লিমন হত্যাচেষ্টার মামলার প্রতিবেদনে মায়ের দ্বিতীয়বারে নারাজি দাখিল

ঝালকাঠি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৫:১৬ পিএম
লিমন হত্যাচেষ্টার মামলার প্রতিবেদনে মায়ের দ্বিতীয়বারে নারাজি দাখিল

রাজাপুরের সাতুরিয়ায় র‌্যাবের গুলিতে পঙ্গু লিমনের মায়ের দায়ের করা ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার দ্বিতীয়বারে নারাজি দাখিল করেছে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম। সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচএম ইমরানুর রহমান আবেদন গ্রহণ করে আগামী ৩ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য করেছেন। বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদার।

উল্লেখ্য ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় কলেজ ছাত্র লিমনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পায়ে গুলি করে র‌্যাব। এঘটনায় র‌্যাব লিমনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও অস্ত্র আইনে মামলা দিলে আদালত লিমনকে অভিযুক্ত করলে পরে রাষ্ট্র তাকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু ওই ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আদালতে ৬ র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা (রাজাপুর থানার মামলা নং-১৪, তাং-২৬/০৪/২০১১ইং) দায়ের করে। যা এখনও আদালতে হত্যা চেষ্টা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত জি.আর-৬৫/২০১১(রাজাঃ) মামলা চলমান রয়েছে। এতে আসামি করা হয় বরিশাল র‌্যাব-৮ এর সহকারী পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান (৫৯২৬), কর্পোরাল মো. মাজহারুল ইসলাম (৪৬৬৬৬০), কনস্টেবল মো. আ. আজিজ (৪৫৯০) নায়েক মুক্তাদির হোসেন (৬৩১৬৫), সৈনিক প্রহলাদ চন্দ্র (৫৪৬), সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাসসহ (১৮১২২০১) আরো ০৫/০৬ জন র‌্যাব সদস্য।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে লিমনের বাম পা কেটে ফেলে চিকিৎসক। সুস্থ হয়ে লিমন রাজধানীর সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনবিভাগে পড়াশুনা করে উত্তীর্ণ হয়ে সেখানে শিক্ষক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন।

নারাজি আবেদনে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম উল্লেখ করেন, কলেজ ছাত্র লিমন ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টায় গরু আনতে মাঠে গেলে র‌্যাব সদস্যরা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল, এস. এম. জি নিয়ে চারপাশ থেকে ঘিরে মোরসেদ জোমাদ্দার সন্দেহে ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যেতে থাকলে ডাক চিৎকার দেয়। তা শুনে দৌড়ে গিয়ে কলেজ ছাত্র লিমন বলে পরিচয় দিলেও এলোপাথাড়ি পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাম পায়ের হাটুর উপরে গুলি করে। আহত অবস্থায় লিমনকে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে র‌্যাব-৮ বরিশাল অফিসে নিয়া যায়। তারা আইনের হাত থেকে বাচার জন্য লিমনেক আসামি করে রাজাপুর থানায় জি.আর-৪৫/১১ (রাজাঃ) এবং জি.আর-৪৬/১১ (রাজাঃ) নং ২টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে রাজাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে লিমন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজাপুর থানা পুলিশ লিমনকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার অবস্থা গুরুতর দেখে বাম পা কেটে ফেলেন।

রাজাপুর থানায় এ অভিযোগ দায়ের করলে তারা মামলা না নিয়ে তালবাহানা করলে ২০১১সালের ১০এপ্রিল ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিস পিটিশন এম. পি-৫৩/১১ (রাজাঃ) ধারা-১৪৩/১৪৯/১৪৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬ দায়ের করলে আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজাহার হিসাবে রুজু করার আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি রুজু করলে এসআই আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। মামলাটি আদৌ সরেজমিনে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত না করিয়া র‌্যাব সদস্যদের পক্ষে র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মূল মামলার বিষয়কে এরিয়ে কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য সংযোজন করে পরবর্তীতে এস.আই. আবদুল হালিমকে ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট ১৭৩ ধারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন। অসত্য, কাল্পনিক ও মনগড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১১সালের ৩০ আগস্ট নারাজি দাখিল করেন। শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারারি আবেদন খারিজ করে দেন। নারাজী খারিজের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন (নং ৩৫/২০১৩) দায়ের করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত রিভিশন মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলী করেন। অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস. কে. এম তোফায়েল হাসান ২০১৮ সালের ১এপ্রিল রিভিশন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুরের আদেশ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সেলিম রেজা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আদেশ দেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে পিবিআইর (হেডকোয়াটার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম এ মামলার অষ্টম এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না করে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় দাখিল করেন। ০৫ পাতার একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন যার আড়াইপাতা জুড়ে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তার বর্ণিত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, “মামলাটি তদন্তকালে বাদীনির অভিযোগ মতে উপস্থাপিত তথ্যগুলোর হুবহু সত্যতা পাওয়া না গেলেও ঘটনার সময় র‌্যাব ও সন্ত্রাসীদের উভয় পক্ষের গোলাগুলির ফলে যে কোন পক্ষের গুলির আঘাতেই ভিকটিম লিমন হোসেন এর বাম পা গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। ভিকটিম লিমন এর এমসি পর্যালোচনাসহ প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে মামলার ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩২৬/৩০৭ ধারামতে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়”।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী রাজাপুর থানার এস.আই মোঃ হালিম তালুকদার এবং পিবিআই’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম কাল্পনিক তথ্য উল্লেখ করে আদৌ কোন তথ্য প্রমাণ ব্যাতিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করায় তা বাতিলযোগ্য।

এসএম