ্যমে নারীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। বুধবার (২৮ মে) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে তান্ত্রিক আসাদ আহমেদ চৌধুরী নামে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অভিনব ফাঁদ পেতে নারীদের বশীকরণ ও ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন এই প্রতারক। তার প্রকৃত নাম মো. আব্দুস সবুর (২৫)। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম গ্রামের মো. তপন মিয়ায় ছেলে। 

মো. আব্দুস সবুরের প্রতারণার পদ্ধতি জানিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ৭টি পেজ খুলে নিজেকে ভারতীয় কামরূপ কামাখ্যার তান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দিতেন সবুর। এসব পেজে তিনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন—যেমন দাম্পত্য কলহ, প্রেমের জটিলতা, কঠিন রোগ থেকে মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদি। ভুক্তভোগীরা এসব পেজে দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে সংযুক্ত করতেন।

পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ শুরু হলে তিনি প্রথমেই আশ্বস্ত করতেন, কোনো টাকা লাগবে না—শুধু আধ্যাত্মিক নিয়ম মেনে চললেই হবে। এরপর ধাপে ধাপে শুরু হতো প্রতারণার অভিনব কৌশল। প্রথমে ‘কাফনের কাপড়’, ‘চুল’, বা কোনো ‘বিশেষ পণ্য’ কেনার জন্য টাকা দাবি করতেন। বলতেন, এসব আচার করতে হয় এবং এগুলো না হলে জিনের প্রভাব যাবে না। সবচেয়ে ভয়াবহ প্রতারণার ধাপ ছিল ‘পটাশিয়াম ও মিষ্টি’ দিয়ে বানানো এক অভিনব ফাঁদ। ভুক্তভোগীকে বলা হতো গভীর রাতে গোসল করে ধ্যান করতে এবং তার দেয়া নিয়মে হাতে পটাশিয়াম নিয়ে সেই হাতেই মিষ্টি রাখতে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈজ্ঞানিকভাবে পটাশিয়াম ও মিষ্টির সংমিশ্রণে রসায়নিক বিক্রিয়ায় হালকা বিস্ফোরণ বা আগুন সৃষ্টি হতো—ফলে হাতে ফোসকা পড়ত। এই ভয় ও আতঙ্ককে ব্যবহার করে সবুর বলতেন, ‘তুমি জিনের রোষে পড়েছো—এখন আরেকটা উচ্চতর সাধনা করতে হবে। এজন্য তোমার নগ্ন শরীরে বিশেষ তেল (পনি) মেখে নির্দেশনা অনুযায়ী ছবি বা ভিডিও পাঠাতে হবে।’ ভয় পেয়ে কেউ নগ্ন ছবি বা ভিডিও পাঠালে শুরু হতো ব্ল্যাকমেইল। ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। ভিকটিমরা মানসম্মান ও সামাজিক বিবেচনায় অনেকেই মুখ খুলতে সাহস করতেন না, বরং একপর্যায়ে আরও অর্থ দিতে বাধ্য হতেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরণের প্রতারণার শিকারদের একজন সেলিনা আক্তার (ছদ্ম নাম)। গত বছরের ২০ জানুয়ারি ফেসবুকে “তান্ত্রিক আসাদ চৌধুরী” নামক একটি পেজের মাধ্যমে সবুরের সঙ্গে পরিচিত হন। সবুর নিজেকে তান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সেলিনার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে দেয়ার প্রলোভন দেখান। একপর্যায়ে সবুর মোবাইল ফোনে সেলিনার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী গত ১ ফেব্রুয়ারি কুমারখালী থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার সিআইডি নেয়ার পর মঙ্গলবার গভীর রোতে কুমিল্লার বুড়িচং থানাধীন মোকাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারণা অথবা সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডির ০১৩২০০১০১৪৬, ০১৩২০০১০১৪৭, ০১৩২০০১০১৪৮ হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। 

আরএস