পায়ে হেঁটে বাবা-ছেলের ভ্রমণ

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২, ০২:২২ পিএম
পায়ে হেঁটে বাবা-ছেলের ভ্রমণ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেটে ভ্রমণ শুরু করেছে বাবা-ছেলে, গন্তব্য টেকনাফ।

রোববার (২০ নভেম্বর) ভোর ছয়টায় ‘আলোকিত বাংলার স্বপ্নযাত্রা, আমরা করবো জয়’ স্লোগানে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট থেকে পতাকা হাতে নিয়ে পায়ে হেটে যাত্রা শুরু করেছেন এ যুগল বাবা-ছেলে। ১ হাজার কিলোমিটার হেটে পাড়ি দিবেন টেকনাফে।

এ বাবা-ছেলে হলেন গাইবান্ধা শহরের বাসিন্দা সাদেক আলী সরদার (৬৭) এবং তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৭)।

বাবা -ছেলে জানান , ৫০তম মিশন হিসেবে তারা তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেটে ভ্রমন করছেন। এ মিশনে হাটবেন ১ হাজার কিলোমিটার। এর আগে ৪৯তম মিশনে পদযাত্রা করেছেন ১ হাজার ৬২৪ কিলোমিটার। গাইবান্ধা থেকে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত টানা ২শ ২৬ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়াসহ সিলেট থেকে জাফলং পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছেন। এ ৫০তম মিশনের পথ ভ্রমণ করতে তাদের ২০ দিনের মতো লাগবে।

এর আগে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিজ জেলা গাইবান্ধার সাদেক চত্ত্বর থেকে স্থানীয় ফুলছড়ি থানা চত্বর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার হাঁটা দিয়ে শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে নিজ জেলা থেকে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঘোড়াঘাট-হিলি, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা সহ বেশ কিছু এলাকায় হেটে সেখানকার দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস-ঐতিহ্য দর্শন করেন।

জানা যায়, গাইবান্ধা শহরের বাসিন্দা সাদেক আলী সরদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন ২০০৬ সালে । সেনাবাহিনীতে থাকার সুবাদে শরীর চর্চা থাকায় স্বপ্ন দেখেন হেটে বেড়াবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তর। ভাবা থেকেই শুরু করেন হেঁটে চলার অভ্যাসের অনুশীলন। বাবার সফর সঙ্গী হয়ে উঠেন ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানও।

৬৭ বছরে এসে হেঁটে দেশ ঘুরে বেড়ানো বিষয়ে জানতে চাইলে সাদেক আলী সরদার বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছি। সে চাকরি জীবনে হেঁটে বেড়ানোর তো অনুশীলন ছিলো। সে অনুশীলনের অভ্যাসেই মনে হলো সারাদেশ হেঁটে বেড়িয়ে দেখবো। ইতিমধ্যে অনেক পথ হেটেছি। এখন তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ যাত্রা শুরু করেছি। এর থেকে আরও লম্বা পথ পায়ে হেঁটেই বেড়ানোর স্বপ্ন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হেঁটে বেড়ানোর অনেক উপকার রয়েছে। যখন চাকরি থেকে অবসর নেই, তখন শরীরে নানান রোগ বাসা বেধেছিল। কয়েক দফায় দীর্ঘপথ হাঁটার কারণে এখন অনেকটাই সুস্থ্য। শরীরে শক্তি ফিরেছে কয়েকগুন। সবার হাঁটার চর্চা করা উচিত। ভোরে হাটলে অনেক রোগের ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।

বাবার ভ্রমণসঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, বাবার স্বপ্ন ছিলো হেঁটে দেশ ঘুরে বেড়াবেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে আমিও সফর সঙ্গী হয়েছে। ৫০তম মিশন হিসেবে আমরা বাবা-ছেলে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬২৪ কিলোমিটার পথ হেটেছি। আমরা যেন এ মিশনও সফল করতে পারি এ জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

হাটার উপকারি সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের উচিত দিনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাটা। হাটলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে বলে মনে করি। কারণ আমার বাবার শরীরে পাঁচটির মতো বড় বড় রোগ বাসা বেঁধেছিল। এই হাটতে গিয়ে আমার বাবা এখন অনেক ভালো আছেন। উনি আমার সাথে ১ হাজার ৬২৪ কিলোমিটার পথ হেটে ৪৯তম মিশন সম্পন্ন করেছেন।

আর সবাই পারিবারিক বন্ধনটা জোড়ালো করবেন। বাবা-ছেলের মধ্যে সম্পর্ক যদি অটুট থাকে তাহলে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেয়া যায় অনায়েসে। আর বাবা-ছেলের মধ্যে যদি সম্পর্কের অবনতি ঘটে, সেখানে এক কিলোমিটার তো দূরে কথা, সেখানে একই ছাদে বসবাস করা দায় হয়ে পড়ে।

এআই