প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পুন:নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ২০.০০ মি: দৈর্ঘ্যরে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। অথচ সেখানে নেই ডাইভারশন বা বিকল্প পথ। ফলে অনেকটা পথ ঘুরে বাড়ি-ঘরে ফিরতে হচ্ছে বহু গ্রামের বাসিন্দাদের। সাথে পণ্য পরিবহনেও বাড়তি টাকা দিয়ে আগের মত নিতে চায় না বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক-ড্রাইভাররা। সব মিলিয়ে নাকাল ভূক্তভোগী জনগণের দূর্ভোগ লাঘবে নেই কোন উদ্যোগ। এ যেনো দেখার কেউ নেই!
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এলজিইডি’র প্রোগ্রাম ফর রুর্যাল সাপোর্টিং ব্রীজ (এসইউপিআরবি) প্রকল্পে শমশেরনগর-বাদে সোনাপুর আরএইচডি রাস্তায় ৪৪০ মি: চেইনেজে ২০.০০ মি: দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজটির প্রাক্কলিত মূল্য ২,৪৩,৭০,৭৮২.০০ (দুই কোটি তেতাল্লিশ লক্ষ সত্তর হাজার সাতশত বিরাশি) টাকা ও চুক্তিমূল্য ২,৩৩,৩৪,৪৫৬.২৩৮ (দুই কোটি তেত্রিশ লক্ষ চৌত্রিশ হাজার চারশত ছাপ্পান্ন দশমিক দুইশত আটত্রিশ) টাকা। বিগত ১০ এপ্রিল তারিখে ওই প্রকল্প কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাফর আহমদ গিলমান (কুলাউড়া,মৌলভীবাজার) কে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ কাজটি সমাপ্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদার গিলমানের ব্যবসায়ি পার্টনার আনোয়ার হোসেন নামীয় ঠিকাদার এই গার্ডার ব্রীজের কাজ করছেন। কাজটির দেখভালের দায়িত্ব পান এলজিইডি কমলগঞ্জ উপজেলা অফিসের এসএই (সাব এসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার) মো: আব্দুর রাকিব ও এস এ ই (সাব এসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার) মো: সুজাত খান। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শমশেরনগর-বাদে সোনাপুর আরএইচডি রাস্তায় ৪৪০ মি: চেইনেজে ২০.০০ মি: দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মূল সেতু আংশিক ভেঙে পাইলিং কাজ করা হয়েছে। সেই সাথে কাজ শুরুর প্রথম দিকে ওই পথে যাতায়াতকারি শমশেরনগর ও প্রতিবেশি মুন্সীবাজার ইউপির আওতাধীন অন্তত ১৮/২০টি গ্রামের লোকজন ও যানবাহন চলাচলের জন্য কোন ডাইভারশন রাখা হয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে বাঁশের খুঁটি, চাটাই ও বালির বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে একটি ডাইভারশন করা হয়। এই ডাইভারশনের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে পার হওয়া খুব ই ঝুঁকিপূণ হওয়াতে শিংরাউলী গ্রামের ভিতর দিয়ে অনেকখানি পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ওই পথে চলাচলকারি স্কুল-কলেজ পড়ুয়াসহ গ্রামবাসিদের। পরবর্তীতে শমশেরনগর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: তাজুদ আলী দুজন শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজে বালু ফেলে কোন রকম ডাইভারশন পার হওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মো: তাজুদ আলী বলেন ডাইভারশনে আমি নিজে দু’জন লোক নিয়ে বালু ফেলেছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মালিক বাবুল বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাকিব ও ঠিকাদারের সাথে কথা বলে কোন সদুত্তর পাইনি। একটি মহল হয়তবা তাদের কোনো স্বার্থের জন্য ওই পথে চলাচলকারি হাজার হাজার জনসাধারণকে কস্ট দিচ্ছে।
শমশেরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজু বলেন, ১৮-২০টি গ্রামের শিক্ষাথীসহ সহস্রাধিক লোকজন প্রতিদিন এ পথে চলাচল করেন কিন্ত ডাইভারশন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অনেকখানি পথ ঘুরে বাড়ি-ঘরে যেতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের। এছাড়া পণ্য পরিবহনেও বাড়তি টাকা দিয়ে আগের মত আর মাল নেয় না পরিবহন শ্রমিকরা।
শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, লোকজন জায়গা না ছাড়ায় ডাইভারশন করা যাচ্ছে না।
অভিযোগের ব্যাপারে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ডাইভারশন লাগবে না। ডাইভারশনের টাকা লেস দিয়েছি বলে আনোয়ার আরও বলেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি’র এস এ ই মো: আব্দুর রাকিব মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, শিংরাউলী গ্রামের ভিতর দিয়ে বিকল্প পথ তো রয়েছে। ডাইভারশন করার জন্য লোকজন জায়গা দিচ্ছে না। তাহলে ডাইভারশনের টাকা কি হবে?- এমন প্রশ্নোত্তরে আব্দুর রাকিব বলেন, যে টুকু ডাইভারশন কাজ করা হয়েছে সে টুকুর বিল পাবে জানিয়ে ডাইভারশনের টাকা আলাদা করা নয় ব্রিজের ভিতরেই ডাইভারশনের টাকা ধরা রয়েছে বলে তিনি আরও বলেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে চেস্টা করে রিং বাজলেও তিনি কল রিসিভ করেন নাই।
এলজিইডি মৌলভীবাজার ও উক্ত প্রকল্পের কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, মূলত সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার কাজটি দেখাশুনা করেন। তিনি (আরিফুল ইসলাম) সরেজমিনে এসে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
কেএস