ফরিদপুর মেডিকেলে আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৩:১২ পিএম
ফরিদপুর মেডিকেলে আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার আশায় বৃহত্তর ফরিদপুরের আশপাশের অন্তত ৮ থেকে ১০টি জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। দীর্ঘ দিনের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি হঠাৎ করে আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। রোগী কিংবা স্বজন কেউ রেহাই পাচ্ছেন না এই চুরি-ছিনতাইয়ের হাত থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ড ও টিকিট কাউন্টারসহ গত দেড় থেকে দুই মাসে অন্তত শতাধিক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন অজুহাতে সারা রাত বিভিন্ন ওয়ার্ডে টহল দেয় বহিরাগতরা। তবে এ বিষয়ে উদাসীন হাসপাতাল প্রশাসন। এমন অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, কেউ এম্বুলেন্স ড্রাইভার আবার কেউ ওষুধের দোকানের প্রতিনিধি পরিচয়ে সার্বক্ষণিক দলবেঁধে ওয়ার্ডের কারণে অকারণে হাসপাতাল ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে আসা যাওয়া করে। এতে এক ধরনের আতংক ও হুমকিতে পড়েছে হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিছুদিন আগে রাতে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে কামরুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজনের মোবাইল চুরি হয়। তার কয়েকদিন আগে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা পারুল আক্তার ও শিউলী বেগম নামে আরও দুই জনের মোবাইল চুরি হয়।

ভুক্তভোগী কামরুল ইসলামের স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, সারা রাত জাগার পর শেষ রাতে কোন মতে আধা ঘণ্টা ঘুমাতে গেলেই উঠে দেখি মোবাইল নেই। এরকম আরও ৮ থেকে দশ জনের মোবাইল ও টাকা-পয়সা চুরি হয়েছে বলেও তিনি জানান।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সহজ সরল নারীদের প্রথম টার্গেট করে চোরের দল। হঠাৎ চোরের উপদ্রব বেশ হারে বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক নারীর স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল খোয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এক নারী। ছিনতাইকারীরা তার লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনা হাসপাতাল জুড়ে আলোচিতও হয়।

রাজবাড়ি ও মাদারিপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আজগর শেখ, মহিদুল ইসলাম, আলেয়া বেগমসহ একাধিক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে দালাল, চোর ও ছিনতাইকারীদের হাতেনাতে ধরে থানা পুলিশে দেওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানাতে কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেন না। এতে সহজেই তারা ছাড়া পেয়ে পুনরায় এ কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়াও হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানানো হলেও তারা প্রতিনিয়তই এড়িয়ে যাচ্ছেন বিষয়টি। ফলে দিন দিনই বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ইদানিং হাসপাতালে কিছু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এর সংখ্যা বা বিস্তারিত তথ্য জানা নেই। তবে, ভুক্তভোগী কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। যার কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বারবার সতর্কতা করা হয়ে থাকে। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তাই এখনও সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত জানা হয়নি এবং বিষয়গুলো প্রশাসনকে জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

এসএম