ধান সংরক্ষণের গোলা এখন শুধুই স্মৃতি!

সাইফুল ইসলাম, (ঝিনাইদহ) মহেশপুর প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৭:৩৯ পিএম
ধান সংরক্ষণের গোলা এখন শুধুই স্মৃতি!

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর এখন মৌসুম চলছে ধান কেটে মাড়াই করে, সিদ্ধ করে, শুকিয়ে কৃষকরা সংরক্ষণের। কেউ কেউ তাদের ঘরের একটি কক্ষে  বিশেষভাবে তৈরি করে তাতে ধান সংরক্ষণ  করেন। একে আবার স্থানীয় ভাষায় গোলাঘরও বলেন থাকেন কৃষকেরা। ধান, চাল, গম সংরক্ষণের  বড় পাত্র বাঁশের তৈরি গোলা যাকে স্থানীয়রা ডোলও বলে থাকে।

বাঁশ দিয়ে এ ধরনের ডোল বা গোলা তৈরি করা হয়। গ্রামে কৃষকরা এ গোলায় ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করে থাকে। সারা বছর ধানসংরক্ষণ করতে গোলা বা ডোল খুবই উপযোগী। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙ্গানো হয়। 

উপজেলার পাথরা গ্রামে এমদাদুল  জায়েদ হোসেন হক বলেন, এক সময় গোলা ভর্তি ধান না থাকলে গ্রামের কৃষক পরিবার সেই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিতে আগ্রহী হতেন না। এখন পুরো এলাকা খুঁজেও একটি পরিবারে ধানের গোলা পাওয়া যাবে না। এক সময় গোলায় ধান রেখে গোলার মুখ মাটি দিয়ে লেপে বন্ধ করে রাখা হতো। আবার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান বের করে প্রয়োজনীয় কাজ করা হতো। সে সময় সমাজ ব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। তখন চোর ডাকাতের ভয়ে মানুষ গোলার ভিতর স্বর্ণর গহনা ও টাকা পয়সাও লুকিয়ে রাখতো। একটি বড় গোলায় ৭০ থেকে ৯০ মন আর একটি ছোট গোলায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ধান সংরক্ষণ করা যেতো।

গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ এ যেন বর্তমান প্রজন্মের কাছে কালজয়ী কোনো উপন্যাস।  যেটা এক সময় বাস্তবে ছিল, আজ তা প্রায়ই বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা কালের গর্ভে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পর্যায়ক্রমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকি, ধানের গোলা, কাঁসা-পিতল, ধামা, পেলে, কুলা, ধান ঝাড়ার পাত্র, গরু/ঘোড়া দিয়ে চালানো হয় তেলের ঘাইন ও ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়িসহ অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে।

মহেশপুর  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, এ বছর মহেশপুর ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। আমরা দিনকে দিন আধুনিক হচ্ছি। এখন আর ধানের গোলা ব্যবহার করেন না কেউ। তাছাড়া এ পদ্ধতি বীজ সংরক্ষণ জন্যে উপযোগী নয়। মহেশপুর  উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না ধানের গোলা। কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি ধানের গোলা। ধান মাড়াইয়ের পর পুরো বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখার এ গোলা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। যুগের হাওয়া পাল্টেছে, পাল্টেছে সারা বছরের জন্যে ধান সংরক্ষণের ধরনও। দু’চার জন বড় গৃহস্থ ছাড়া ছোট খাটো কৃষকের এখন আর ধান মজুদ করে রাখেন না।

ধনীদের বা প্রভাবশালীদের বিরূপ প্রভাবে গরীব চাষীদের মাথায় হাত উঠে যায়। গো বিচরণ ক্ষেত্র গুলো নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে বছরের পর বছর। চাষিরা বেকার হয়ে পড়ছে। বর্তমানে গরু ছাগল প্রভৃতি আজ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে বর্তমানে ধান চাষেও আগ্রহী নন কৃষকেরা, যার ফলে ধানের গোলার এখন আর আগের মতো কদর নাই।

ধানের গোলা সম্পর্কে কথা হয় মহেশপুর উপজেলার ৯ নং যাদবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমেদের সাথে তিনি বলেন, আমার বাবার ৪/৫ টা ধানের গোলা ছিল, এখন আমাদের পরিবার শহরে থাকে। তাই আগের মতো আর চাষাবাদ করা হয় না। এ জন্য ধানের গোলা এখন আর প্রয়োজন হয় না।

আরএস