ঢাকার কেরানীগঞ্জে সড়কের পাশে পড়ে থাকা নারী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার ১৩ জুন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১১/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত ৮ টার সময় ৯৯৯ এর মাধ্যমে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন প্রহরীভিটা এলাকায় তমা কনস্ট্রাকশনের পরিত্যক্ত জমির জঙ্গলের ভিতরে অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরাদেহ পড়ে রয়েছে।
সংবাদটি পেয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন কবীর ও, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশীদ পুলিশের একটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) প্রেরন করেন।
এ ঘটনায় পর দিন পুলিশ বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেপ্তার করার জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার নির্দেশে , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) অলক কুমার দের একটি চৌকস তদন্ত টিম তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের সহযোগিতায় অজ্ঞাতনামা মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় সনাক্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ডিসিষ্টের নাম-পরিচয় পাওয়ার পর তার পরিবারকে উক্ত ঘটনার সংবাদ দেয়। এরপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন কবীর এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশিদ এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ১২/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মধ্যরাতে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম মাসদাইর থেকে এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৮)-কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সালমার সাথে শহিদুলের ০৭/০৮ বছরের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার ০১ দিন আগে সালমা শহিদুলের গ্রামের বাড়ী বরিশালে যায় এবং সালমা জানতে পারে যে শহিদুল বিবাহিত এবং তার স্ত্রী বরিশালে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। এ তথ্য জানার পর ভিকটিম সালমা তাৎক্ষণিকভাবে শহিদুলকে ফোন করে ১ম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সালমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
উল্লেখ্য যে, সামলা ডিভোর্সি এবং তার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে। তারপর শহিদুল সালমাকে কৌশলে ঢাকায় আসতে বলে। ঢাকায় আসার পর শহিদুল সালমার সাথে ঘটনার দিন বিকেল ৫ টার সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা করে। ঐদিন শহিদুল রাত ১০.০০ ঘটিকা পর ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সালমাকে কেরাণীগঞ্জে নিয়ে আসে। তারপর শহিদুল ঘটনাস্থলের জঙ্গলে নিয়ে প্রথমে সালমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে সালমার সাথে থাকা উড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। অতঃপর সালমার মৃতদেহ যাতে সনাক্ত করা না যায় সেজন্য পাশে থাকা ইটের টুকরা দিয়ে মুখ থেতলিয়ে চেহারা বিকৃত করে শহিদুল পালিয়ে যায়।
হত্যাকান্ডের পর আসামী শহিদুল বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ায় যাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারে। অবশেষে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত একমাত্র আসামী শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে।
আরএস