ভাঙ্গা ব্রীজের দুর্ভোগে লাখো মানুষ

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম
ভাঙ্গা ব্রীজের দুর্ভোগে লাখো মানুষ

তিন বছর আগে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলনের ফলে বন্যায় ভেঙ্গে পড়া ব্রীজের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বর্তমানে ব্রীজ সংযোগ না থাকায় চরাঞ্চলের মানুষের কৃষি পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রেই পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে।

ব্রীজটি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিনাই নদীর উপর অবস্থিত।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ও সাতপোয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল এবং মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে ঝিনাই নদীর উপর ২শ মিটার দৈর্ঘের শুয়াকৈর ব্রীজ নির্মান করে এলজিইডি। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু হলে শেষ হয় ২০০৬ সালে । ২‍‍`শ মিটার দৈর্ঘের ব্রীজটি নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

ব্রীজ নির্মাণের পর এলাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হলেও টিকেনি বেশি দিন। ব্রীজের পাশ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি উত্তোলনের কারণে ২০২০ সালে বন্যার পানির তোড়ে নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ব্রীজের মাঝখানের তিনটি স্প্যান ৬০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙ্গে পড়ে।  এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে ব্রীজ দিয়ে চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষ। চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহণ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসাসেবা, যাতায়াতসহ নানামূখি সংকটে পড়েছে এই জনপদের মানুষ । শুষ্ক মৌসুমে বাঁশ কাঠের সাঁকো দিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে কয়েক  কিলোমিটার হেটে স্কুল কলেজ করতে পারলেও বর্ষায় অনেকেরই বন্ধ হয়ে যায় স্কুল কলেজ যাওয়া। গর্ভবর্তী মা, বয়স্ক ও শিশু রোগী নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন এলাকার মানুষ।  বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে এই জনপদের মানুষের একমাত্র ভরসা নৌকা। দিনের বেলায় পারাপার স্বাভাবিক হলেও রাতের বেলায় পারাপার বন্ধ থাকে। এতে রাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষের ।

স্থানীয় এলাকাবাসী আরো জানায়, ব্রীজের নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করায় পিলার ঢেবে স্পেন নদীতে পড়ে যায়। এখন আমাদের পারাপারে কষ্ট হচ্ছে। ব্রীজ সংস্কারের দাবিতে সরকারি অফিস আর রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে কোন সুরাহা পায়নি। বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি করলেও দুর্ভোগ লাগবে উদ্যোগী হয়নি কেউ।

তারা আরও বলেন, শুয়াকৈর ব্রীজ হওয়ার পর তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। ব্রীজ ভাঙ্গার সাথে সাথে তাদের স্বপ্নও ভেঙ্গে যায়। 
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুকনো মৌসূমে স্কুল কলেজ করতে পারলেও বর্ষায় অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন না।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ব্রীজ না থাকায় চরাঞ্চলের ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি আর ফসল বিক্রি করতে হয় কম দামে। এতে আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়ছেন।

মনোহর দোকানি জানান, আগে বাজার থেকে  গাড়ি দিয়ে জিনিস পত্র নিয়ে নিজের দোকানে বিক্রি করতাম। এখন ব্রীজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জিনিস পত্র নেওয়া কষ্ট হয়ে পড়েছে। সাঁকো দিয়ে গাড়ি পারাপার করতে গেলে অনেক ভাড়া গুনতে হয়। এখন লোকসানের মুখে পড়ে যাচ্ছি। ভ্যান ও অটোরিকশা চালকরা জানান, বাঁশ ও কাঠের তৈরি পুল দিয়ে নদী পারাপারের সময় গাড়ি উল্টে যায়। এর সাথে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সমস্যা দেখা দেয়, মেরামত করতে গেলে যা ভাড়া পাই তার দ্বিগুণ টাকা ব্যয়ে ঠিক করতে হয়।

সমাজ সেবক আবু তালেব জানান, উন্নয়ন বঞ্চিত চরাঞ্চল মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা,স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে দ্রুত ব্রীজটি বাস্তবায়ন করা না হলে পিছিয়ে পড়বে এই জনপদের মানুষ। সরকারি অফিস আর রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে ঘুরেও লাভ হয়নি।
সরিষাবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এ.কে.এম.আশরাফুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, চরাঞ্চলে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত,শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়া রোধসহ শুয়াকৈর ব্রীজ ব্যবহারকারী লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাগবে সরকার ব্রীজ নির্মানে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।

কমরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আমার সংবাদকে জানান, মানুষের দুর্ভোগ লাগবে কোন কাজ করতে পারছেন না তারা। ব্রীজ সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ব্রীজ সংযোগ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে আমার সংবাদ প্রতিবেদক কে জানান, ব্রীজটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত সময়ের মাঝে ব্রীজ সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

আরএস