শরীয়তপুরের সবজির চাহিদা বাড়ছে সুইজারল্যান্ডে

রুপক চক্রবর্তী, শরীয়তপুর প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৩, ০৩:১৫ পিএম
শরীয়তপুরের সবজির চাহিদা বাড়ছে সুইজারল্যান্ডে

শরীয়তপুর জেলা প্রমত্ত পদ্মা ও মেঘনা নদী বেষ্টিত বাংলাদেশের মধ্যে অঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। শরীয়তপুর জেলা বরাবরই কৃষি নির্ভর ও কৃষি খাতে ব্যাপক খ্যাতিসম্পন্ন একটি জেলা। সমগ্র শরীয়তপুর জেলায় প্রতি বছরই ব্যাপক পরিমানে উৎপাদিত হয় ধান, পাট, গম, পেয়াজ, রসুন, সরিষা, ধনিয়া, মুসুরী, টমেটো, লাউ, কাঁচা, মরিচ, বেগুন, পেঁপে, লাল শাক, জালি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, পটোল, মিষ্টিকুমড়া, কচু, কাঁচা মরিচ, শিম, পেঁপে, লতি, ঢ্যাঁড়স, করলা, বরবটি, পেয়ারা সহ নানান ধরনের ফসল, ফলমূল ও শাক-সবজি।

সমগ্র জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য যেতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এখন শরীয়তপুর জেলার কৃষি পণ্য শুধু বাংলাদেশের বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে না। শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন কৃষি পণ্য সুনামের সহিত ব্যাপক চাহিদায় বিক্রি হচ্ছে সূদুর সুইজারল্যান্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চলতি বছরের প্রথমে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কৃষি পণ্যর প্রথম চালান ইউরোপের সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে সুইজারল্যান্ডে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কৃষিপণ্য। সেই সময় সুইজারল্যান্ডের গুটি কয়েকজন বাঙালি ব্যবসায়ীর দোকানে শোভা পেত বিক্রির জন্য রপ্তানি হওয়া সবজি। রপ্তানি হওয়া সবজির পরিমাণও ছিল কম। তবে এখন শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কৃষি পণ্য বিক্রি হচ্ছে সমগ্র সুইজারল্যান্ড জুড়ে সবচেয়ে খ্যাতনামা চেইন শপ চঊঞজঅঈঈঅ তে এবং রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

এছাড়াও ইতিমধ্যে শরীয়তপুর জেলার সবজি যাতে আরো বেশি পরিমানে সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করা যায় এবং বিক্রির ব্যাপকতা আরো বৃদ্ধি করা যায় সেই উদ্দেশ্য শরীয়তপুর জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জনাব আলমগীর কবীর। পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সাথে চঊঞজঅঈঈঅ একটি চুক্তি করে। সেই চুক্তির আওতায় গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস বা এঅচ বজায় রেখে উৎপাদিত এসব সবজি এখন সমগ্র সুইজারল্যান্ড জুড়ে প্রতিটা চঊঞজঅঈঈঅ আউটলেটে পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে জাজিরার সবজি রপ্তানি বেড়ে গেছে বহুগুণ। এই সংবাদ নিঃসন্দেহে শরীয়তপুর বাসীর জন্য তথা বাংলাদেশের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না’’ এই অনুশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা প্রশাসন, শরীয়তপুর জেলার সর্বত্র কৃষি বিপ্লব ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে। কৃষিজ পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহের উন্নয়নে প্রতিটি পর্যায়ে অংশীজনদের সাথে নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। সকল অংশীজনদের নিয়ে কৃষক সমাবেশ আয়োজন, চরাঞ্চলে অনাবাদি জমি চাষাবাদ, জলাবদ্ধ জমির পানি নিষ্কাশন, রাস্তার দুধারে পশুখাদ্য জাম্বো ঘাস রোপন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের মাঝে উঠোনে সবজি চাষাবাদে উৎসাহ প্রদান ও প্রণোদনা বিতরণ, বাড়ীর আঙ্গিনায় সবজি চাষ, সরকারি অফিস ভবনে অনাবাদি জমি চাষাবাদে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায় ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ এর মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি ও ফল ইউকে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির লক্ষ্যে রপ্তানি বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। তারই পরিক্রমায় জাজিরার সবজি চলতি বছর জানুয়ারি মাসে প্রথম বারের মত ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি শুরু হয়।

জেলা প্রশাসক শরীয়তপুর মো. পারভেজ হাসান এর নিকট হতে জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘’এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না’’ এই অনুশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করে শরিয়তপুর জেলা প্রশাসন জেলার সর্বত্র কৃষি বিপ্লব ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে। কৃষিজ পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহের প্রতিটি পর্যায় উন্নয়নে নিবিড়ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। সকল অংশিজনদের আন্তরিকতায় সেসব উদ্যোগ দ্রুত সাফল্যের মুখও দেখতে শুরু করে অচিরেই। তারই পরিক্রমায় জাজিরার সবজি গত বছরই ইউরোপে রপ্তানি শুরু করেছে। তবে সেই সময় সুইজারল্যান্ডের গুটি কয়েকজন বাঙালি ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রির জন্য রপ্তানি হওয়ায় পরিমাণে কিছুটা কম ছিল।

এইবার গোটা সুইজারল্যান্ড জুড়ে খ্যাতনামা চেইনশপ PETRACCA তে জাজিরার সবজি রপ্তানি শুরু হল। এদিকে দেশের বাজারে সব্জির দাম বেশি হলেও কৃষক লাভ পান খুব কম, বেশিরভাগ লাভ করেন মধ্যসত্ত¡ভোগিরা। অন্যদিকে এইবারে জাজিরার সবজি রপ্তানিকারকেরা যে পণ্যগুলো নিচ্ছেন বা নেবেন, তা শুধু বেশি পরিমাণেই নেবেন না, বরং স্থানীয় বাজারের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি দামও কৃষককে দেওয়া হবে। এতে কৃষক সরাসরি অনেক বেশি লাভবান হবেন, কৃষিকাজে উৎসাহও পাবেন।

ইউরোপে যেসব সবজির চাহিদা আছে, জাজিরায় তা উৎপাদন হয়। এটি খেয়ালকরেই জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় আনে। জাজিরার লাউ, জালি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, পটোল, মিষ্টিকুমড়া, কচু, কাঁচা মরিচ, শিম, পেঁপে, লতি, ঢ্যাঁড়স, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের শাক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছে রপ্তানিকারকরা। তাঁদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনসহ সবজি উৎপাদন ও সরবরাহের প্রতিটি পদক্ষেপে আন্তরিক সহযোগিতার হাত
বাড়িয়ে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

তিনি আরো বলেন, নিঃসন্দেহে এই কার্যক্রম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সাথে সাথে স্থানীয় কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে বহুমাত্রিক ইতিবাচক অবদান রাখবে। মুনাফার হার বাড়িয়ে বাজার অর্থনীতিতে এটি টেকসই কৃষিখাত বিনির্মাণের একটি লাগসই উদ্যোগও বটে যা সাসটেইনেবল বিজনেস মডেল প্রতিষ্ঠার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হল। এই উদ্যোগের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাদের আশীর্বাদ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসন, শরীয়তপুর আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।

আরএস