বাবার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মা-মেয়েকে নির্যাতন

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২, ০৩:২০ পিএম
বাবার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মা-মেয়েকে নির্যাতন

বাবার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী (১৬) ও তার স্ত্রী পাপড়ী বেগমকে (৩৭) বাবা আব্দুস ছালাম মৃধা ও বখাটে সাকিব খাঁন নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ করেন মা ও মেয়ে। পুলিশ মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে আমতলী উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামে। 

জানা গেছে, উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামের আব্দুস ছালাম মৃধা প্রতিবেশী বিধবা শাহিনুর নামের এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই অবৈধ সম্পর্ক পাকাপোক্ত করতে বিধবা নারীর ছেলে মাদকসেবী সাকিব খাঁনের সাথে তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসীকে বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেন বাবা ছালাম। এ বিয়েতে রাজি হয়নি দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া কন্যা। 

মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসীর অভিযোগ বাবা ছালাম মৃধার সহযোগীতায় মাদকসেবী সাকিব খাঁন তাকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে উত্যাক্ত করে আসছে। বুধবার রাতে বাবা ছালাম মৃধা ওই  বখাটে সাকিব খাঁনকে নিয়ে তার বাড়ীতে যান। পরে মেয়ে ফেরদৌসিকে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে নির্দেশ দেন। কিন্তু বাবার এ অনৈতিক আদেশ মানকে রাজি হয়নি মেয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা ছালাম মৃধা ও বখাটে সাকিব খাঁন তাকে মারধর শুরু করে। মেয়েকে রক্ষায় মা পাপড়ী বেগম এগিয়ে গেলে তাকেও পিটিয়ে জখম করে। পরে তাদের তারা ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। 

খবর পেয়ে মা পাপড়ি বেগমের বাবা আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জামাতা আব্দুস ছালাম ও বখাটে সাকিব খান ও বিধবা নারী শাহিনুর বেগমের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওইদিন রাত ১২ টার দিকে তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাবা আব্দুস ছালাম ও বখাটে সাকিব খাঁন পালিয়ে যায়। 

মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, মাদকসেবী সাকিব খাঁন আমাকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই উত্যাক্ত করে আসছে। আমি এ ঘটনা বাবাকে জানালে বাবা উল্টো আমাকে ওই ছেলের কথা শুনতে নির্দেশ করেন। বুধবার রাতে বাবা ওই ছেলেকে নিয়ে বাড়ীতে আসেন এবং আমাকে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে নির্দেশ দেয়। আমি বাবার কথায় রাজি হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও মাকে মারধর করেছে।

জান্নাতুল ফেরদৌসির মা পাপড়ী বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী ছালাম মৃধা প্রতিবেশী বিধবা শাহিনুর নামের এক নারীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত। তার পরকিয়া পাকাপোক্ত করতে আমার মেয়েকে বিধবা নারীর ছেলে সাকিব খাঁনের সাথে বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয় এবং মেয়েকে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে নির্দেশ করে। মেয়ে বাবার নির্দেশ না মানায় আমার স্বামী ছালাম মৃধা এবং বখাটে সাকিব খাঁন মিলে আমাকে ও আমার মেয়েকে মারধর করেছে। 

তিনি আরো বলেন, একজন বাবা হয়ে মেয়ের এমন সর্বনাশ করতে পারে? আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

বাবা আব্দুস ছালাম মৃধা মুঠোফোনে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কথা না মানায় মেয়েকে লাঠি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেছি।   

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাওহিদুল ইসলাম বলেন, মা ও মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কেএস